বাচ্চারা দুধ বমি করে কেন: কারণ এবং প্রতিকার

নবজাতক থেকে শুরু করে একটু বড় বাচ্চাদের অনেক সময় দুধ বমি করার প্রবণতা দেখা যায়। এটি অনেক অভিভাবকের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু বাচ্চাদের দুধ বমি করা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক একটি বিষয় এবং এতে অধিকাংশ সময় কোনো গুরুতর সমস্যা থাকে না। তবে, কখনো কখনো এটি স্বাস্থ্য সমস্যারও লক্ষণ হতে পারে। আসুন, বাচ্চারা কেন দুধ বমি করে, তার কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি।

বাচ্চাদের দুধ বমি করার কারণসমূহ

raju akon youtube channel subscribtion

১. ওভারফিডিং (অতিরিক্ত দুধ খাওয়ানো)

বাচ্চারা সাধারণত তাদের পেট পূর্ণ হলে আর দুধ পান করতে চায় না। কিন্তু অনেক সময় বাচ্চাকে অতিরিক্ত দুধ খাওয়ানো হলে তারা তা হজম করতে পারে না এবং ফলে বমি করে ফেলে। নবজাতক বা ছোট বাচ্চারা তাদের পেট খুবই ছোট হওয়ায় বেশি পরিমাণে খাওয়ার পরে দুধ বমি করতে পারে।

২. গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স (GER)

নবজাতক ও ছোট বাচ্চাদের মধ্যে গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স সাধারণ একটি সমস্যা। এর ফলে দুধ খাবার পর তা পাকস্থলীতে না থেকে খাদ্যনালীতে ফিরে আসে এবং বাচ্চা বমি করে। এর কারণ হলো নবজাতক বাচ্চাদের পাকস্থলীর মুখের পেশি সম্পূর্ণভাবে গঠন না হওয়া। এ ধরণের সমস্যা সাধারণত ছয় মাস থেকে এক বছর বয়সের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।

৩. দুধের সংবেদনশীলতা বা অ্যালার্জি

কিছু বাচ্চা গরুর দুধ বা অন্যান্য ফর্মুলা দুধের প্রতি সংবেদনশীল হতে পারে। এতে করে তারা দুধ হজম করতে পারে না এবং বমি করে। এটি মূলত ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স বা গরুর দুধের প্রোটিন অ্যালার্জির কারণে হতে পারে। লক্ষণ হিসেবে বমির পাশাপাশি পেট ব্যথা, ডায়রিয়া এবং অতিরিক্ত কান্না দেখা দিতে পারে।

৪. দ্রুত খাওয়া

বাচ্চারা যদি খুব দ্রুত দুধ পান করে, তবে তারা পর্যাপ্ত পরিমাণে হাওয়া গিলে ফেলতে পারে, যা পরে বমির কারণ হতে পারে। বিশেষ করে বোতলের দুধ খাওয়ার সময় এ সমস্যা বেশি হয়, কারণ বোতল থেকে দ্রুত দুধ আসার ফলে বাচ্চা দ্রুত খেয়ে ফেলে।

৫. ইনফেকশন বা ভাইরাস

কিছু সময়ে বাচ্চাদের পেটের ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশনের কারণে বমি হতে পারে। এ ধরণের সংক্রমণ বাচ্চাদের দুধ বা অন্যান্য খাবার হজম করতে বাধা দেয়। এই অবস্থায় বাচ্চার জ্বর, ডায়রিয়া বা কাশির মতো অন্যান্য লক্ষণও দেখা দিতে পারে।

৬. পাকস্থলীর অস্বাভাবিকতা

কিছু বাচ্চার পাকস্থলীতে জন্মগত অস্বাভাবিকতা থাকতে পারে, যেমন পাইলোরিক স্টেনোসিস। এই সমস্যায় পাকস্থলীর নিচের অংশ সংকুচিত থাকে, যার ফলে খাবার বা দুধ পাকস্থলী থেকে অন্ত্রে প্রবেশ করতে পারে না। এই ক্ষেত্রে বাচ্চারা প্রচণ্ডভাবে বমি করে এবং দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন।

প্রতিকার এবং কী করবেন?

১. ছোট ছোট খাবার দিন

বাচ্চাদের একবারে অনেক দুধ খাওয়ানোর পরিবর্তে ছোট পরিমাণে বারবার খাওয়ানো ভালো। এতে করে বাচ্চার পাকস্থলীতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে না এবং হজম প্রক্রিয়া সহজ হয়।

২. খাওয়ানোর পরে সোজা রাখুন

দুধ খাওয়ানোর পরপরই বাচ্চাকে শুয়ে না রেখে সোজা করে বসিয়ে বা কোলে ধরে রাখুন। এতে করে দুধ পাকস্থলীতে সহজে নিচে চলে যাবে এবং রিফ্লাক্সের সমস্যা কম হবে।

৩. খাওয়ানোর ফাঁকে বিরতি দিন

বাচ্চা দুধ পান করার সময় মাঝে মাঝে বিরতি দিন, যাতে তারা গিলে ফেলা হাওয়া বের করে দিতে পারে। এর ফলে বাচ্চার পেটের বাতাস কমে এবং বমির সম্ভাবনাও হ্রাস পায়।

৪. ফর্মুলা পরিবর্তন

যদি ফর্মুলা দুধের কারণে বাচ্চা বমি করে, তবে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে অন্য ধরনের ফর্মুলা ব্যবহার করা যেতে পারে। কিছু বাচ্চা বিশেষ ধরনের ফর্মুলা দুধে ভালোভাবে মানিয়ে নেয়।

৫. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন

যদি বাচ্চা ক্রমাগত বমি করতে থাকে এবং অন্যান্য উপসর্গ, যেমন ওজন কমা, জ্বর বা ডায়রিয়া দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। এটি গুরুতর কোনো সমস্যা হতে পারে, যা সময়মতো সঠিক চিকিৎসার প্রয়োজন।

উপসংহার

বাচ্চারা দুধ বমি করার অনেক কারণ থাকতে পারে, যা সাধারণত খুবই স্বাভাবিক। তবে দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা হলে বা অন্য উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত। নিয়মিত সঠিক পদ্ধতিতে খাওয়ানোর মাধ্যমে অনেক সময় এই সমস্যার সমাধান করা যায়। তাই উদ্বেগের পরিবর্তে সচেতন থেকে পরিস্থিতি মোকাবেলা করাই সবচেয়ে ভালো উপায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top