ঘুমের মধ্যে খিঁচুনি বা নকটর্নাল সিজার একটি সাধারণ সমস্যা যা ঘুমের সময় ঘটে। এটি মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। এই ধরনের খিঁচুনির পিছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে এবং মুক্তি পাওয়ার জন্য কিছু কার্যকর উপায় রয়েছে।
ঘুমের মধ্যে খিঁচুনির লক্ষণসমূহ
- হঠাৎ শরীর কাঁপানো: ঘুমের মধ্যে হঠাৎ করে শরীর কাঁপানো বা ঝাঁকানো খিঁচুনির প্রধান লক্ষণ।
- অসচেতনতা: খিঁচুনির সময় ব্যক্তি সচেতন থাকে না এবং সাধারণত খিঁচুনির পর ঘটনাটি মনে করতে পারে না।
- শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা: খিঁচুনির সময় শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হতে পারে।
- জিভ কামড়ানো: খিঁচুনির সময় অনেক সময় জিভ কামড়ানোর ঘটনা ঘটে।
- মূত্রাশয় নিয়ন্ত্রণ হারানো: খিঁচুনির সময় মূত্রাশয় নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারে।
ঘুমের মধ্যে খিঁচুনির কারণসমূহ
- ইপিলেপসি: ইপিলেপসি রোগীদের মধ্যে ঘুমের সময় খিঁচুনি সাধারণ।
- ঘুমের অভাব: পর্যাপ্ত ঘুম না হলে খিঁচুনির আশঙ্কা বেড়ে যায়।
- মস্তিষ্কের আঘাত: মস্তিষ্কের কোনো আঘাত বা আঘাতের পুরনো ক্ষত খিঁচুনির কারণ হতে পারে।
- অতিরিক্ত স্ট্রেস: মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ খিঁচুনির সম্ভাবনা বাড়ায়।
- অ্যালকোহল এবং মাদকদ্রব্য: অ্যালকোহল এবং কিছু মাদকদ্রব্য খিঁচুনির ঝুঁকি বাড়ায়।
- জেনেটিক ফ্যাক্টর: পরিবারের মধ্যে ইপিলেপসি বা খিঁচুনির ইতিহাস থাকলে এই সমস্যা হতে পারে।
মুক্তি পাওয়ার উপায়
- চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া: খিঁচুনির সমস্যা থাকলে অবশ্যই একজন নিউরোলজিস্ট বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তারা সঠিক নির্ণয় করে উপযুক্ত চিকিৎসা পরিকল্পনা প্রদান করতে পারেন।
- অ্যান্টি-সিজার মেডিকেশন: চিকিৎসক যদি ইপিলেপসি নির্ণয় করেন, তবে অ্যান্টি-সিজার ওষুধ নিতে হবে যা খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- পর্যাপ্ত ঘুম: নিয়মিত এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে।
- স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট: মানসিক চাপ কমানোর জন্য রিলাক্সেশন টেকনিক, মেডিটেশন, এবং যোগব্যায়াম করতে পারেন।
- স্বাস্থ্যকর জীবনধারা: স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং অ্যালকোহল এবং মাদকদ্রব্য থেকে দূরে থাকা উচিত।
- রুটিন ফলো করা: ঘুমানোর আগে একটি নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলা যেমন বই পড়া, হালকা সঙ্গীত শোনা ইত্যাদি খিঁচুনি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে খিঁচুনির কারণগুলি নির্ণয় করা এবং উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
উপসংহার
ঘুমের মধ্যে খিঁচুনি একটি সাধারণ সমস্যা হলেও সঠিক চিকিৎসা এবং জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অ্যান্টি-সিজার মেডিকেশন, পর্যাপ্ত ঘুম, এবং মানসিক চাপ কমানোর উপায় গ্রহণ করে খিঁচুনির ঝুঁকি কমানো যায়। যদি আপনার বা আপনার পরিচিত কারো ঘুমের মধ্যে খিঁচুনির সমস্যা থাকে, তবে দয়া করে একজন নিউরোলজিস্টের সাথে পরামর্শ করুন।