রিলেশন করে বিয়ে করেছি এখন আমি মানসিক ভাবে ভেঙে পরেছি কিছুই ভালো লাগে না

আমি একজন মেয়ে। আমার বয়স ২৩, আমি রিলেশন করে ১৫ বছরে বিয়ে করেছি কিন্তু বিয়েটা আমার ইচ্ছায় ছিলো না আমার শাশুড়ী একজন অ্যাডভোকেট উনি আমাকে উনার বাসায় নিয়ে অনেক কিছু বুঝিয়ে বিয়ের জন্য রাজি করিয়েছেন। তখন আমি ক্লাস নাইনে পড়ি। আর আমার হাসবেন্ডের বয়স ছিলো তখন ২২। বিয়ে করার পর আমি আমার বাসায় ছিলাম আমার শাশুড়ী বলেছিলেন এসএসি exm এর পর আমদের বিয়ের কথা আমার বাসায় জানাতে। কিন্তু এর আগেই আব্বু টের পেয়ে যায় আর আমাকে বাসায় বন্দি করে রাখে। আমি ৪ মাস বন্দি ছিলাম আর এর মাঝে আমাদের ডিভোর্স ও করিয়েছেন। ৪ মাস পর আমি আর এই বন্দি জীবনের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আমার হাসবেন্ডের সাথেই পালিয়ে যাই। আর আব্বু শাশুড়ী আর আমার হাসবেন্ডের নামে মামলা করে। আর মামলা থেকে বাচার জন্য আমার শাশুড়ী আমাকে পরামর্শ দেন বাচ্চা নিতে। তাহলে আমার বাসার সবাই মানবে আর মামলা ও তুলে নিবে। আর আমার ১৮ বছর হওয়া অবদি অপেক্ষা করে পালিয়ে থাকা লাগবে না। শাশুড়ীর কথা শুনে বাচ্চা নিলাম সবাই সব কিছু মেনে নিলাম। এর মধ্যে ২০১৯ এ আমার শাশুড়ীর ক্যান্সার ধরা পড়ে। উনার কাছে আমার আম্মুর দেওয়া ৬ ভড়ি সোনার গহনা ছিলো উনি আমাকে জিজ্ঞেস না করেই গহনা গুলো বেচে উনার চিকিৎসা করায়। আর এই দিকে বিয়ের যখন ৫ বছর চলে তখন অবদি আমার হাসবেন্ড কোনো কাজ করতো না। শুধু ফোনে ক্রিকেট খেলার বাজি খেলতো। আর বাজির টাকা আমাকে যোগাড় করে দেওয়া লাগতো। না দিলে গায়ে হাত তুলতো। এরপর আর না পেরে ২০২২ এ ওরে ডিভোর্স দিয়ে বাবার বাসায় চলে আসলাম। আর বাচ্চাটাকে ওদের কাছেই রেখে আসলাম। এর ৫ মাস পর আমার এক ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক হয়। বিয়ের ৫ দিন আগে এসে উনারা বলে গেলেন আমি সুন্দর না আমাকে উনাদের ছেলের সাথে মানায় না।  আর আমি ওই ছেলেকে আমার অতীত সম্পর্কে সব জানিয়েছিলাম ও বলেছিলো ওর কোনো সমস্যা নেই ওই ছেলের ও ডিভোর্স হয়েছিলো। এই সবের পর আমি পাগল প্রায়। নিয়মিত ঘুমের ওষুধ ডেক্সপোটেন , টোফেন এইসব খেয়ে পরে থাকতাম। তার ২ মাস পর আমার বাচ্চাটা অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ে। ওর উপর মানসিক চাপ পরছিলো। আর আমি চলে আসার পর আমার হাসবেন্ড জব করা শুরু করে। তাই আমি আবার সিদ্ধান্ত নিলাম ওর কাছে ফিরে যাওয়ার। কিন্তু এর পরপরই ওর জব চলে যায়। আবার বেকার জীবন শুরু। তারপর আমার শাশুড়ী বললো ওকে মালোশিয়া পাঠাবে ওই খানে আমার শাশুড়ীর পরিচিত অনেকে আছে ভালো জব দিতে পারবে। মালোশিয়া পাঠানোর জন্য আমি আমার বাবার কাছ থেকে ১ লাখ টাকা এনে দেই।