ওসিডি থেকে মুক্তির উপায়। OCD success story by psychiatrist, Dr. Rashidul Haque

অনেকে মনে করে ওসিডি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। “ওসিডির জন্য অনেক ট্রিটমেন্ট নিয়েছি কিন্তু মুক্তি পাইনি তাই আর ট্রিটমেন্ট নেই না। ধরেই নিয়েছি ওসিডি থেকে মুক্তি আমার হবে না।” আপনি হয়তো এই ভুল ধারণার মধ্যেই বসবাস করছেন।

ওসিডি কি ?

ওসিডি একটি নিউরোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার যেখানে সাইকিয়াট্রিক মেডিসিন এবং সিভিটি ভেইসড সাইকোথেরাপি অপরিহার্য বলা যায়। যাদের ভিতর  ওসিডি থাকে তাদের  অবশেসন ও কম্পালসন হয়। অবশেসন হচ্ছে নেতিবাচক চিন্তা কম্পাশন হচ্ছে আচরণ। যারা ওসিডিতে ভোগে তারা তীব্র এনজাইটি বা উদ্বিগ্নতা সাথে সাথে স্ট্রেস বা মানসিক চাপে ভোগে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি শত চেষ্টা করেও নিজেকে বিভিন্ন রকমের নেতিবাচক চিন্তা থেকে মুক্ত করতে পারেনা। তাই প্রফেশনাল সাহায্য দরকার হয়। এই ধরনের রোগের ক্ষেত্রে দুই ধরনের প্রফেশনালরা চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তারা হচ্ছেন সাইক্রিয়াটিস্ট এবং সাইকোলজিস্ট।

raju akon youtube channel subscribtion

আপনাদের অনুরোধ করবো এই ভিডিওটি মনোযোগ সহকারে দেখবেন, যেখানে স্যার প্রশ্ন করে ওসিডি ট্রিটমেন্ট কিরকম হয় সেটি সুন্দরভাবে ভিডিওর মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। সাথে সাথে কেউ যদি মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত এরকম ভিডিও পেতে চান তাহলে চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। আশা করি আপনারা এই চ্যানেলের মাধ্যমে উপকৃত হবেন।

এই ভিডিওটি করার সময় স্যার পেশেন্টের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে নিয়েছেন। সঙ্গত কারণেই আমরা এই পেশেন্টের ব্যক্তিগত তথ্য কোথাও উল্লেখ করছি না।

উল্লেখিত ভিডিওটি দেখতে পেরে আমিও নতুন করে আর একবার কনফিডেন্স ফিল করছি। এরকম সব সফলতার গল্প হয়তো ভিডিও করা হয়না কিন্তু অনেকেই আছেন যারা ওসিডি থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

ফেইসবুক এবং বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রতিনিয়ত আমি কিছু স্ট্যাটাস দেখতে পাই যেখানে ওসিডি নিয়ে বিভিন্ন রকমের আলোচনা করা হয়। আমার অভিজ্ঞতার মধ্যে যদি আলোচনা থাকে এবং আমি যদি দেখি আলোচনায় আমার কিছু বলার আছে তাহলে আমার এক্সপার্টিস অনুযায়ী আমি বলতে চেষ্টা করি। কিন্তু সেটিও সব সময় বলা সম্ভব হয় না সময়ের বা ব্যস্ততার কারণে।

এই ভিডিও এর পেশেন্ট সম্পর্কে আমার কিছু অবজারভেশন আছে। এই পেশেন্ট শ্রদ্ধেয় ডঃ রশিদুল হক স্যারের কাছে ট্রিটমেন্ট নেয়ার সময় স্যার কাউন্সিলিং রেকমেন্ড করে এবং আমার কাছে রেফার করে।

এই পেশেন্টটি আমাদের পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টারে আমার কাছে ৫ থেকে ৭ টি কাউন্সিলিং সেশন নেয়। তার বাসা যেহেতু দূরে তাই প্রতি সপ্তাহে সেশন নেয়া তার জন্য একটা প্রতিবন্ধকতা ছিল।

এই পেশেন্টের কগনিশন খুব ভালো কাজ করেছিল। এই পেশেন্ট মেডিসিন ট্রিটমেন্ট নিচ্ছিল সাথে সাথে সিভিটি চলমান ছিল। আমার কাছে কাউন্সিলিং করানোর সময় আমি তাকে একটা ফর্মুলেশন এর মাধ্যমে তার প্রবলেমকে আইডেন্টিফাই করতে সাহায্য করি। সাথে সাথে তাকে মেডিটেশন এবং বিভিন্ন রকম রিলাক্সেশন এক্সারসাইজ করানো হয়। সিভিটির কিছু টেকনিকও ব্যবহার করা হয়েছিল।

