ডিসোসিয়েটিভ অ্যামনেসিয়া (Dissociative Amnesia) একটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যেখানে ব্যক্তি স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলে, বিশেষ করে নির্দিষ্ট ঘটনার স্মৃতি ভুলে যায়। এটি সাধারণত মানসিক আঘাত, চাপ বা অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে ঘটে। এই অবস্থাটি ব্যক্তি ও তার আশেপাশের মানুষের জন্য খুবই কষ্টকর হতে পারে। তবে, কগনিটিভ-বিহেভিয়োরাল থেরাপি (CBT) এর মাধ্যমে ডিসোসিয়েটিভ অ্যামনেসিয়া মোকাবেলা করার কিছু কার্যকরী কৌশল শেখা যায় যা নিজের উপর প্রয়োগ করা যায়।
ডিসোসিয়েটিভ অ্যামনেসিয়া কীভাবে কাজ করে?
ডিসোসিয়েটিভ অ্যামনেসিয়া সাধারণত মানসিক আঘাত বা ট্রমার পরিণতি হিসেবে ঘটে। এটি এমন এক ধরনের মানসিক অবস্থা যেখানে ব্যক্তি কোনো নির্দিষ্ট সময় বা ঘটনার স্মৃতি ভুলে যায়, এমনকি সেটি গুরুত্বপূর্ণ কিছু হলেও। এটি অস্থায়ী বা স্থায়ী হতে পারে, এবং প্রায়ই এটি ব্যক্তি তার স্মৃতির কিছু অংশ পুনরুদ্ধার করতে পারে।
- কগনিটিভ-বিহেভিয়োরাল থেরাপি (CBT) কী?
কগনিটিভ-বিহেভিয়োরাল থেরাপি (CBT) হলো একটি মানসিক স্বাস্থ্য থেরাপি পদ্ধতি যা ব্যক্তি তার নেতিবাচক চিন্তা এবং আচরণের ধরনকে চিহ্নিত করে এবং সেগুলিকে পরিবর্তন করতে সাহায্য করে। ডিসোসিয়েটিভ অ্যামনেসিয়ার ক্ষেত্রে, CBT ব্যক্তি তার স্মৃতি পুনরুদ্ধার এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক হতে পারে।
ডিসোসিয়েটিভ অ্যামনেসিয়া মোকাবেলায় কিছু CBT টেকনিক
- গ্রাউন্ডিং টেকনিক
গ্রাউন্ডিং টেকনিক হলো এমন একটি পদ্ধতি যা ব্যক্তিকে বর্তমান মুহূর্তে মনোযোগ দিতে সাহায্য করে। ডিসোসিয়েটিভ অ্যামনেসিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই সময় ও স্থান থেকে বিচ্ছিন্ন বোধ করতে পারে। এই টেকনিকটি তাদের বর্তমান মুহূর্তে মনোনিবেশ করতে এবং মানসিকভাবে সংযুক্ত থাকতে সাহায্য করে।কীভাবে প্রয়োগ করবেন:
- একটি আরামদায়ক স্থানে বসুন।
- পাঁচটি জিনিস চিহ্নিত করুন যা আপনি দেখতে পাচ্ছেন।
- চারটি জিনিস চিহ্নিত করুন যা আপনি স্পর্শ করতে পারছেন।
- তিনটি জিনিস চিহ্নিত করুন যা আপনি শুনতে পাচ্ছেন।
- দুইটি জিনিস চিহ্নিত করুন যা আপনি ঘ্রাণ নিতে পারছেন।
- একটি জিনিস চিহ্নিত করুন যা আপনি স্বাদ নিতে পারছেন।
- স্মৃতির পুনরুদ্ধার অনুশীলন
ডিসোসিয়েটিভ অ্যামনেসিয়া থেকে পুনরুদ্ধারের জন্য স্মৃতির পুনরুদ্ধার অনুশীলন খুবই কার্যকরী। এটি CBT এর অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয় যাতে ব্যক্তি তার হারিয়ে যাওয়া স্মৃতির কিছু অংশ পুনরুদ্ধার করতে পারে।কীভাবে প্রয়োগ করবেন:
- একটি নোটবুক বা ডায়েরি রাখুন এবং সেখানে আপনার দিন-রাত্রির অভিজ্ঞতাগুলি লিখে রাখুন।