আমার নামে কিস্তিতে টাকা তুলে দিয়ে ওরে পাঠাই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমার হাসবেন্ড বাহিরে যাওয়ার পর থেকে ও আমাকে বিনা কারনে সন্দেহ করা শুরু করে। আর প্রতিদিন ঝগড়া। এইসব আমি নিতে না পেরে হাত কাটতাম ঘরে বসে বসে ঘুমের ওষুধ খেতাম ৩/৪ দিন ঘুমাতাম। আমার ছেলেকে আমি দেখতে পারতাম না। একা থাকতে ভালো লাগে। আমার কোনো চিল্লাচিল্লি আমি নিতে পারি না সাথে সাথে মাথা ধরে যায়। তারপর গেলাম মানসিক ডাক্তারের কাছে উনি আমার সব শুনে আমাকে ওষুধ দিলো আর বল্লো এর পর বাবা না হয় শাশুড়ীকে সাথে নিয়ে যেতে কিন্তু উনারা গেলেন না। ডাক্তার আমাকে কাউন্সিলিং করতে বললো। বাসা থেকে কেউ পারমিশন দিলো না তাই আর কাউন্সিলিং করানো হয়নি। আমার ডিভোর্সের আগে আমি বেশি ঘুরতে যেতাম না। কিন্তু ইদানিং আমার বাসায় থাকলেই দম বন্ধ হয়ে আসে। আমার প্রতিদিন ৪/৫ ঘন্টার জন্য হলে ও বাইরে যেতে হবে না হয় আমি পাগলের মতো হয়ে যাই। আমি দুরে কোথাও যাই না। আমার একটা মেয়ে ফ্রেন্ড আছে ওরে নিয়ে একটা রুফটপে বসে গল্প করি আর সিগারেট খাই। এছাড়াও শাশুড়ী বিভিন্নভাবে টাকার জন্য আমাকে প্রেসার দেয়। কিছু হলেই অনেক কথা শুনায় আমার আব্বুকে কল দিয়ে ও বিচার দেয়। আব্বু ও আমাকে বকা দেয়। আর আমার আর একটা প্রবলেম হচ্ছে আমি সিগারেট খাই ৩ বছর ধরে এটা নিয়ে শাশুড়ী অনেক ঝামেলা করে। এই বিষয় নিয়ে ঝগড়া করে আমাকে ঈদের আগের দিন বাসা থেকে বের করে দিছে। আমি এখন বাবার বাসায় আছি আর আমার শাশুড়ী আমার ছেলেকে নিয়ে কুমিল্লা উনার বোনের বাসায় ঈদ করতে চলে গেছে। আর আব্বুর কাছে কি কি বলে আমার নামে বিচার দিয়েছে জানি না। আব্বু আমাকে খুব বাজে ভাবে বকা দেয় আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলে। ঈদের সময় সবাই কম বেশি একটু বের হয় কোথাও যায়। ইদের দিন সন্ধ্যায় আমি বের হয়েছিলাম তাই আব্বু খুব বাজে কথা বলছে আমাকে আর বাসা থেকে বের হতে দেয় না আবার প্রতিদিন রাত হলে বলে সকালে তুই আমার বাসা থেকে বের হয়ে যাবি। এই অবস্থায় আমি প্রতিদিন ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে দিন রাত পার করছি। আমার আব্বু আর আমার শাশুড়ী চায় না আমি বাসা থেকে বের হই।এখন আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। আমার মাথায় অসম্ভব যন্ত্রণা হয় মাথা ব্যাথা থাকে সব সময় আর মেজাজ খারাপ থাকে কারো কোনো ভালো কথা ও আমি নিতে পারি না। আজকে ৭ দিন যাবত আমি কোনো খাবার খাই না। আমার খুদা ও লাগে না। আর রুচি ও নাই পানি খেয়ে সেলাইন খেয়ে আছি আর প্রেসার আপ ডাউন হয় শুধু। আমি কোনো কাজ করি না কিন্তু প্রতি সপ্তাহে আমাকে কিস্তির টাকা ২ হাজার করে দিতে হয় এটা আমার জন্য অনেক চাপের হয়ে যায়। এই টাকাটা যে আমার দেওয়া লাগবে আমাকে আগে বলে নাই। তাহলে আমি তুলে দিতাম না কিস্তি। এখন আমি মানসিক ভাবে ভেংগে পরেছি। কিছুই ভালো লাগে না। আমার দুনিয়ার শুধু মন চায় অনেক দুরে একা কোথাও গিয়ে ঘুরে আসি ৫/৬ দিনের জন্য আর আমাকে কেউ কল দিয়ে বিরক্ত করবে না। আর আমার কোনো গুন নাই। পড়া লেখা করতে পারি নি। কিন্তু আমি মিডিয়া জগতে আছি একটু একটু। যেমন ব্রাইডাল শুট জামার পেজের জন্য ভিডিও ছবি তুলার জন্য আমাকে বিভিন্ন পেইজ থেকে ডাকা হয়। এখন আমি কি করলে আমার এই সমস্যা গুলো থেকে মুক্তি পেতে পারি?  আমাকে সাহায্য করেন।🙏🙏

