৩ মাসের শিশুর পাতলা পায়খানা হলে করণীয়: কারণ, লক্ষণ ও ঘরোয়া সমাধান

নবজাতক ও ৩ মাস বয়সী শিশুর হজমপ্রক্রিয়া এখনো সম্পূর্ণ বিকশিত হয়নি। তাই অনেক সময় তারা পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার সমস্যায় ভোগে। তবে প্রতিবার পাতলা পায়খানা হওয়া বিপজ্জনক নয়।

যদি শিশু স্বাভাবিকভাবে খেলাধুলা ও দুধ পান করে, তবে সাধারণ পাতলা পায়খানা চিন্তার কিছু নয়। তবে যদি—
❌ অতিরিক্ত বারবার পায়খানা হয়
❌ পানিশূন্যতা দেখা দেয়
❌ বাচ্চা অস্থির হয়ে পড়ে
তবে অবশ্যই সচেতন হওয়া দরকার।

এই ব্লগে আমরা জানবো—
✅ ৩ মাসের শিশুর পাতলা পায়খানার কারণ
✅ বিপজ্জনক লক্ষণসমূহ
✅ করণীয় ও ঘরোয়া প্রতিকার

raju akon youtube channel subscribtion

৩ মাসের শিশুর পাতলা পায়খানার কারণ

মায়ের খাবারের পরিবর্তন – যদি মা নতুন কোনো খাবার খান, তবে তা বুকের দুধের মাধ্যমে শিশুর হজমে প্রভাব ফেলতে পারে।

অতিরিক্ত বুকের দুধ বা ফর্মুলা দুধ – অতিরিক্ত দুধ খেলে শিশুর হজমে সমস্যা হতে পারে এবং ফলে পাতলা পায়খানা হতে পারে।

ফর্মুলা দুধ পরিবর্তন – নতুন ফর্মুলা দুধ দিলে অনেক শিশুর হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

সংক্রমণ (ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া) – রোটা ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ফলে ডায়রিয়া হতে পারে।

গরম আবহাওয়া ও পানিশূন্যতা – অনেক সময় শরীরে পানির অভাবের কারণে শিশুর পায়খানা পাতলা হয়ে যায়

অ্যালার্জি বা ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা – কিছু শিশুর গরুর দুধ বা বিশেষ কিছু খাবারের প্রতি সংবেদনশীলতা থাকে, যা পাতলা পায়খানার কারণ হতে পারে।

অ্যান্টিবায়োটিক সাইড এফেক্ট – যদি মা বা শিশু অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করে, তবে তা শিশুর অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া নষ্ট করতে পারে, যা পাতলা পায়খানার কারণ হতে পারে।

শিশুর পাতলা পায়খানার বিপজ্জনক লক্ষণসমূহ

যদি নিচের লক্ষণগুলো দেখা যায়, তবে শিশুকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিতে হবে

🔴 পায়খানার সাথে রক্ত বা শ্লেষ্মা দেখা গেলে
🔴 এক ঘণ্টার মধ্যে বারবার পাতলা পায়খানা হলে
🔴 শিশুর শরীর দুর্বল ও নিস্তেজ হয়ে পড়লে
🔴 জ্বর (১০০.৪°F বা তার বেশি) থাকলে
🔴 বমি হলে ও দুধ খেতে না চাইলে
🔴 পানিশূন্যতার লক্ষণ দেখা দিলে (শুকনো মুখ, কম প্রস্রাব, কান্নার সময় অশ্রু না আসা)

৩ মাসের শিশুর পাতলা পায়খানা হলে করণীয়

১. পর্যাপ্ত বুকের দুধ খাওয়ান

✔ পাতলা পায়খানার কারণে শিশুর শরীরে পানির অভাব হতে পারে, তাই মায়ের বুকের দুধ বেশি বেশি খাওয়াতে হবে।

২. ফর্মুলা দুধ পরিবর্তন না করা

✔ যদি ফর্মুলা দুধ খাওয়ানো হয়, তবে বারবার ব্র্যান্ড পরিবর্তন না করা ভালো। নতুন ফর্মুলা দিলে প্রথমে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত করাতে হবে।

৩. মায়ের খাদ্য নিয়ন্ত্রণ

মা যদি বুকের দুধ খাওয়ান, তবে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা উচিত নয়। অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার, দুগ্ধজাত পণ্য ও ক্যাফেইন কম খাওয়া ভালো

৪. শিশুকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিতে হবে

✔ বেশি নড়াচড়া বা উত্তেজনা শিশুর হজমের সমস্যা বাড়াতে পারে, তাই শিশুকে শান্ত ও আরামদায়ক পরিবেশে রাখতে হবে।

৫. ওআরএস বা ইলেক্ট্রোলাইট সলিউশন প্রয়োজন হলে

✔ শিশুর পানিশূন্যতা দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওআরএস বা পেডিয়ালাইট খাওয়ানো যেতে পারে

৬. পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা

শিশুর খেলনা, বোতল, স্তনবৃন্ত ও হাত সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে, কারণ জীবাণু থেকে সংক্রমণ হতে পারে।

পাতলা পায়খানা হলে যা করা উচিত নয়

যেকোনো ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া খাওয়াবেন না
গরুর দুধ বা অন্য খাবার দেবেন না (শুধু বুকের দুধই যথেষ্ট)
শিশুর ডায়াপার অনেকক্ষণ ভেজা রাখবেন না

উপসংহার: সতর্ক থাকুন, দ্রুত পদক্ষেপ নিন

৩ মাসের শিশুর পাতলা পায়খানা হলে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কিছু নেই, তবে শিশুর আচরণ ও লক্ষণগুলোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যদি বিপজ্জনক লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top