পাইলস, যা হেমোরয়েড নামেও পরিচিত, একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা যা মলদ্বারের রক্তনালীগুলোর ফোলাভাব বা প্রসারণের কারণে ঘটে। এটি মূলত দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্য, অতিরিক্ত চাপ বা অসুস্থ জীবনযাত্রার কারণে হতে পারে। এই সমস্যা পুরুষ ও নারী উভয়ের মধ্যেই দেখা যায় এবং এটি কখনও কখনও ব্যথাযুক্ত হতে পারে।
পাইলসের কারণ
পাইলস সাধারণত নিম্নলিখিত কারণগুলোর জন্য হয়:
- দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্য – কঠিন মলত্যাগের কারণে অতিরিক্ত চাপ পড়ে।
- ডায়রিয়া – দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া থাকলে মলদ্বারে চাপ সৃষ্টি হয়।
- গর্ভাবস্থা – নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ওজন এবং রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধির কারণে পাইলস হতে পারে।
- অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা – শরীরের অতিরিক্ত ওজন মলদ্বারের রক্তনালীর ওপর চাপ সৃষ্টি করে।
- অতিরিক্ত সময় ধরে বসে থাকা – যারা দীর্ঘ সময় ধরে বসে কাজ করেন, তারা পাইলসের ঝুঁকিতে পড়েন।
- অতিরিক্ত শক্তিশালী ব্যায়াম – ভারোত্তোলনের মতো উচ্চ-চাপযুক্ত ব্যায়াম পাইলসের কারণ হতে পারে।
পাইলসের লক্ষণ
পাইলসের লক্ষণ গুলো সাধারণত নিম্নরূপ:
- মলদ্বারে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া অনুভব করা।
- মলত্যাগের সময় বা পরে রক্তপাত হওয়া।
- মলদ্বারের আশেপাশে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করা।
- মলদ্বার ফুলে যাওয়া বা সেখানে ছোট ছোট গুটি অনুভব করা।
পাইলসের ধরণ
পাইলস সাধারণত দুই ধরনের হতে পারে:
- অভ্যন্তরীণ পাইলস – এটি মলদ্বারের ভেতরে হয় এবং সাধারণত ব্যথাহীন হয়, তবে মাঝে মাঝে রক্তপাত দেখা যায়।
- বাহ্যিক পাইলস – এটি মলদ্বারের বাইরের অংশে দেখা যায় এবং এটি অনেক সময় ব্যথাজনিত হতে পারে।
পাইলসের চিকিৎসা
ঘরোয়া প্রতিকার:
- প্রচুর পানি পান করা এবং আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া।
- অতিরিক্ত সময় ধরে বসে না থাকা।
- গরম পানির সিট বাথ নেওয়া।
- নারকেল তেল বা অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করা।
- ক্যাফেইন ও মসলাযুক্ত খাবার এড়ানো।
চিকিৎসার পদ্ধতি:
- ব্যথা ও প্রদাহ কমানোর জন্য ওষুধ গ্রহণ।
- গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য বা অতিরিক্ত চাপ কমানোর জন্য ফাইবার সাপ্লিমেন্ট নেওয়া।
- মার্জিত পদ্ধতিতে সার্জারি (যেমন রাবার ব্যান্ড লিগেশন বা ইনফ্রারেড থেরাপি)।
- গুরুতর ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ফোলা অংশ অপসারণ।
পাইলস প্রতিরোধের উপায়
- খাদ্যতালিকায় প্রচুর আঁশ যুক্ত খাবার রাখুন।
- নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করুন।
- দীর্ঘক্ষণ ধরে বসে থাকা এড়িয়ে চলুন।
- প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
উপসংহার
পাইলস একটি অস্বস্তিকর ও কষ্টদায়ক সমস্যা হলেও এটি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চললে এই সমস্যা অনেকাংশে কমানো যায়। তবে গুরুতর অবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।