 

পরামর্শঃ

ধন্যবাদ আপনাকে আপনার কথাগুলো শেয়ার করার জন্য। আপনি একটি অ্যাডভেঞ্চারিয়াস লাইফ লিড করছেন। আপনার জন্য অনেক অনেক সমবেদনা এবং শ্রদ্ধা। আপনার এইটুকু বয়সেও আপনি অনেক চ্যালেঞ্জ, বিষন্নতা, স্ট্রেস, এনজাইটি এর মুখোমুখি হয়েছেন। অনেক ব্যাড এক্সপেরিয়েন্সও আপনার হয়েছ। আপনার কথাগুলো শুনে আপনাকে সহজ সরলই মনে হচ্ছে। আমাদের প্রত্যেকের জীবনে পরিবার একটি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর। আমরা যেখানেই যা করি না কেন পরিবারের দায়িত্ব ও কর্তব্য গুলো সঠিকভাবে পালন করাও একজন পরিবারের সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। আমার খুব জানতে ইচ্ছা করেছিল আপনি বাচ্চাটার এখন কি অবস্থা। ওকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে বড় করাও এখন একটা বড় দায়িত্ব। আপনার যে ব্যাড এক্সপেরিয়েন্সের কথা বলা হয়েছে এটা কি আসলে ট্টমা কিনা এটা একটু চেক করা দরকার। আপনাকে যেহেতু কাউন্সেলিং এর জন্য রেফার করেছিল সুতরাং এটা একটা ভালো ওয়ে হতে পারে যেটি আপনাকে আপনার জীবনকে একটা স্ট্রাকচার দিবে।

আপনি চাইলে আগামী দুই বছরের একটা প্লান করে নিতে পারেন যে, এই সময়ে আপনি আপনার অবস্থান কোথায় দেখতে চান। আপনি কি মনে করেন আপনাকে আরো অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে? যদি তাই হয় তাহলে আপনি আপনার জায়গা থেকে এখন কি কি করতে পারেন? একটু চিন্তা করে জীবনের পরবর্তী স্টেপগুলো নির্ধারণ করা যায় কিনা একটু ভেবে দেখবেন।

আবার যেহেতু আপনার শ্বশুর বাড়ির লোকজন এবং আপনার নিজের ঘরের লোকজনও আপনার উপর কিছুটা নজরদারি করছে সে ক্ষেত্রেও কাউন্সেলিংটা আপনাকে সাহায্য করবে। আপনি এখনো মানসিক রোগের  ওষুধ খাচ্ছেন কিনা সেটি উল্লেখ করেননি। সেক্ষেত্রে একজন কাউন্সিলিং সাইকোলজিস্টের সাথে কয়েকটা সেশন নিতে পারেন। আপনার দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে তারা যে কমপ্লেন করেছিল আমার মনে হয় সেটি থেকে আপনি উঠে এসেছেন। কেননা আপনি এখন এমন কিছু করেন যেখানে ফেস ভেইলিডিটি থাকতে হয়।

সব সময় একটি কথা মনে রাখবেন আমরা যদি কোন সমস্যায় পড়ি তাহলে সেখান থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখা বা দূরে থাকলে সমস্যা সমাধান হয় না বরং সেটিকে ফেস করে বাঁচতে শিখতে হয় বাঁচতে জানতে হয়। ওষুধ খেয়ে নিজেকে লুকিয়ে রাখার সামিল আমি মনে করি। ওষুধ যদি খেতে হয় তাহলে একজন সাইক্যাটিস্ট এর কাছ থেকে প্রেসক্রিপশন নিয়ে সেই  অনুযায়ী ওষুধ খাবেন। আপনি একটু মেডিটেশন এবং শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে পারেন। আপনি যদি টানা দুই সপ্তাহ করতে পারেন তাহলে দেখবেন অনেক কিছু আপনার নিয়ন্ত্রনে চলে আসবে। আমি একটি ভিডিওর লিংক শেয়ার করছি। ভিডিওটি পেতে এখানে ক্লিক করুন। এটা দেখে দেখে নিয়মিত প্রাকটিস করবেন। এই চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এরকম সমস্যার অনেক রকমের ভিডিও পাবেন। আশা করি সেটি আপনাকে অনেক সাহায্য করবে। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।

Md. Asadujjaman Raju
Counselling Psychologist
Pinel Mental Health Care Centre (PMHCC)
Hotline: 01681006726

222/1B, South Pirerbag, Mirpur-2, Dhaka -1216

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top