৭ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা: সুস্থ মা ও শিশুর জন্য পুষ্টিকর ডায়েট

গর্ভাবস্থার সপ্তম মাসে মায়ের শরীরে এবং শিশুর বৃদ্ধিতে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে। এ সময় মা ও শিশুর সুস্থতার জন্য সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পর্যায়ে শিশুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রায় পুরোপুরি গঠিত হয় এবং ওজন বৃদ্ধি পায়। তাই, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া মা ও শিশুর স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে সহায়ক। এই আর্টিকেলে ৭ মাসের গর্ভবতী মায়ের জন্য খাবারের বিস্তারিত তালিকা ও গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ তুলে ধরা হয়েছে।

৭ মাসের গর্ভবতী মায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান

১. প্রোটিন:

প্রোটিন শিশু ও মাতৃকোষের গঠন এবং মাংসপেশির বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।

  • উৎস: ডাল, ডিম, মাছ, মুরগি, দুধ, সয়াবিন।

২. ক্যালসিয়াম:

শিশুর হাড় ও দাঁতের গঠনে ক্যালসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ।

  • উৎস: দুধ, পনির, টক দই, পালং শাক, ছোট মাছ।

৩. আয়রন:

আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ায় এবং রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে।

  • উৎস: লাল মাংস, পালং শাক, ডাল, কাজু বাদাম।

৪. ফোলিক অ্যাসিড:

ফোলিক অ্যাসিড শিশুর মস্তিষ্কের উন্নয়ন ও নিউরাল টিউবের গঠনে সাহায্য করে।

  • উৎস: ব্রকলি, কাঁচা শাকসবজি, কমলা, ডাল।

৫. ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড:

শিশুর মস্তিষ্ক ও চোখের উন্নয়নে ওমেগা-৩ অপরিহার্য।

  • উৎস: সামুদ্রিক মাছ (স্যামন, সারডিন), আখরোট, চিয়া বীজ।

৬. ফাইবার:

হজম প্রক্রিয়া সচল রাখতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে ফাইবার দরকার।

  • উৎস: গোটা শস্য, ফল, সবজি।

৭ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা

সকালের নাশতা

  • ১ গ্লাস গরম দুধ।
  • ২টি ডিম বা ওটসের সাথে ফলের মিশ্রণ।
  • গোটা শস্যের তৈরি রুটি বা পাউরুটি।

সকালের খাবারের পর স্ন্যাকস

  • একটি ফল (আপেল, কলা বা পেয়ারা)।
  • কয়েকটি বাদাম (কাজু, আমন্ড বা আখরোট)।

দুপুরের খাবার

  • ব্রাউন রাইস বা রুটি।
  • মাছ বা মুরগি (ঝোল করে রান্না)।
  • ডাল ও সবজি (পালং শাক, লাউ, মিষ্টি কুমড়া)।
  • ১ বাটি টক দই।

বিকালের স্ন্যাকস

  • মুুড়ি বা চিড়ার সাথে দুধ।
  • ফলের জুস বা টক দইয়ের স্মুদি।

রাতের খাবার

  • হালকা ভাত বা রুটি।
  • ডিমের তরকারি বা মুরগির ঝোল।
  • সিদ্ধ সবজি।
  • ১ গ্লাস দুধ।

    raju akon youtube channel subscribtion

ঘুমানোর আগে

  • ১ গ্লাস গরম দুধ।
  • কয়েকটি খেজুর বা বাদাম।

খাওয়া-দাওয়ার সময় মনে রাখার বিষয়

১. অল্প পরিমাণে বারবার খান:

৭ মাসে বড় খাবারের পরিবর্তে অল্প করে বারবার খাওয়া উচিত।

২. জল বেশি করে পান করুন:

দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।

৩. ক্যাফেইন ও ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলুন:

ক্যাফেইন, তেল-চর্বিযুক্ত খাবার গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর।

৪. ডাক্তারের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন:

প্রয়োজন হলে ফোলিক অ্যাসিড, আয়রন, এবং ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট নিন।

গর্ভাবস্থায় যে খাবারগুলো এড়ানো উচিত

  • কাঁচা বা অর্ধসিদ্ধ মাংস ও ডিম।
  • অতিরিক্ত ঝাল ও মসলাযুক্ত খাবার।
  • প্রসেসড ফুড যেমন নুডলস, প্যাকেটজাত স্ন্যাকস।
  • এলকোহল ও ক্যাফেইন জাতীয় পানীয়।

উপসংহার

৭ মাসের গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাবার শিশুর সঠিক বৃদ্ধি এবং মায়ের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে গর্ভাবস্থার জটিলতা এড়ানো সম্ভব। সুতরাং, নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন এবং আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন।

পরবর্তী পদক্ষেপ

আপনার গর্ভাবস্থার ডায়েট নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে বা বিশেষ প্রয়োজনীয়তা থাকলে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন। সুস্থ থাকুন, সুস্থ রাখুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top