মাসিক বন্ধ না হলে করণীয়: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

মাসিক বা পিরিয়ড নারীদের স্বাস্থ্যের একটি স্বাভাবিক ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে কখনো কখনো মাসিক অনিয়মিত বা বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যা উদ্বেগজনক হতে পারে। মাসিক বন্ধ হওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, যেমন হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, গর্ভধারণ, মানসিক চাপ বা ওজন পরিবর্তন। সময়মতো উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এটি দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ ও করণীয় সম্পর্কে জানা জরুরি।

মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ

মাসিক বন্ধ হওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে প্রধান কারণগুলো হলো:

১. গর্ভধারণ

  • যদি মাসিক নির্দিষ্ট সময়ে না হয় এবং পূর্বে অনিয়মিত না থাকে, তবে প্রথমে গর্ভধারণ পরীক্ষা করা উচিত।
  • গর্ভধারণের অন্যান্য লক্ষণ যেমন বমি বমি ভাব, ক্লান্তি ও স্তনের ব্যথা থাকতে পারে।

২. মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা

  • অতিরিক্ত মানসিক চাপ শরীরে কর্টিসল হরমোনের বৃদ্ধি ঘটায়, যা মাসিক চক্র ব্যাহত করতে পারে।
  • পড়াশোনা, চাকরি, পারিবারিক সমস্যা বা অন্য যেকোনো মানসিক চাপে মাসিক বন্ধ হতে পারে।

৩. ওজন পরিবর্তন

  • অতিরিক্ত ওজন বেড়ে গেলে বা হঠাৎ করে ওজন কমে গেলে মাসিক চক্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS) ওজন বৃদ্ধির ফলে মাসিক অনিয়মিত করতে পারে।

    raju akon youtube channel subscribtion

৪. হরমোনের ভারসাম্যহীনতা

  • থাইরয়েড সমস্যা (হাইপোথাইরয়েডিজম বা হাইপারথাইরয়েডিজম) মাসিক বন্ধের কারণ হতে পারে।
  • প্রোল্যাকটিন হরমোনের মাত্রা বেড়ে গেলে মাসিক অনিয়মিত হতে পারে।

৫. অতিরিক্ত ব্যায়াম

  • পেশাদার ক্রীড়াবিদ বা অত্যধিক শারীরিক পরিশ্রমকারীদের মধ্যে মাসিক বন্ধ হওয়ার সমস্যা দেখা যায়।
  • শরীরে কম ফ্যাটের পরিমাণ থাকলে এস্ট্রোজেন উৎপাদন কমে যায়, ফলে মাসিক চক্র বাধাগ্রস্ত হয়।

৬. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

  • জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি, স্টেরয়েড, মানসিক রোগের ওষুধ এবং কিছু অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট মাসিক চক্রে প্রভাব ফেলতে পারে।

৭. মেনোপজ

  • ৪৫-৫০ বছর বয়সের মধ্যে নারীদের মাসিক বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যা মেনোপজের লক্ষণ।
  • মেনোপজের আগে মাসিক অনিয়মিত হতে পারে।

৮. অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা

  • PCOS, ডায়াবেটিস, এন্ডোমেট্রিওসিস, কিডনি সমস্যা, এবং কিছু টিউমারের কারণে মাসিক বন্ধ হতে পারে।

মাসিক বন্ধ হলে করণীয়

১. গর্ভধারণ পরীক্ষা করুন

  • মাসিক বন্ধ হলে প্রথমে গর্ভধারণ পরীক্ষার জন্য হোম প্রেগনেন্সি টেস্ট করুন।
  • নিশ্চিত হতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

২. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন

  • মানসিক চাপ কমাতে মেডিটেশন ও যোগব্যায়াম করুন।
  • পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম নিন।
  • ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন।

৩. সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন

  • পুষ্টিকর খাবার খান, যেমন শাকসবজি, ফলমূল, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং প্রোটিন।
  • অত্যধিক ফাস্ট ফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।

৪. নিয়মিত ব্যায়াম করুন

  • অতিরিক্ত ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন এবং ভারসাম্যপূর্ণ শারীরিক কার্যক্রম বজায় রাখুন।
  • নিয়মিত হাঁটা, সাইক্লিং বা যোগব্যায়াম করুন।

৫. ডাক্তারের পরামর্শ নিন

  • যদি মাসিক তিন মাসের বেশি বন্ধ থাকে, তবে গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শ নিন।
  • হরমোন পরীক্ষা ও অন্যান্য স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে সমস্যার মূল কারণ নির্ণয় করুন।

৬. হরমোন থেরাপি বা চিকিৎসা

  • হরমোনের ভারসাম্য রক্ষার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করুন।
  • PCOS থাকলে মেটফরমিন বা অন্যান্য ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে?

  • যদি মাসিক তিন মাস বা তার বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকে।
  • যদি মাসিক বন্ধের সাথে তীব্র পেট ব্যথা বা অস্বাভাবিক রক্তপাত হয়।
  • যদি হঠাৎ ওজন বেড়ে যায় বা হরমোনজনিত সমস্যা দেখা দেয়।
  • যদি প্রেগনেন্সি টেস্ট নেগেটিভ আসে এবং তবুও মাসিক না হয়।

উপসংহার

মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া স্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত হতে পারে এবং এটি অবহেলা করা উচিত নয়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা অনুসরণ করলে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। যদি মাসিক বন্ধ হয়ে যায় এবং স্বাভাবিক হতে দেরি হয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top