মাথায় ভিতর নতুন চিন্তা কিলবিল করে কষ্ট ও ভয় লাগে | By Raju Akon

2013 সাল থেকে আমার প্রথম এই রোগটা শুরু হয়। তখন কারো সাথে কথা বলতাম না। লোকজন এড়িয়ে চলতাম । কারন মাথায় সারাক্ষণ এই চিন্তাটাই ঘুরপাক করতো যে কারো সাথে কথা বললেই সে আমার উপর উত্তেজিত হয়ে আমাকে গালি দিতে পারে অথবা কারো কাছে গেলেই সে হয়তো আমাকে মেরে ফেলতে পারে। তাই আমার প্রচন্ড মাথায় রাগ ও ভয় থাকতো সব সময়ের জন্য। তবে আমার এইটুকু সেন্স ছিল যে এটা অবাস্তব তাই কস্ট হলেও প্রয়োজনীয় দুই একটা কথা বলতাম। কাউকে বুজতে দিতাম না। এই সমস্যাটা প্রায় তিন বছর ছিল। চিন্তাটা আস্তে আস্তে কমতে কমতে তিন বছরে সম্পূর্ণ কমে যায়। তারপর থেকে আমি সুস্থ হয়নি তবে ওই চিন্তার অবসান ঘটে নতুন বাস্তব চিন্তা অর্থাৎ ব্যাক্তিগত জীবনের নানা সমস্যা মাথার ভিতর সারাক্ষণ ঘুরতো যেটা আমাকে খুব কস্ট দিতো। আমি যা কিছুই করতাম কিন্ত মাথার ভিতর ওই একই চিন্তা বারবার ঘুরতো। তবে এভাবে চলতে থাকলাম 2023 সাল পর্যন্ত।

এই রোগটাকে সঙ্গী করে আমি লেখাপড়া সহ যাবতীয় কাজ করে আসছিলাম। কিন্ত গত বছর নভেম্বর মাসের এক তারিখ হঠাত সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি মাথার ভিতর নতুন একটা চিন্তা সারাক্ষণ কিলবিল করতেছে যেটা আমাকে খুব কস্ট দেয় এবং ভয় কাজ করতেছে। কারো সাথে হিসাব নিকাশ করার সময় খুব ভয় কাজ করে। যেমন বাজার করতে খুব ভয় করে কারন ওখানে হিসাব আছে। উদাহরণস্বরূপ দোকানদার 15 টাকা চাইলো কিন্ত আমি জানি যে একটা দশ টাকার নোট ও একটা পাচ টাকার নোটে পনের টাকা হয়,ক্যালকুলেটরে যোগ করলে 15 হয়, কিন্ত মাথার ভিতর এই চিন্তাটা ঘুরপাক করে যে ওনার হিসাব অন্য রকম হতে পারে। আমার বইয়ে যেরকম 10 এর পরে 11, তারপর 12, তারপর 13 এরকম পড়েছি কিন্ত দোকানদার এর বইয়ে সংখ্যা গুলোর সিরিয়াল অন্য রকম হতে পারে তাই ওনার হিসাব টাও অন্য রকম হতে পারে।

raju akon youtube channel subscribtion

এরকম মনে হতো যে কারো কাছে 10 ও 5 এর যোগফল 18 হতে পারে আবার কারো কাছে 16 হতে পারে। তাই আমি যদি পনের টাকা দিতে গিয়ে যদি একটা দশ টাকা ও পাচ টাকার নোট দেই উনি আমাকে পাগল ভাবতে পারে। এবং এই কয়েক মাস ধরে গননা করতে খুব ভয় কাজ করে যেটা আমাকে খুব কস্ট দেয় এবং সারাক্ষণ এই চিন্তাটা মাথার ভিতর ঘোরে। অথচ বাস্তবে আমি দেখতেছি কেউ আমার কাছে 25 টাকা পেলে আমি 100 টাকার নোট দিলে সে কিন্ত 75 টাকা ফেরত দেয়। কিন্ত তারপরেও এই অবাস্তব চিন্তা ও ভয়টা সারাক্ষণ মাথার মধ্যে ঘুরে।

আমি প্রথম প্রথম দুই আড়াই মাস বাজার করিনাই। কারোসাথে টাকা পয়সার কোনো লেনদেন করিনাই। তবে এখন কিছুটা সুস্থ তাই কস্ট হলেও বাজার করি। তবে এই ভয়টা বেশি কাজ করলে দোকানদারকে একটা বড় নোট দেই। উনি যা ফেরত দেয় ওইটা নিয়ে আসি, তবে খেয়াল করে দেখি যে আমি যে টাকাটা ফেরত পাবার কথা দোকানদার আমাকে সেই টাকাটাই ফেরত দিছে কিন্ত তারপরও এই দুশ্চিন্ত ও ভয়টা সারাক্ষণ মাথার ভিতর কিলবিল করে।

আমি একটা সময় সিক্স থেকে টেন পর্যন্ত ইংলিশ ও ম্যাথ প্রাইভেট পড়াতাম। কিন্ত আজ আমি নিজেই ক্লাস ওয়ান এর যোগ বিয়োগ নিয়ে ভয় করতেছে। সারাক্ষণ টেনশনে ভুগতেছি। এবং খুব কস্ট পাচ্ছি।মাথার মধ্যেও সমস্যা অনুভব করি। চিন্তা শক্তি শর্ট হয়ে গেছে। স্মৃতিতেও সমস্যা হয়েছে। যথাসময়ে সকল কিছু চিন্তা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। এই সমস্যা থেকে কিভাবে মুক্তি পেতে পারি? 2013 সাল থেকে এখন পর্যন্ত সবসময়ই মন খারাপ থাকে।

2013 সাল থেকে এখন পর্যন্ত তিনজন মানসিক ডাক্তার দেখাইছি তবে ঔষধ খাবার পর বেশি অসুস্থ ফিল করি যার কারনে কোনো ডাক্তার এর দেয়া ঔষধ কয়েকদিন এর বেশি খাইনাই।তাই মানসিক রোগের ঔষধ দেখলেও আমার খুব ভয় করে।

পরামর্শঃ

ধন্যবাদ আপনাকে প্রশ্নটি করার জন্য। অনেকদিন ধরে এই একই সমস্যার ভিতরে আছেন সেটি আমি বুঝলাম।ওসিডি বা অফসেসিভ কম্পাসিভ ডিসঅর্ডার নামে একটি রোগ আছে। অনেক ক্ষেত্রে আপনার সিমটমের সাথে মিলে যায়। যদি সেটি হয় তবে আপনাকে অবশ্যই কাউন্সিলিং বা সাইকোথেরাপি দরকার হবে। এরপর একজন কাউন্সিলর আপনার ইনকাম গুলো তীব্রতা দেখে পরবর্তী সিভিটির মাধ্যমে চিকিৎসা দিবেন। আপনি যত দ্রুত সম্ভব এই চিকিৎসা পদ্ধতির গ্রহণ করুন। আর নিয়মিত মেডিটেশন ও ব্রিদিং এক্সারসাইজ করুন। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top