প্রথমেই তাকে ওসিডির যে যে লক্ষণ তার মধ্যে বিদ্যমান ছিল তা সে যেন বুঝতে পারে তার জন্য ফোর ফ্যাক্টরিয়াল মডেলর সাহায্য নেই।

এই মডেলের মাধ্যমে তার কাছে যে তথ্যগুলো পাওয়া যায় তা ছিল এমন :

১. পিরিডিসপোজিং ফ্যাক্টর:
রিলেশনশিপ ইসু, চাইল্ডহুড ইসু।

২. পিরিসিপিটিং বা ট্রিগারইন ফ্যাক্টর:
ব্যবসায়িক কাজে অনেক সময় দেয়া এবং ক্লান্তি বোধ করা, কারো সাথে হঠাৎ করে মনোমালিন্যতা তৈরি হলে ওসিডির লক্ষণ গুলো চলে আসে।

৩. মেইনটেনিং ফ্যাক্টর:
অতিরিক্ত মানসিক চাপ, পড়ালেখা না করতে পারায় হীনমন্যতা, অন্য কেউ খারাপ কিছু বললে অল্পতেই মন খারাপ লাগা মানসিক চাপ বোধ করা। পূর্ববর্তী ভালোবাসা সম্পর্কের কথা বারবার মনে আসা।

৪. প্রোটেকটিভ ফ্যাক্টর:
ট্রিটমেন্ট নেয়ার জন্য যা কিছু করার তা সে আন্তরিকতার সাথে করতো। প্রতি কাউন্সিলিং সেশনে সে নতুনত্ব যা পেতো তা তার জীবনে প্রয়োগ করত এবং নিয়মিত তার আপডেট পরবর্তী সেশনে আলোচনা করত।

গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় যা উল্লেখ করা প্রয়োজন

একটি কথা উল্লেখ করতে চাই যে, কাউন্সিলিং একটি মেডিকেল টার্ম। অনেকে বলে কাউন্সিলিং করে কি হবে ওই কাউন্সেলিং তো যে কেউই করাতে পারে এবং তারা ওসিডির চিকিৎসায়  শুধুমাত্র মেডিসিনের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। কিন্তু কথাটি সত্যি নয় যারা কাউন্সিলিং করান তাদের ১০ থেকে ১৫ বছর পড়াশুনার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। একজন কাউন্সিলিং সাইকোলজিস্ট সাইকোলজির উপর চার বছরের  অনার্স এবং সাইকোলজির ওপর প্রফেশনাল মাস্টার্স ডিগ্রিসহ মেডিক্যাল সেটিং এ কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হয। সাথে সাথে  প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকমের ট্রেনিং, ওয়ার্কশপ, কনফারেন্সে এর মাধ্যমে নিজেকে আপডেট রাখতে হয়। সুতরাং যখন আপনার কাউন্সিলিং নিবেন তখন কাউন্সিলরের ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাই করে নিবেন। আপনারা যখন মানসিক রোগের চিকিৎসা নিবেন তখন শুধুমাত্র মেডিসিন নয় সাথে সাথে কাউন্সিলিং বা সাইকোথেরাপিও নিবেন। কিছু কিছু ইস্যুতে শুধুমাত্র কাউন্সিলিং বা সাইকোথেরাপি যথেষ্ট। সমস্যাটা যদি সিবিআর থাকে তাহলে মেডিসিন ট্রিটমেন্ট নেওয়া দরকার হয়।

সর্বশেষে আমি বলব, ওসিডি থেকে মুক্তি পাওয়ার অন্যতম উপায় হচ্ছে একজন সাইক্রিয়াটিস্ট ও একজন সাইকোলজিস্ট এর সুপারবেশনে থেকে মেডিসিন এবং কাউন্সিলিং বা সাইকোথেরাপি চলমান রাখা। সাথে সাথে আরেকটি কথা বলতে চাই আমাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত (শারীরিক স্বাস্থ্য, মানসিক স্বাস্থ্য, সামাজিক স্বাস্থ্য, স্পিচুয়াল বা ধর্মীয় স্বাস্থ্য) যে কোন চিকিৎসা নেয়ার প্রয়োজন বোধ করতেই পারি সেখানে কোন রকমের ভয় বা লজ্জা থাকা অনুচিত বলে আমি মনে করি।

Md. Asadujjaman Raju
Counselling Psychologist, MPhil Research Fellow, DU
Bangladesh OCD center

#Hotline 01681006726
222/1B, South Pirerbag, Amtola Moor, Mirpur-2, Dhaka -1216

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top