রিভার্স সাইকোলজি হলো এমন একটি মানসিক কৌশল, যেখানে আপনি কাউকে কোনো কাজ করতে উৎসাহিত করতে তাকে ঠিক উল্টোটি বলবেন। এই কৌশলটি তখন কাজ করে যখন মানুষ স্বাধীনভাবে কাজ করতে চায় এবং তার ওপর কিছু চাপিয়ে দেয়া হলে সে সেই নির্দেশের বিপরীতে চলে যেতে চায়। রিভার্স সাইকোলজি খুবই সূক্ষ্ম এবং সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এটি অত্যন্ত কার্যকরী হতে পারে।
চলুন রিভার্স সাইকোলজির কিছু দিক এবং এটি কীভাবে কাজ করে তা দেখি।
রিভার্স সাইকোলজি কীভাবে কাজ করে?
রিভার্স সাইকোলজি সাধারণত এমন মানুষদের ক্ষেত্রে ভালোভাবে কাজ করে, যারা স্বভাবতই আত্মপ্রত্যয়ী, স্বাধীনচেতা, এবং নির্দেশ মেনে চলতে চায় না। যখন তারা কোনো নির্দেশ বা পরামর্শ পায়, তখন তাদের মনে স্বাভাবিকভাবেই এর বিপরীতে কাজ করার প্রবণতা তৈরি হয়। তাই, আপনি যদি কাউকে কোনো কাজ করাতে চান, তাহলে তাকে উল্টো কিছু বলুন। এতে সে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে এবং সেই কাজটি করবে।
উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি কোনো শিশুকে কোনো কাজ করতে বলার পরিবর্তে তাকে বলেন, “তুমি তো এটা করতে পারবে না,” তাহলে সেই শিশুটি তার ক্ষমতা প্রমাণ করতে সেই কাজটি করার চেষ্টা করবে। এতে আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পেয়ে যাবেন, অথচ শিশুটির মনে হবে যে এটি তার নিজের সিদ্ধান্ত ছিল।
রিভার্স সাইকোলজির প্রয়োগের ৫টি উপায়
১. বিরোধী মনোভাব ব্যবহার করা
যদি আপনি জানেন যে কেউ আপনার কথা শোনার বিপরীতে কাজ করবে, তাহলে আপনি তার মনোভাবকে বুঝে নিয়ে রিভার্স সাইকোলজি ব্যবহার করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার বন্ধু কোনো পার্টিতে যেতে না চায়, তবে তাকে বলুন, “আচ্ছা, মনে হয় তুমি তো পার্টিতে মজা করতে পারবে না।” এতে সে নিজের মনের বিরোধী মনোভাবের কারণে পার্টিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
২. বাচ্চাদের ক্ষেত্রে
বাচ্চারা প্রায়ই আত্মনিয়ন্ত্রণের দিকে ঝোঁকে, তাই রিভার্স সাইকোলজি তাদের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে কার্যকর। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি চান যে আপনার সন্তান সবজি খেয়ে নেয়, আপনি বলতে পারেন, “আমি নিশ্চিত যে তুমি এই সবজিটা খেতে পছন্দ করবে না।” এতে শিশুটি জেদ করে সেই খাবার খেতে চেষ্টা করবে, কারণ সে প্রমাণ করতে চায় যে আপনি ভুল বলেছেন।
৩. উচ্চ আকাঙ্ক্ষী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে
অনেক মানুষ তাদের ক্ষমতা প্রমাণ করতে চায়। আপনি যদি কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তিকে বলেন যে সে কোনো কাজ করতে পারবে না, তাহলে সে সেই কাজটি করে আপনাকে ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন কর্মচারী তার দক্ষতা দেখাতে চায়, তবে আপনি বলতে পারেন, “আমার মনে হয় না তুমি এত তাড়াতাড়ি কাজটি করতে পারবে।” এতে সে নিজের ক্ষমতা দেখাতে সেই কাজটি তাড়াতাড়ি করার চেষ্টা করবে।
৪. সম্পর্কে রিভার্স সাইকোলজি
প্রেমের সম্পর্কেও রিভার্স সাইকোলজি কাজ করতে পারে। যখন আপনি সঙ্গীর কাছ থেকে কোনো কিছু প্রত্যাশা করেন, তখন সরাসরি সেই কথা বলার পরিবর্তে, তার উল্টো কথা বলুন। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি চান যে আপনার সঙ্গী কোনো কাজ করে, তাহলে বলুন, “তুমি তো এটা করতে চাও না।” এতে সঙ্গী সেই কাজটি করতে আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে, কারণ সে বুঝতে পারবে আপনি তার ইচ্ছাকে নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
৫. ব্যবসায়িক আলোচনায়
ব্যবসায়িক আলোচনায় বা দর-কষাকষিতে রিভার্স সাইকোলজি ব্যবহার করে আপনাকে সুবিধাজনক অবস্থানে আনা যায়। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি কোনো পণ্যের দাম কমাতে চান, তবে বলুন, “আসলে আমি মনে করি না এই পণ্যটি এত ভালো, তাই হয়তো আমি এটা কিনবো না।” এতে বিক্রেতা দাম কমিয়ে পণ্য বিক্রয়ের জন্য আপনাকে প্রভাবিত করতে পারে।
রিভার্স সাইকোলজির সীমাবদ্ধতা
যদিও রিভার্স সাইকোলজি একটি কার্যকর কৌশল, এটি সব সময় সঠিকভাবে কাজ নাও করতে পারে। বিশেষ করে যাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব আছে বা যাদের মানসিক অবস্থা ভঙ্গুর, তাদের ক্ষেত্রে এটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এটি ব্যবহারের সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
উপসংহার
রিভার্স সাইকোলজি মানুষের আচরণ ও মানসিকতা নিয়ে খেলার একটি চমৎকার কৌশল। এটি সঠিকভাবে ব্যবহার করলে, আপনি অন্যের আচরণকে সহজেই প্রভাবিত করতে পারবেন। তবে এই কৌশলকে নেতিবাচক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা উচিত নয়, কারণ এটি সম্পর্কের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। সঠিক পরিস্থিতিতে এবং সদ্ব্যবহারে এটি আপনার জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে।