৪ মাসের শিশুর কাশি হলে করণীয়: কারণ এবং প্রতিকার

শিশুদের কাশি বেশ সাধারণ একটি সমস্যা, বিশেষ করে ৪ মাস বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে। যদিও কাশি মূলত শরীরের একটি প্রতিরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়া, যা শ্বাসনালী পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে, তবে এটি অভিভাবকদের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। আসুন ৪ মাস বয়সী শিশুর কাশির কারণ এবং এর প্রতিকার সম্পর্কে জেনে নেই।

৪ মাস বয়সী শিশুর কাশির কারণসমূহ

raju akon youtube channel subscribtion

১. সর্দি-কাশি বা ঠান্ডা লাগা

শিশুরা প্রায়ই ভাইরাসজনিত সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়। তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এখনও পুরোপুরি গড়ে ওঠেনি বলে তারা খুব সহজেই ভাইরাসের সংস্পর্শে আসে এবং সর্দি-কাশিতে ভুগতে পারে। কাশির সাথে সাধারণত নাক দিয়ে পানি পড়া, হালকা জ্বর ইত্যাদি লক্ষণও দেখা যায়।

২. অ্যালার্জি

শিশুদের মধ্যে অনেক সময় পরিবেশের ধুলো, ময়লা, ধোঁয়া, বা পোষা প্রাণীর লোমের প্রতি সংবেদনশীলতা থাকে, যা কাশির কারণ হতে পারে। অ্যালার্জির কারণে শিশুর কাশির পাশাপাশি নাক দিয়ে পানি পড়া বা চোখে চুলকানি দেখা দিতে পারে।

৩. শুষ্ক বাতাস

শীতকালে বা শুষ্ক আবহাওয়ায় ঘরের বাতাস শুষ্ক হয়ে গেলে শিশুদের শ্বাসনালী শুকিয়ে যায়, যা কাশি সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে শীতকালে গরম বাতাস ব্যবহার করলে বা হিটার চালু থাকলে শ্বাসনালী শুষ্ক হয়ে কাশি বেড়ে যেতে পারে।

৪. অ্যাসিড রিফ্লাক্স

৪ মাস বয়সী শিশুদের মধ্যে অ্যাসিড রিফ্লাক্স হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা। এতে পাকস্থলীর অ্যাসিড উপরের দিকে উঠে এসে কাশি সৃষ্টি করতে পারে। শিশুরা সাধারণত খাওয়ার পরপরই কাশতে শুরু করতে পারে বা শোওয়ার সময় কাশি বাড়তে পারে।

৫. ব্রংকিওলাইটিস

এটি মূলত ভাইরাসজনিত শ্বাসতন্ত্রের একটি সংক্রমণ, যা শিশুদের ব্রংকিওল নামক ছোট শ্বাসনালীকে প্রভাবিত করে। এতে কাশি, শ্বাসকষ্ট, এবং কখনো কখনো বুকে শ্বাসের সময় সাঁই সাঁই শব্দ হতে পারে। এটি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ঠিক করা প্রয়োজন।

৪ মাসের শিশুর কাশির প্রতিকার

১. বায়ু স্যাঁতসেঁতে রাখুন

শিশুর শ্বাসনালী আর্দ্র রাখতে ঘরের বায়ু শুষ্ক না করার চেষ্টা করুন। এজন্য ঘরে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন, যা শ্বাসনালীর শুষ্কতা কমিয়ে শিশুর কাশির পরিমাণ হ্রাস করতে সাহায্য করে।

২. বুকের দুধ বা ফর্মুলা খাওয়ানো

শিশুকে নিয়মিতভাবে বুকের দুধ বা ফর্মুলা দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে। এতে শিশুর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং দেহে আর্দ্রতা বজায় থাকে। কাশি থাকলে বারবার ছোট ছোট খাবার খাওয়াতে পারেন।

৩. নাক পরিষ্কার রাখুন

শিশুর নাক বন্ধ হয়ে গেলে বা সর্দি জমে গেলে কাশি বাড়তে পারে। এজন্য স্যালাইন ন্যাজাল ড্রপ ব্যবহার করে শিশুর নাক পরিষ্কার রাখতে পারেন। নাক পরিষ্কার হলে শিশু আরাম বোধ করবে এবং কাশি কমে আসবে।

৪. মাথা সামান্য উঁচু করে শোয়ান

যদি অ্যাসিড রিফ্লাক্সের কারণে শিশুর কাশি হয়, তবে শিশুকে শোয়ানোর সময় মাথা সামান্য উঁচু করে শোয়ান। এতে করে অ্যাসিড উপরে উঠে আসার সম্ভাবনা কমে এবং কাশিও কমতে পারে।

৫. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন

যদি শিশুর কাশি একটানা কয়েকদিন ধরে চলে, বা অন্য কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, যেমন শ্বাসকষ্ট, বুকে শ্বাসের সময় সাঁই সাঁই শব্দ, বা জ্বর হয়, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এটি কোনো গুরুতর সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে, যা দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন।

কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে?

  • শিশুর কাশি ৩-৫ দিনের মধ্যে না কমলে।
  • শ্বাসকষ্ট হলে বা শ্বাস নিতে কষ্ট হলে।
  • শিশুর ঠোঁট, মুখ, বা নখের রঙ নীলচে হয়ে গেলে।
  • তীব্র জ্বর থাকলে বা খাবার খেতে না চাইলে।

উপসংহার

৪ মাস বয়সী শিশুদের কাশি সাধারণত শীত বা সর্দি-কাশির কারণে হয়। তবে কাশি দীর্ঘস্থায়ী হলে বা এর সাথে অন্য কোনো গুরুতর লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বাড়িতে কিছু সাধারণ প্রতিকার অনুসরণ করে কাশি কমানো যেতে পারে, তবে শিশুর স্বাস্থ্যের বিষয়ে সর্বদা সচেতন থাকা জরুরি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top