বর্ডারলাইন পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার (BPD) একটি গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যা আবেগ, আচরণ এবং সম্পর্কের ক্ষেত্রে চরম অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করে। এই ডিজঅর্ডারের ফলে জীবনযাপনে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট রাজু আকন আপনাদের জানাচ্ছেন BPD এর প্রধান উপসর্গগুলো।
BPD এর প্রধান উপসর্গ
- চরম আবেগের পরিবর্তন:
- আবেগ দ্রুত পরিবর্তন হয়।
- এক মুহূর্তে আনন্দিত বা উত্তেজিত, আরেক মুহূর্তে বিষণ্ণ বা রাগান্বিত।
- অনিশ্চিত আত্ম-পরিচয়:
- অস্থিতিশীল সম্পর্ক:
- সম্পর্কের ক্ষেত্রে চরম পরিবর্তন।
- কখনও কাউকে অত্যধিক ভালোবাসা, আবার কখনও তাদের থেকে দূরে সরে যাওয়ার প্রবণতা।
- আত্ম-ধ্বংসাত্মক আচরণ:
- আত্মহানিমূলক চিন্তা বা আচরণ।
- আত্মহত্যার চেষ্টা, নিজেকে আঘাত করা, বা বিপজ্জনক আচরণ।
- খালি বা শুন্যতা অনুভূতি:
- অভ্যন্তরীণ শুন্যতা বা খালি অনুভব করা।
- মানসিক স্থবিরতা বা নিরর্থকতার অনুভূতি।
- ক্রোধের নিয়ন্ত্রণহীনতা:
- তীব্র ক্রোধ বা রাগ।
- ক্রোধ নিয়ন্ত্রণে সমস্যার কারণে সম্পর্কের ক্ষতি হওয়া।
- পরিত্যাগের ভয়:
- তীব্র পরিত্যাগের ভয়।
- পরিত্যাগ এড়াতে চরম আচরণ করা।
- প্রকৃত বা কল্পিত সমস্যার প্রতিক্রিয়া:
- প্রকৃত বা কল্পিত সমস্যার উপর চরম প্রতিক্রিয়া।
- সামান্য সমস্যা বড় করে দেখা।
- ইম্পালসিভ আচরণ:
- ইম্পালসিভ বা হঠকারী আচরণ।
- মাদক ব্যবহার, অ্যালকোহল সেবন, অতিরিক্ত খরচ, বা ঝুঁকিপূর্ণ যৌন আচরণ।
BPD এর উপসর্গ থেকে মুক্তি পেতে করণীয়
- ডায়ালেক্টিক বিহেভিয়ার থেরাপি (DBT):
- DBT হল একটি প্রমাণিত থেরাপি পদ্ধতি যা BPD রোগীদের জন্য অত্যন্ত কার্যকর। এটি আবেগ নিয়ন্ত্রণ, ইন্টারপারসোনাল স্কিল, এবং মানসিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
- কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (CBT):
- CBT রোগীর নেতিবাচক চিন্তা এবং আচরণ পরিবর্তন করতে সহায়ক।
- মেডিকেশন:
- প্রয়োজন অনুযায়ী মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ন্ত্রণে ঔষধ গ্রহণ করা যেতে পারে।
- গ্রুপ থেরাপি:
- অন্যান্য রোগীদের সাথে থেরাপি সেশন অংশগ্রহণ এবং সমর্থন পাওয়া।
- লাইফস্টাইল পরিবর্তন:
- স্বাস্থ্যকর জীবনধারা, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং পর্যাপ্ত ঘুম মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সহায়ক।
- সমর্থন ব্যবস্থা:
- পরিবার, বন্ধু, এবং মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারদের সমর্থন গ্রহণ করা।
উপসংহার
বর্ডারলাইন পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার (BPD) একটি জটিল মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, তবে সঠিক চিকিৎসা এবং সমর্থনের মাধ্যমে এই উপসর্গগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যদি আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ এই সমস্যার শিকার হন, তবে দয়া করে একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন।