জ্বর হলো শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির একটি প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অংশ হিসেবে কাজ করে। তবে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে জ্বর হলে তা সবসময়ই পিতা-মাতার জন্য উদ্বেগজনক হয়ে ওঠে। সাধারণত বাচ্চাদের শরীরের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি হলে তা জ্বর হিসেবে ধরা হয়। এই পরিস্থিতিতে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
বাচ্চাদের জ্বর ১০০ হলে প্রাথমিক করণীয়
১. শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করুন:
- ডিজিটাল থার্মোমিটার ব্যবহার করে সঠিকভাবে তাপমাত্রা মাপুন।
- মুখের (ওরাল), কানের (ইয়ার) বা বগলের (আক্সিলা) মাধ্যমে তাপমাত্রা নির্ণয় করা যেতে পারে।
২. বাচ্চাকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিন:
৩. প্রচুর পানি ও তরল খাদ্য দিন:
- জ্বরের সময় শরীরের পানিশূন্যতা হতে পারে। তাই স্যালাইন, ফলের রস, ডাবের পানি এবং সুপ খাওয়ান।
৪. হালকা গরম পানির পট্টি দিন:
- কাপড় বা তোয়ালে হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে শিশুর কপালে এবং শরীরে আলতোভাবে পট্টি দিন। এটি তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করবে।
৫. ওষুধ ব্যবহার করুন (প্রয়োজনে):
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ দিন।
- ডোজ দেওয়ার আগে শিশুর ওজন অনুযায়ী পরিমাণ নির্ধারণ করুন।
বাচ্চাদের জ্বরের পেছনে সম্ভাব্য কারণ
১. ভাইরাসজনিত সংক্রমণ:
- সাধারণ সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা বা করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে জ্বর হতে পারে।
২. ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন:
- কান, গলা বা প্রস্রাবের সংক্রমণও জ্বরের কারণ হতে পারে।
৩. টিকা দেওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
- অনেক সময় টিকা দেওয়ার পর সাময়িক জ্বর দেখা দেয়।
৪. হিট স্ট্রোক বা অতিরিক্ত গরম:
- বেশি সময় ধরে গরম আবহাওয়ায় থাকার কারণে জ্বর হতে পারে।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত?
১. জ্বর যদি ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি হয়। ২. বাচ্চার বয়স ৩ মাসের কম এবং জ্বর দেখা দেয়। ৩. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে যদি:
- ঘন ঘন শ্বাস নেয়,
- খিঁচুনি হয়,
- ত্বকে র্যাশ দেখা দেয়,
- খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়। ৪. জ্বর তিন দিনের বেশি স্থায়ী হয়।
জ্বর প্রতিরোধে করণীয়
১. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন:
- বাচ্চার হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
২. সুষম খাদ্য গ্রহণ নিশ্চিত করুন:
- শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিকর খাবার দিন।
৩. টিকা দেওয়ার সময়সূচি মেনে চলুন:
- সময়মতো টিকা দিয়ে শিশুকে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করুন।
৪. অপরিচ্ছন্ন স্থানে যাওয়া এড়িয়ে চলুন:
- বিশেষ করে যেসব জায়গায় ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি বেশি।
উপসংহার
বাচ্চাদের জ্বর ১০০ হলে তা সাধারণত খুব বড় কোনো সমস্যা নয়, তবে সঠিকভাবে যত্ন না নিলে এটি গুরুতর হয়ে উঠতে পারে। প্রাথমিক পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি, উপসর্গগুলো নজরে রাখা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। জ্বর কমার পরও শিশুর যথাযথ যত্ন নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।