বাহরাইনে কাজ করতে আসা বাংলাদেশি প্রবাসীদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হল পরিবার থেকে দূরে থাকা। পরিবার থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে বসবাস করতে গিয়ে অনেক প্রবাসী মানসিক চাপ, উদ্বেগ, একাকীত্ব এবং হতাশার মুখোমুখি হন। পরিবার থেকে দূরে থাকার মানসিক চাপ দূর করা এবং সঠিকভাবে মানসিক সুস্থতা বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্লগ পোস্টে, আমরা বাহরাইনে পরিবার থেকে দূরে থাকার মানসিক চাপ মোকাবেলা করার কিছু কার্যকরী উপায় নিয়ে আলোচনা করব।
বাহরাইনে পরিবার থেকে দূরে থাকার মানসিক চাপের কারণ
১. একাকীত্ব এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা
প্রথম এবং সবচেয়ে বড় কারণ হল একাকীত্ব। পরিবার থেকে দূরে থাকলে, অনেক সময় প্রবাসীরা নিজেদের একা অনুভব করেন। তাদের কাছে পরিবারের সদস্যদের সান্নিধ্য, সমর্থন এবং ভালোবাসা না থাকায় তারা মানসিকভাবে একাকী এবং বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। এই একাকীত্ব তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
২. পারিবারিক উদ্বেগ
প্রবাসী জীবন মানেই পরিবারের সদস্যদের জন্য উদ্বেগের মধ্যে থাকা। পরিবারের সদস্যদের সুস্থতা, তাদের নিরাপত্তা এবং অন্যান্য সমস্যা নিয়ে দুশ্চিন্তা অনেক সময় মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। বিশেষ করে যারা পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী, তাদের মধ্যে আর্থিক চাপ এবং পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধতার অনুভূতি বাড়ে, যা তাদের মানসিক চাপকে তীব্র করে।
৩. কর্মস্থলের চাপ
বাহরাইনে প্রবাসী কর্মীদের অনেক সময় কর্মস্থলে অতিরিক্ত চাপ, দীর্ঘ কাজের সময় এবং বিশ্রামের অভাব থাকে। এই কাজের চাপ যখন পারিবারিক উদ্বেগের সাথে মিলে যায়, তখন মানসিক চাপ বেড়ে যায়। কর্মক্ষেত্রের চাপ, সঠিক পারিশ্রমিক না পাওয়া, এবং স্বাভাবিক জীবনের জন্য সময় না পাওয়ার কারণে হতাশা সৃষ্টি হতে পারে।
৪. দেশে ফিরতে না পারার হতাশা
অনেক প্রবাসী পরিবারকে দেখতে বা দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় বা অর্থ পায় না। এই হতাশা এবং অস্থিরতা তাদের মধ্যে মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। যখন পরিবারের সদস্যদের দেখা হয় না, তখন প্রবাসীরা নিজেদের অনুভব করতে পারেন যে তারা এক ধরনের বিচ্ছিন্ন অবস্থানে রয়েছেন।
বাহরাইনে পরিবার থেকে দূরে থাকার মানসিক চাপ মোকাবেলা করার উপায়
১. প্রযুক্তি ব্যবহার করে যোগাযোগ রাখা
আজকাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিবারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা খুবই সহজ। ভিডিও কল, হোয়াটসঅ্যাপ, এবং অন্যান্য যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে প্রবাসীরা তাদের পরিবারকে প্রায় প্রতিদিন দেখতে এবং কথা বলতে পারেন। এতে একাকীত্ব কিছুটা কমবে এবং পরিবারের সাথে সম্পর্ক বজায় থাকবে। প্রযুক্তি পরিবার থেকে দূরে থাকার মানসিক চাপ কমানোর জন্য একটি কার্যকরী উপায়।
২. সামাজিক সমর্থন গঠন করা
বাহরাইনে অন্যান্য বাংলাদেশি প্রবাসীদের সাথে সামাজিক সম্পর্ক গড়া মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। বাহরাইনে স্থানীয় কমিউনিটি বা বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো, একে অপরকে সমর্থন দেওয়া এবং আপনার অনুভূতিগুলি ভাগ করা মানসিকভাবে সহায়ক হতে পারে। সামাজিক সমর্থন প্রবাসীদের মানসিক চাপ কমানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
৩. নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করা
শারীরিক ব্যায়াম মানসিক চাপ কমানোর জন্য খুবই কার্যকরী। নিয়মিত হাঁটা, দৌড়ানো, যোগব্যায়াম বা জিমে কাজ করা শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতাও বজায় রাখে। ব্যায়াম শরীরের মধ্যে এন্ডোরফিন নামে একটি রাসায়নিক উৎপন্ন করে, যা মনকে শান্ত রাখে এবং উদ্বেগ কমায়। তাই দৈনন্দিন জীবনে শারীরিক ব্যায়াম অন্তর্ভুক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৪. মনোযোগী থেরাপি এবং কাউন্সেলিং সেবা গ্রহণ
যখন পরিবার থেকে দূরে থাকার কারণে মানসিক চাপ বেড়ে যায়, তখন প্রফেশনাল মানসিক স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করা জরুরি। কাউন্সেলিং সেশন বা থেরাপি প্রবাসীদের তাদের অনুভূতিগুলি ভাগ করে সঠিকভাবে মোকাবেলা করতে সাহায্য করতে পারে। আমি, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট রাজু আকন, আপনাকে নিরাপদ এবং গোপনীয় পরিবেশে মানসিক সেবা প্রদান করতে প্রস্তুত আছি। আপনি যেখানেই থাকুন না কেন, অনলাইনে কাউন্সেলিং সেবা নিতে এখানে যোগাযোগ করুন।
৫. আত্ম-সচেতনতা এবং ইতিবাচক মনোভাব রাখা
পরিবার থেকে দূরে থাকার সময় প্রবাসীদের উচিত নিজেদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব রাখা। আত্মবিশ্বাস এবং ধৈর্য ধারণ করে পরিস্থিতির প্রতি সচেতন থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারকে সহায়তা করার জন্য আপনি যেটা করছেন, তা আপনার কাছে মূল্যবান এবং আপনি তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। এই সচেতনতা আপনার মানসিক শান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
৬. নিজের জন্য সময় বের করা
নিজের জন্য কিছু সময় বের করে প্রবাসীরা মানসিক শান্তি পাবেন। নিজের পছন্দের কাজ করা, বই পড়া, গান শোনা, বা প্রাকৃতিক পরিবেশে কিছু সময় কাটানো মানসিক চাপ কমানোর একটি ভালো উপায় হতে পারে। নিজের ভালো থাকার জন্য একটু সময় বের করা খুবই জরুরি।
বাহরাইনে পরিবার থেকে দূরে থাকা অনেক সময় মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে, তবে সঠিক সমাধান এবং মনোযোগী কৌশল অনুসরণ করলে এই চাপ কমানো সম্ভব। প্রযুক্তির সাহায্যে যোগাযোগ রাখা, সামাজিক সমর্থন গঠন, শারীরিক ব্যায়াম করা, এবং প্রফেশনাল কাউন্সেলিং সেবা গ্রহণের মাধ্যমে আপনি আপনার মানসিক চাপ কমাতে পারেন। আমি, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট রাজু আকন, আপনাকে নিরাপদ এবং গোপনীয় পরিবেশে মানসিক সেবা প্রদান করতে প্রস্তুত আছি। আপনি যদি আপনার মানসিক চাপ বা উদ্বেগ নিয়ে সাহায্য চান, তবে এখানে যোগাযোগ করুন।