- প্রতিদিনের ঘটনার ছোটখাটো বিষয়ও লিপিবদ্ধ করুন।
- পুরোনো ছবি, ভিডিও বা অন্যান্য স্মৃতির সামগ্রী ব্যবহার করে স্মৃতির কিছু অংশ পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করুন।
- যখনই কোনো স্মৃতি ফিরে আসে, তা অবিলম্বে লিখে রাখুন।
- আত্ম-সহানুভূতি (Self-Compassion) চর্চা
ডিসোসিয়েটিভ অ্যামনেসিয়ার কারণে ব্যক্তি নিজেকে অপরাধী ভাবতে পারে বা নিজের প্রতি ক্ষোভ অনুভব করতে পারে। আত্ম-সহানুভূতি চর্চা করা CBT এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যেখানে ব্যক্তি নিজেকে মমতা ও সহানুভূতির সাথে দেখার চেষ্টা করে।কীভাবে প্রয়োগ করবেন:
- নিজের সাথে কথা বলুন যেমন আপনি আপনার প্রিয় বন্ধুর সাথে বলতেন।
- নিজেকে ক্ষমা করুন এবং বুঝতে চেষ্টা করুন যে আপনার পরিস্থিতি আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
- প্রতিদিন কিছু সময় নিজের জন্য বরাদ্দ করুন যেখানে আপনি নিজের প্রতি ভালোবাসা ও যত্ন দেখাতে পারেন।
- শ্বাস প্রশ্বাসের অনুশীলন
ডিসোসিয়েটিভ অ্যামনেসিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি প্রায়ই অতিরিক্ত মানসিক চাপ অনুভব করে। শ্বাস প্রশ্বাসের অনুশীলন মানসিক চাপ কমাতে এবং মনকে শান্ত করতে সাহায্য করতে পারে।কীভাবে প্রয়োগ করবেন:
- একটি নিরিবিলি স্থানে বসুন এবং চোখ বন্ধ করুন।
- ধীরে ধীরে নাক দিয়ে শ্বাস নিন এবং মনে মনে চার পর্যন্ত গুনুন।
- শ্বাস ধরে রাখুন এবং আবার চার পর্যন্ত গুনুন।
- ধীরে ধীরে মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন এবং আবার চার পর্যন্ত গুনুন।
- এটি কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করুন যতক্ষণ না আপনার মন শান্ত হয়ে যায়।
- কগনিটিভ রি-ফ্রেমিং (Cognitive Reframing)
ডিসোসিয়েটিভ অ্যামনেসিয়া প্রায়ই নেতিবাচক চিন্তাধারার সঙ্গে যুক্ত থাকে। কগনিটিভ রি-ফ্রেমিং টেকনিক ব্যক্তি তার নেতিবাচক চিন্তাগুলোকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে রূপান্তর করতে শেখায়।কীভাবে প্রয়োগ করবেন:
- আপনার নেতিবাচক চিন্তা চিহ্নিত করুন।
- সেই চিন্তাগুলোর পেছনের কারণ বিশ্লেষণ করুন।
- চিন্তা পরিবর্তনের উপায় ভাবুন এবং সেগুলো ইতিবাচক চিন্তায় রূপান্তর করুন।
- প্রতিদিন এই প্রক্রিয়াটি চর্চা করুন এবং নিজের চিন্তায় পরিবর্তন লক্ষ্য করুন।
উপসংহার
ডিসোসিয়েটিভ অ্যামনেসিয়া একটি জটিল মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হলেও, কগনিটিভ-বিহেভিয়োরাল থেরাপির মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। উপরের টেকনিকগুলো নিয়মিত চর্চা করলে, ব্যক্তি নিজের অবস্থার উন্নতি দেখতে পাবেন। তবে, যদি পরিস্থিতি খুব জটিল হয়ে যায়, তাহলে একজন পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সহায়তা নেয়া উচিত।