রক্তে হিমোগ্লোবিনের কাজ কি: আমাদের শরীরের অক্সিজেন পরিবহন প্রক্রিয়া

রক্তে হিমোগ্লোবিনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি প্রোটিন যা রক্তের লোহিত কণিকায় (Red Blood Cells) থাকে এবং শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করে। হিমোগ্লোবিন ছাড়া শরীর সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। এই ব্লগে আমরা জানবো হিমোগ্লোবিন কীভাবে কাজ করে এবং শরীরের জন্য এটি কেন অপরিহার্য।

হিমোগ্লোবিন কী?

হিমোগ্লোবিন একটি জটিল প্রোটিন যা লোহিত কণিকায় পাওয়া যায়। এর মূল কাজ হলো শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন পরিবহন করা এবং শরীর থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড বের করে ফেলা।

  • গঠন: হিমোগ্লোবিনে আয়রন (Iron) এবং হিম (Heme) গ্রুপ থাকে যা অক্সিজেনের সাথে যুক্ত হয়।
  • রঙ: হিমোগ্লোবিনের উপস্থিতির কারণে রক্তের লাল রং হয়।

রক্তে হিমোগ্লোবিনের কাজ

১. অক্সিজেন পরিবহন

হিমোগ্লোবিনের প্রধান কাজ হলো ফুসফুস থেকে অক্সিজেন সংগ্রহ করা এবং তা শরীরের প্রতিটি কোষে পৌঁছে দেওয়া।

  • ফুসফুসে অক্সিজেন যুক্ত হওয়া: হিমোগ্লোবিন ফুসফুসে অক্সিজেনের সাথে যুক্ত হয়ে অক্সিহিমোগ্লোবিন তৈরি করে।
  • কোষে অক্সিজেন সরবরাহ: এটি প্রতিটি কোষে অক্সিজেন ছেড়ে দেয়, যা এনার্জি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন।

২. কার্বন ডাই-অক্সাইড অপসারণ

শরীরের কোষে অক্সিজেন ব্যবহার হওয়ার পর তৈরি হওয়া কার্বন ডাই-অক্সাইড ফুসফুসে নিয়ে আসা হিমোগ্লোবিনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এটি কার্বন ডাই-অক্সাইড সংগ্রহ করে ফুসফুসে নিয়ে আসে, যা আমরা শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে বের করি।

raju akon youtube channel subscribtion

৩. রক্তের pH নিয়ন্ত্রণ

হিমোগ্লোবিন রক্তের অম্লত্ব বা pH নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এটি রক্তকে সামান্য ক্ষারীয় অবস্থায় রাখে, যা শরীরের প্রক্রিয়াগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা

শরীরের সুস্থতার জন্য রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকা প্রয়োজন।

  • পুরুষদের জন্য: ১৩.৮ থেকে ১৭.২ গ্রাম/ডেসিলিটার।
  • মহিলাদের জন্য: ১২.১ থেকে ১৫.১ গ্রাম/ডেসিলিটার।
  • শিশুদের জন্য: ১১ থেকে ১৬ গ্রাম/ডেসিলিটার।

হিমোগ্লোবিনের ঘাটতির প্রভাব

১. রক্তাল্পতা (Anemia)

হিমোগ্লোবিন কম থাকলে রক্তাল্পতা হয়। এর লক্ষণ:

  • দুর্বলতা ও ক্লান্তি।
  • শ্বাসকষ্ট।
  • মাথা ঘোরা।

২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া

পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন না থাকলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়।

৩. হার্টের কার্যক্ষমতা হ্রাস

কম হিমোগ্লোবিন হৃদযন্ত্রের ওপর চাপ বাড়ায় এবং হার্টের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়।

হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর উপায়

১. আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া

হিমোগ্লোবিন তৈরির জন্য আয়রন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আয়রন সমৃদ্ধ খাবার:

  • পালং শাক।
  • কলা।
  • লাল মাংস।
  • ডিম।

২. ভিটামিন সি গ্রহণ

ভিটামিন সি শরীরে আয়রনের শোষণ বাড়ায়। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার:

  • কমলা।
  • লেবু।
  • পেয়ারা।

৩. ফলিক অ্যাসিড ও ভিটামিন বি১২

ফলিক অ্যাসিড ও ভিটামিন বি১২ হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সহায়ক। এগুলো পাওয়া যায়:

  • ডাল।
  • দুধ।
  • দই।

৪. পর্যাপ্ত পানি পান করা

পানি শরীর থেকে টক্সিন দূর করে এবং রক্তের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

উপসংহার

হিমোগ্লোবিন আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান যা অক্সিজেন পরিবহন, কার্বন ডাই-অক্সাইড অপসারণ এবং রক্তের pH নিয়ন্ত্রণ করে। হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি হলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং নানা রোগের শিকার হতে পারে। তাই খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সঠিক রাখা জরুরি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top