একটি ভিডিও দেখে আমি খুবই মর্মাহত যেখানে কিছু ব্যক্তি এবং তাদের অর্গানাইজেশনকে মানসিক সেবার নামে প্রতারণা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। উল্লেখিত ব্যক্তিদেরকে বা তাদের অর্গানাইজেশনকে আমি পার্সোনালি চিনি না। ওই ভিডিওটি দেখে আমি যা বুঝলাম তা হচ্ছে কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ কোন একটি প্রতিষ্ঠান খুলে ননপ্রফেশনাল দিয়ে কাউন্সিলিং বা সাইকোথেরাপি প্রদান করছেন।
আমি নিজে একজন কাউন্সিলিং সাইকোলজিস্ট। পেসেন্ট ডিল করার ক্ষেত্রে একজন কাউন্সিলিং সাইকোলজিস্ট এর অনেক ভূমিকা থাকে। আমার নিজেরও একটি ইউটিউব চ্যানেল আছে। ওই ইউটিউব চ্যানেল থেকে সাজেশন হিসেবে এই ভিডিওটি আমার নজরে আসে। একজন কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট এর কিছু একাডেমিক, ননজাজমেন্টাল, জেনুইননেস, আনকন্ডিশনাল পজিটিভ রিগার্ড, অ্যাকসেপ্টেন্স এবং মরাল ভ্যালু থাকতে হয়।
কাউন্সিলিং একটি মেডিকেল টার্ম।
পেশেন্টরা অনেক সেনসিটিভ এবং গোপন বিষয় নিয়ে আমাদের কাছে আসেন। আমাদের বিন্দুমাত্র অসতর্কতা বা অদক্ষতা তাদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ হতে পারে। অথবা তার মানসিক সমস্যাটি সারাজীবন ধরে চলতে পার। কারো যদি মানসিক সমস্যা হয় তবে সেই বুঝতে পারে মানসিক সমস্যার কষ্ট কত খানি।
মানসিক সমস্যা নিয়ে যখন কোন ব্যক্তি আমাদের কাছে আসেন তখন তারা নিজেরা অনেক খারাপ অবস্থায় থাকেন যার কারনে মানসিক সমস্যার সমাধান খুঁজেন। যে সকল মানসিক সমস্যা রয়েছে তার ভিতরে একুয়েট (লেস সিবিআর যেমন এনজাইটি, ডিপ্রেশন) এবং ক্রোনিক (মোস্ট সিবিআর যেমন সিজোফিনিয়া, বায়োপোলার ডিজঅর্ডার) ভাগে ভাগ করা যায়।
ভুলভাবে কাউন্সিলিং করানো হলে কেউ একুয়েট (acute) অবস্থানে থাকলেও ক্রনিক (chronic) অবস্থানে খুব সহজে চলে যেতে পারে এবং সুইসাইড করার মতো চিন্তা করতে পারে বা করে ফেলতেও পারে।
একজন কাউন্সিলিং সাইকোলজিস্ট এর একাডেমিক কোয়ালিফিকেশন হিসেবে সাইকোলজিতে চার বছরের অনার্স এবং মাস্টার্স পর্যায়ে দুই বছরের কোয়ালিফিকেশন থাকতে হয়। এ মাস্টার্স পর্যায়ে কোয়ালিফিকেশন হিসেবে মেডিক্যাল সেটিং এ কাজ করার অভিজ্ঞতা সাথে সাথে সুপারভেশন আওয়ার, প্রোসেস আওয়ার, ইন্টার্নশিপ, প্লেসমেন্ট, প্রজেক্ট বা থিসিস, মেডিকেল সেটিং এ কাজ করার সময় সুপারভাইজারের প্রশংসাপত্র, ইত্যাদি অপরিহার্য।
এছাড়াও এই সময় বিভিন্ন রকমের ট্রেনিং ও ওয়ার্কশপ করতে হয় এবং করাতেও হয়। কিছু গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনিং এর মধ্যে TA, CBT, EMDR, NLP, Behaviour therapy অন্যতম। এরপর পেসেন্ট দেখার ক্ষেত্রে নিয়মিত সুপারবেশন নিতে হয়। এর এইসব যোগ্যতার বাহিরে কেউ কোনো প্র্যাকটিস করলে সেটি অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হবে না।
তবে বাংলাদেশী কাউকে কাউন্সিলিং সাইকোলজিস্ট হিসেবে বিবেচনা করতে হলে তাকে অবশ্যই মাস্টার্স এর পর এমফিল ডিগ্রিধারী হতে হবে অথবা এমফিল ফাস্ট পার্ট শেষ করতে হবে। এর আগে সে শুধুমাত্র ট্রেনি কাউন্সিলিং সাইকোলজি হিসেবে বিবেচিত হবে।
কেউ যদি মানসিক স্বাস্থ্যে ম্যালপ্রাকটিস করে তাহলে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে কেবলমাত্র সরকার, কিছু নির্দিষ্ট সংগঠন অথবা সরাসরি জনগণ এর মোকাবেলা করতে পারে। সুতরাং আপনারাই বুঝতে পারবেন কাদের এই এইসব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব থাকা দরকার পরবে।
বি:দ্র: যারা কাউন্সেলিং সাইকোলজিতে এমফিল করে তারা এই বিষয়ে আরো আপডেট অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ। তাদের অভিজ্ঞতা, জ্ঞান অবশ্যই এমএস করা বা বিএসসি করা প্রফেশনাল থেকে বেশি হবে। শুধুমাত্র ৪ বছরের বিএসসি করে কেউ প্রফেশনাল সাইকোলজিস্ট হতে পারে না। বিএসসি এবং এমএসসি করার পর প্রফেশনাল সাইকোলজিস্ট হতে পারে। এমএসসি করার ক্ষেত্রেও তাদের বিভিন্ন রকমের রিকয়ারমেন্ট থাকতে হয় যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রদান করে। এছাড়াও ব্রিটিশ সাইকোলজিকাল অ্যাসোসিয়েশন অনুযায়ী কাউকে কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট, বা ক্লিনিকাল, এডুকেশনাল, স্কুল সাইকোলজিস্ট হতে হলে ৪ বছরের ডিগ্রি সম্পূর্ণ করার পর ২ বছরের এমএসসি করতে হয়। যেহেতু বাংলাদেশে এক বছরের এমএসসি তাই এমএসসি করার পর এমফিল ডিগ্রী থাকতে হয়।
সর্বোপরি আমি তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে চাই যারা কাউন্সিলিং সেবা নিতে আগ্রহী বা নিবেন বলে ভাবছেন – আপনারা অবশ্যই প্রফেশনালের কোয়ালিফিকেশন, ডিগ্রী, অভিজ্ঞতা, কোন এপ্রোসে চিকিৎসা করেন তা ভালোভাবে জেনে তারপর তার কাছ থেকে কাউন্সিলিং বা সাইকোথেরাপি নিবেন। ব্যতিক্রম হলে ভালো থেকে খারাপ হওয়ার সম্ভাবনাই থাকবে অনেক গুণ বেশি।সবার জন্য শুভকামনা।
আর্টিকেলটি লিখেছেন: রাজু আকন, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট ও সাইকোথেরাপিস্ট, পাইনাল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ঢাকা, বাংলাদেশ।