নিউমোনিয়া শিশুদের জন্য একটি গুরুতর শ্বাসযন্ত্রজনিত রোগ, যা সময়মতো চিকিৎসা না করালে মারাত্মক হতে পারে। এটি মূলত ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাকজনিত সংক্রমণের ফলে হয়। আসুন জেনে নেওয়া যাক শিশুদের নিউমোনিয়ার লক্ষণ ও এর প্রতিকার।
শিশুদের নিউমোনিয়ার লক্ষণ
শিশুদের নিউমোনিয়া সাধারণ ঠান্ডা-সর্দির মতো শুরু হলেও সময়ের সঙ্গে এর লক্ষণগুলো তীব্র হয়ে ওঠে।
১. প্রাথমিক লক্ষণ:
- সাধারণ ঠান্ডা বা ফ্লুর মতো উপসর্গ
- নাক দিয়ে পানি পড়া
- হালকা জ্বর
- খাওয়ার অরুচি
- ক্লান্তি ও দুর্বলতা
২. গুরুতর লক্ষণ:
- উচ্চ জ্বর: শিশুর শরীরের তাপমাত্রা ১০১°F বা তার বেশি হতে পারে।
- তীব্র কাশি: সাধারণত শুষ্ক বা কফযুক্ত কাশি দেখা যায়।
- শ্বাসকষ্ট: দ্রুত শ্বাস নেওয়া, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া বা বুক দেবে যাওয়া।
- ঠোঁট ও নখ নীলচে হওয়া: শরীরে অক্সিজেনের অভাব হলে এটি হতে পারে।
- খাবার খেতে অনীহা: নিউমোনিয়া হলে শিশুরা সাধারণত কিছু খেতে বা দুধ পান করতে চায় না।
- বমি ও ডায়রিয়া: কিছু ক্ষেত্রে নিউমোনিয়ার কারণে বমি বা পাতলা পায়খানাও হতে পারে।
শিশুদের নিউমোনিয়ার কারণ
নিউমোনিয়া বিভিন্ন কারণে হতে পারে, তবে সাধারণত এটি ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক দ্বারা সংক্রমিত হয়।
- বাকটেরিয়া: স্ট্রেপটোকক্কাস নিউমোনিয়া (Streptococcus pneumoniae) প্রধান কারণ।
- ভাইরাস: ইনফ্লুয়েঞ্জা (Flu virus), রেসপিরেটরি সিন্সাইটিয়াল ভাইরাস (RSV) প্রভৃতি নিউমোনিয়ার অন্যতম কারণ।
- ছত্রাক: দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা থাকলে ছত্রাকজনিত নিউমোনিয়া হতে পারে।
- পরিবেশগত কারণ: ধুলাবালি, ধূমপান, দূষিত বাতাস ও পুষ্টির অভাব শিশুর নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
শিশুদের নিউমোনিয়ার প্রতিকার
১. ঘরোয়া যত্ন ও প্রাথমিক চিকিৎসা:
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম: শিশুকে আরামদায়ক পরিবেশে রাখতে হবে।
- তরল গ্রহণ: প্রচুর পানি, স্যুপ বা মায়ের দুধ খাওয়ানো জরুরি।
- গরম ভাপ (Steam Therapy): শিশুর নাক বন্ধ থাকলে বা শ্বাসকষ্ট হলে গরম পানির ভাপ দিতে পারেন।
- তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ: উচ্চ জ্বর থাকলে হালকা গরম পানিতে গামছা ভিজিয়ে শরীর মুছিয়ে দিতে পারেন।
২. ওষুধ ও চিকিৎসা:
- অ্যান্টিবায়োটিক: ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়ার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়।
- জ্বর কমানোর ওষুধ: প্যারাসিটামল (Paracetamol) জ্বর কমানোর জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
- অক্সিজেন থেরাপি: যদি শিশু শ্বাসকষ্টে ভোগে, তাহলে হাসপাতালে ভর্তি করে অক্সিজেন দেওয়া হতে পারে।
- ভাইরাল নিউমোনিয়ার ক্ষেত্রে: সাধারণত বিশেষ ওষুধের প্রয়োজন হয় না, তবে গুরুতর হলে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দেওয়া হতে পারে।
৩. নিউমোনিয়া প্রতিরোধে করণীয়:
- টিকা: নিউমোনিয়ার অন্যতম কার্যকর প্রতিরোধক হল পিসিভি (PCV) ও Hib টিকা।
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: শিশুর হাত ধোয়া, ঘর পরিষ্কার রাখা, ধুলাবালি ও ধূমপান থেকে দূরে রাখা।
- সুষম খাবার: পুষ্টিকর খাবার, বিশেষ করে ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- শিশুকে ঠান্ডা থেকে রক্ষা করা: শিশুকে অতিরিক্ত ঠান্ডা আবহাওয়া ও ধুলাবালির সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখতে হবে।
কখন ডাক্তার দেখাবেন?
যদি শিশুর –
- শ্বাসকষ্ট বেশি হয়
- অক্সিজেনের অভাবজনিত নীলচে ঠোঁট বা নখ দেখা যায়
- জ্বর ৩ দিনের বেশি থাকে
- খেতে না চায় বা দুর্বল হয়ে পড়ে
তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
উপসংহার
শিশুদের নিউমোনিয়া একটি গুরুতর রোগ হলেও সময়মতো চিকিৎসা নিলে সুস্থ হওয়া সম্ভব। সঠিক যত্ন, চিকিৎসা ও টিকা নেওয়ার মাধ্যমে নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব। শিশুর শ্বাসকষ্ট বা জ্বর বেশি হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।