নবজাতকের পায়খানা না হলে করণীয়: কারণ, লক্ষণ ও সমাধান

নবজাতকের স্বাস্থ্যের প্রতি প্রতিটি বাবা-মায়ের বিশেষ নজর থাকে। যদি নবজাতক নিয়মিত পায়খানা না করে, তাহলে এটি বাবা-মায়ের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে ওঠে। এটি সাধারণত হজমজনিত সমস্যার কারণে ঘটে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি স্বাভাবিক। তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। এই ব্লগে আমরা নবজাতকের পায়খানা না হওয়ার কারণ, লক্ষণ এবং করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

নবজাতকের পায়খানা কতবার হওয়া স্বাভাবিক?

নবজাতকের মলত্যাগের পরিমাণ এবং ধরণ তার খাদ্যাভ্যাসের ওপর নির্ভর করে।

স্তন্যপানকারী শিশু: দিনে ৪-৮ বার পায়খানা করতে পারে।
ফর্মুলা দুধ খাওয়া শিশু: দিনে ১-৩ বার মলত্যাগ করতে পারে।
৬ মাসের বেশি বয়সী শিশু: কঠিন খাবার খাওয়া শুরু করলে পায়খানার ফ্রিকোয়েন্সি কমতে পারে।

নোট: ২-৩ দিন পায়খানা না হলেও যদি শিশু স্বাভাবিক থাকে এবং কোনো অস্বস্তি অনুভব না করে, তবে এটি চিন্তার কারণ নয়।

raju akon youtube channel subscribtion

নবজাতকের পায়খানা না হওয়ার কারণ

নবজাতকের কোষ্ঠকাঠিন্যের পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে—

১. বুকের দুধ কম খাওয়া

✅ বুকের দুধ নবজাতকের হজমশক্তি উন্নত করে এবং সহজে মলত্যাগে সাহায্য করে।
✅ দুধের পরিমাণ কম হলে মল কঠিন হয়ে যেতে পারে।

২. ফর্মুলা দুধের প্রতিক্রিয়া

✅ ফর্মুলা দুধ কিছু শিশুদের জন্য হজম করা কঠিন হতে পারে।
✅ এতে থাকা প্রোটিন বা আয়রন কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে।

৩. পানি বা তরল খাবারের অভাব

✅ নবজাতকরা সাধারণত তরল খাবার গ্রহণ করে, যা তাদের মল নরম রাখতে সাহায্য করে।
✅ পর্যাপ্ত তরল না পেলে মল কঠিন হতে পারে।

৪. অন্ত্রের অনিয়মিত কার্যক্রম

✅ কিছু শিশুর অন্ত্র ধীরগতিতে কাজ করে, যার ফলে মল আটকে যেতে পারে।
✅ এটি সাধারণত বংশগত কারণে হতে পারে।

৫. খাদ্য পরিবর্তন

✅ মা যদি নতুন কোনো খাবার গ্রহণ করেন, তবে তা বুকের দুধের মাধ্যমে শিশুর হজমে প্রভাব ফেলতে পারে।
✅ ফর্মুলা থেকে কঠিন খাবারে পরিবর্তন আনার সময়ও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।

নবজাতকের পায়খানা না হলে লক্ষণ

পেট শক্ত হয়ে যাওয়া।
বুকের দুধ বা ফর্মুলা দুধ খেতে অনীহা।
বেশি কান্না ও অস্থিরতা।
পায়খানা করার সময় শিশুর প্রচণ্ড কষ্ট হওয়া।
মলের রং কালো বা শক্ত হওয়া।

নবজাতকের পায়খানা না হলে করণীয়

১. বুকের দুধ খাওয়ানো বাড়ান

✅ নবজাতকের জন্য বুকের দুধ সবচেয়ে ভালো প্রাকৃতিক প্রতিকার।
✅ শিশুকে ঘন ঘন দুধ খাওয়ালে অন্ত্রের গতি বৃদ্ধি পায়।

২. গরম পানি দিয়ে স্নান করান

✅ গরম পানি শরীরকে আরাম দেয় এবং অন্ত্রের পেশি শিথিল করে।
✅ শিশুকে ৫-১০ মিনিট গরম পানিতে গোসল করানো কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সহায়ক হতে পারে।

৩. শিশুর পেটে হালকা ম্যাসাজ করুন

✅ শিশুর নাভির চারপাশে বৃত্তাকারে হালকা ম্যাসাজ করলে অন্ত্রের গতি উন্নত হয়।
✅ প্রতিদিন ৫-১০ মিনিট ম্যাসাজ করলে পায়খানা সহজ হয়।

৪. শিশুর পায়ের ব্যায়াম করান

সাইকেল মুভমেন্ট শিশুর অন্ত্রকে উদ্দীপিত করে।
✅ শিশুর পা দুটো হাত দিয়ে ধরে ধীরে ধীরে সাইকেল চালানোর মতো নাড়াচাড়া করুন।

৫. ফর্মুলা পরিবর্তন করুন (যদি ফর্মুলা দুধ খায়)

✅ কিছু ফর্মুলা দুধ কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে।
✅ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সহজে হজমযোগ্য ফর্মুলা ব্যবহার করুন।

৬. গরম পানিতে ভেজানো তুলো ব্যবহার করুন

✅ তুলো বা নরম কাপড় গরম পানিতে ভিজিয়ে শিশুর মলদ্বারের চারপাশে হালকা চাপে ব্যবহার করলে এটি মলত্যাগে সহায়তা করতে পারে।

৭. ডাক্তার দেখান (যদি পরিস্থিতি খারাপ হয়)

৪-৫ দিন পায়খানা না হলে বা শিশু যদি প্রচণ্ড কষ্ট পায়, তবে দ্রুত শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
বমি, পেটে প্রচণ্ড ব্যথা, বা মলে রক্ত দেখা গেলে এটি একটি গুরুতর লক্ষণ হতে পারে।

নবজাতকের পায়খানা সহজ করার ঘরোয়া উপায়

💡 মা যদি বেশি আঁশযুক্ত খাবার খান, তবে বুকের দুধের মাধ্যমে শিশুর হজম ভালো হয়।
💡 শিশুর শরীরে তেল ম্যাসাজ করলে অন্ত্র সচল হয়।
💡 পায়খানার সময়ে শিশুকে উঁচু করে ধরুন, এতে অন্ত্রের চাপ ঠিক থাকে।

উপসংহার

নবজাতকের পায়খানা না হলে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। সঠিক পরিচর্যা, বুকের দুধ এবং কিছু সহজ পদ্ধতি মেনে চললে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা সম্ভব। তবে যদি দীর্ঘদিন ধরে শিশুর পায়খানা না হয় বা অতিরিক্ত অস্বস্তি দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top