অটিজম, বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (ASD), একটি নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার যা শিশুদের সামাজিক মিথস্ক্রিয়া, ভাষাগত যোগাযোগ, এবং আচরণগত বিকাশে প্রভাব ফেলে। অটিজমকে একটি ডিসএবিলিটি (প্রতিবন্ধকতা) হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তবে এটি শুধুমাত্র নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা ঠিক নয়। অনেক ক্ষেত্রেই অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিরা ভিন্নধর্মী সক্ষমতা এবং বিশেষ গুণাবলীর অধিকারী হতে পারেন, যা তাদের অনন্যভাবে সক্ষম করে তোলে।
১. অটিজম কীভাবে ডিসএবিলিটি?
অটিজমকে “ডিসএবিলিটি” হিসেবে বিবেচিত করার প্রধান কারণ হলো এটি ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনের কিছু কার্যকলাপে সীমাবদ্ধতা আনতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিম্নলিখিত চ্যালেঞ্জগুলো সম্মুখীন হন:
- সামাজিক যোগাযোগে সমস্যা: অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তি প্রায়শই অন্যদের সাথে সামাজিক যোগাযোগ স্থাপন করতে সমস্যা অনুভব করেন। তারা চোখের সংযোগ করা, মুখের অভিব্যক্তি বোঝা, এবং কথোপকথনে যোগ দেওয়া কঠিন মনে করতে পারেন।
- ভাষাগত দেরি: অনেক অটিজম আক্রান্ত শিশুর মধ্যে ভাষার দেরিতে বিকাশ দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে, তারা কথা বলা শিখতে দেরি করে বা মৌখিকভাবে যোগাযোগ করতে অক্ষম থাকে।
- আচরণগত চ্যালেঞ্জ: পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ, রুটিনে পরিবর্তনে অসুবিধা, বা সংবেদনশীল সংবেদনশীলতা অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তির আচরণে প্রকাশ পায়।
২. অটিজম একটি স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার:
অটিজমকে “স্পেকট্রাম” হিসেবে বিবেচনা করা হয় কারণ এর লক্ষণ ও চ্যালেঞ্জগুলি একজন ব্যক্তি থেকে অন্য জনের মধ্যে ভিন্ন হতে পারে। কোনো অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তি খুব হালকা উপসর্গ নিয়ে জীবনযাপন করতে পারেন, যেখানে অন্য কেউ গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। তাই অটিজম একটি গঠনশীল ডিসএবিলিটি যেখানে কিছু ক্ষেত্রে ব্যক্তি স্বাধীনভাবে চলতে সক্ষম, অন্য ক্ষেত্রে তাদের নির্দিষ্ট সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে।
৩. অটিজম কি সবক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধতা?
অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়শই সাধারণ বা অসাধারণ ক্ষমতার অধিকারী হতে পারেন। যেমন:
- উচ্চ মনোযোগ: কিছু অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তি নির্দিষ্ট বিষয় বা কাজের প্রতি অসাধারণ মনোযোগ দিতে পারেন, যা তাদের দক্ষতা হিসেবে বিকাশ লাভ করতে পারে।
- তথ্য প্রক্রিয়াকরণের ভিন্ন পদ্ধতি: তারা ভিজ্যুয়াল বা প্যাটার্ন-ভিত্তিক তথ্য প্রক্রিয়াকরণে পারদর্শী হতে পারেন।
- সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী চিন্তা: কিছু ক্ষেত্রে, অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তি খুব সৃজনশীল বা উদ্ভাবনী চিন্তাধারা প্রদর্শন করতে পারেন।
৪. অটিজমের আইনগত সংজ্ঞা:
বিভিন্ন দেশে অটিজমকে ডিসএবিলিটির আওতায় বিবেচনা করা হয়। উদাহরণস্বরূপ:
- যুক্তরাষ্ট্রে, “ইন্ডিভিজুয়ালস উইথ ডিজএবিলিটিজ এডুকেশন অ্যাক্ট” (IDEA) এর অধীনে অটিজমকে একটি ডিসএবিলিটি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, যা বিশেষ শিক্ষাগত সহায়তা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করে।
- বাংলাদেশে, অটিজমের মতো নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডারগুলোকে সরকারিভাবে ডিসএবিলিটি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, এবং এই ক্ষেত্রে বিশেষায়িত শিক্ষা এবং চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
৫. অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তির জীবনে সহায়তা:
অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তি অনেক ক্ষেত্রেই সফলভাবে জীবনে এগিয়ে যেতে পারেন যদি তারা প্রয়োজনীয় সহায়তা পান। এর মধ্যে রয়েছে:
- থেরাপি: আচরণগত থেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, এবং স্পিচ থেরাপি অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তির যোগাযোগ এবং সামাজিক দক্ষতা উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে।
- শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ: বিশেষায়িত শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিদের দক্ষতা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায়।
উপসংহার
অটিজম একটি ডিসএবিলিটি হিসেবে বিবেচনা করা হলেও, এটি ব্যক্তি বা সমাজের জন্য বাধা নয়। উপযুক্ত সহায়তা, শিক্ষা, এবং থেরাপির মাধ্যমে অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিরা তাদের জীবনকে সফল এবং পূর্ণাঙ্গ করতে পারেন। অটিজমের প্রতিটি পর্যায়ে থাকা ব্যক্তিদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব এবং সমর্থন তাদের জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক হতে পারে।