সাইকো কারা? সাইকোপ্যাথির বৈশিষ্ট্য ও লক্ষণ

“সাইকো” বা “সাইকোপ্যাথ” শব্দটি প্রায়ই নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয় এবং এটি সাধারণত এমন ব্যক্তিদের নির্দেশ করে যারা নৈতিকতা ও সামাজিক নিয়মের প্রতি উদাসীন। যদিও সাধারণ কথোপকথনে সাইকো শব্দটি বিভিন্ন ধরনের অস্বাভাবিক আচরণকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, এর পিছনে রয়েছে একটি মানসিক রোগ। সাইকোপ্যাথি (Psychopathy) হলো এমন এক ধরনের ব্যক্তিত্ব ব্যাধি, যেখানে ব্যক্তি অনুভূতির অভাব, অপরাধবোধের অভাব, এবং নিজস্ব স্বার্থে আচরণ করে থাকে।

সাইকো বা সাইকোপ্যাথি কি?

সাইকোপ্যাথি হলো একটি ব্যক্তিত্বের ব্যাধি, যা প্রধানত তিনটি বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়:

  1. আবেগের অভাব: সাইকোপ্যাথরা অন্যের প্রতি কোনো সহানুভূতি বা অনুভূতি প্রকাশ করে না। তারা অন্যের কষ্ট বা আবেগ বুঝতে অক্ষম।
  2. অপরাধবোধের অভাব: তারা তাদের কাজের জন্য কোনো দায়িত্ব বা অপরাধবোধ বোধ করে না।
  3. সামাজিক নিয়মের প্রতি উদাসীনতা: সামাজিক নিয়ম-কানুন বা নৈতিকতার প্রতি তাদের কোনো সম্মানবোধ নেই। তারা তাদের ইচ্ছানুযায়ী কাজ করে, অন্যের মতামত বা অনুভূতি নিয়ে ভাবে না।

raju akon youtube channel subscribtion

সাইকোপ্যাথির লক্ষণ

সাইকোপ্যাথদের মধ্যে যে কয়েকটি লক্ষণ সাধারণত দেখা যায়, তা হলো:

  1. মিথ্যা বলা: সাইকোপ্যাথরা প্রায়ই মিথ্যা বলে এবং অন্যকে প্রতারণা করে, কিন্তু তাদের মধ্যে কোনো অপরাধবোধ কাজ করে না।
  2. অহংকারী ও আত্মকেন্দ্রিক: তারা নিজেদেরকে সবার উপরে রাখে এবং অন্যের প্রতি কোনো ধরনের দায়িত্বশীলতা বা দায়িত্ববোধ অনুভব করে না।
  3. উত্তেজনা খোঁজা: তারা নতুন এবং বিপজ্জনক কাজের প্রতি আকর্ষিত হয়। ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে তারা ভালোবাসে।
  4. অন্যের উপর প্রভাব খাটানোর চেষ্টা: তারা অন্যদের উপর তাদের প্রভাব খাটাতে চায় এবং প্রায়ই মিথ্যা, প্রতারণা বা চালবাজির মাধ্যমে তাদের ইচ্ছা পূরণ করে।
  5. সহানুভূতির অভাব: তারা অন্যের কষ্ট বা আবেগের প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীন থাকে।
  6. দায়িত্বহীন আচরণ: তারা তাদের কাজের পরিণতি নিয়ে ভাবে না এবং এর ফলে অন্যদের ওপর প্রভাব ফেললে তা নিয়ে চিন্তিত হয় না।

সাইকোপ্যাথি ও সোশিওপ্যাথির পার্থক্য

অনেকেই সাইকোপ্যাথি এবং সোশিওপ্যাথিকে একই বলে মনে করেন, তবে এদের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে:

  • সাইকোপ্যাথরা সাধারণত সমাজে ছদ্মবেশে বসবাস করে এবং তাদের কাজ গোপনে করে। তারা অনেক সময় সাফল্যের সাথে সমাজের একজন সদস্য হিসেবে কাজ করতে সক্ষম হয়।
  • সোশিওপ্যাথরা খোলাখুলিভাবে সামাজিক নিয়ম-কানুন ভঙ্গ করে এবং তাদের অপরাধমূলক আচরণ স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়।

সাইকোপ্যাথির কারণ

সাইকোপ্যাথির সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো সম্পূর্ণভাবে বোঝা যায়নি। তবে, এতে জিনগত প্রভাব ও পরিবেশগত কারণ উভয়েরই ভূমিকা থাকতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে কিছু মানুষ জন্মগতভাবে সাইকোপ্যাথির লক্ষণ নিয়ে জন্মায়, আবার অনেক সময় শিশু অবস্থায় মানসিক বা শারীরিক নির্যাতনের ফলে এটি তৈরি হতে পারে।

সাইকোপ্যাথি রোগের চিকিৎসা

সাইকোপ্যাথি একটি জটিল ব্যক্তিত্বের ব্যাধি, যা সহজে নিরাময় করা যায় না। তবে কিছু ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলো কাজে আসতে পারে:

  1. সাইকোথেরাপি: সাইকোথেরাপির মাধ্যমে সাইকোপ্যাথদের চিন্তা ও আচরণের ধরণ পরিবর্তনের চেষ্টা করা হয়।
  2. কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (CBT): এই থেরাপির মাধ্যমে সাইকোপ্যাথদের অপরাধমূলক চিন্তা ও আচরণ সংশোধনের চেষ্টা করা হয়।
  3. ঔষধ: মানসিক স্থিতি বজায় রাখতে কিছু ওষুধ ব্যবহার করা হতে পারে, যদিও এটি সাইকোপ্যাথি নিরাময়ের জন্য সরাসরি সমাধান নয়।

উপসংহার

সাইকোপ্যাথি একটি গুরুতর ব্যক্তিত্বের ব্যাধি, যা মানুষের সামাজিক আচরণ এবং মানসিক স্থিতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সঠিক চিকিৎসা এবং মানসিক থেরাপির মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, তবে সম্পূর্ণ নিরাময় প্রায় অসম্ভব। সাইকোপ্যাথদের প্রতি সমাজের সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং তাদেরকে সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top