গর্ভাবস্থায় মায়েদের শরীরে বিভিন্ন শারীরিক পরিবর্তন ঘটে, যা মা এবং অনাগত শিশুর স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। এর মধ্যে জ্বর একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ, যা গর্ভবতী মায়েদের জন্য উদ্বেগজনক হতে পারে। এই ব্লগে আমরা জানব গর্ভাবস্থায় জ্বরের কারণ, এর প্রভাব, এবং এ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়।
গর্ভাবস্থায় জ্বরের কারণ
গর্ভাবস্থায় জ্বরের মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- ইনফেকশন বা সংক্রমণ:
- ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, যেমন সর্দি-কাশি, ফ্লু বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন।
- ইমিউন সিস্টেমের পরিবর্তন:
- গর্ভাবস্থায় ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়ে, যা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
- হরমোনাল পরিবর্তন:
- হরমোনের ওঠানামার কারণে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
- জলশূন্যতা:
- শরীরে পানির ঘাটতি থাকলে হালকা থেকে মাঝারি জ্বর হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় জ্বরের প্রভাব বাচ্চার উপর
গর্ভাবস্থায় জ্বর হলে এটি শিশুর জন্য কিছু ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
- প্রথম ট্রাইমেস্টারে জ্বরের ঝুঁকি:
- প্রথম তিন মাসে জ্বর থাকলে এটি বাচ্চার মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের গঠনে প্রভাব ফেলতে পারে।
- স্পাইনা বিফিডা বা নিউরাল টিউব ডিফেক্টের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
- উচ্চ তাপমাত্রা:
- ১০২°F (৩৮.৯°C) বা তার বেশি জ্বর থাকলে গর্ভস্থ শিশুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
- প্রিম্যাচিউর লেবার:
- দীর্ঘস্থায়ী জ্বর প্রিম্যাচিউর লেবার বা বাচ্চার অকাল জন্মের কারণ হতে পারে।
- গর্ভপাতের ঝুঁকি:
- জ্বর যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং এর সাথে সংক্রমণ থাকে, তবে গর্ভপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
গর্ভাবস্থায় জ্বর হলে করণীয়
১. শরীরকে ঠান্ডা রাখুন:
- হালকা পোশাক পরুন এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন।
- ঠান্ডা পানির কাপড় দিয়ে শরীর মুছুন।
২. প্রচুর পানি পান করুন:
- জ্বরের সময় শরীর ডিহাইড্রেট হতে পারে, তাই পর্যাপ্ত পানি ও ওরস্যালাইন পান করুন।
৩. পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন:
- স্যুপ, তাজা ফলমূল, এবং সবুজ শাকসবজি খাবেন, যা শরীরের ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করবে।
৪. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
- জ্বর বেশি হলে বা দীর্ঘস্থায়ী হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
- প্যারাসিটামল বা জ্বর কমানোর ওষুধ নিতে হলে অবশ্যই ডাক্তারের অনুমতি নিন।
৫. বিশ্রাম নিন:
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন, যা শরীরকে সুস্থ হতে সাহায্য করবে।
জ্বর প্রতিরোধে করণীয়
- ভ্যাকসিন:
- গর্ভাবস্থায় ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো ভাইরাল ইনফেকশন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন নিন।
- হাত ধোয়া:
- সংক্রমণ এড়াতে বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন:
- খাদ্য ও পানির উৎস পরিষ্কার রাখুন এবং রাস্তার খাবার এড়িয়ে চলুন।
- বয়স অনুযায়ী সঠিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরামর্শ নিন।
উপসংহার
গর্ভাবস্থায় জ্বর হলে তা গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত, কারণ এটি মায়ের পাশাপাশি শিশুর স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় জ্বর নিয়ন্ত্রণে আনা গেলে বড় কোনো ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। যদি জ্বর বেশি সময় ধরে থাকে বা কোনো অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সচেতনতা এবং সঠিক যত্নই হতে পারে নিরাপদ মাতৃত্বের মূল চাবিকাঠি।