স্তন ক্যান্সার নারীদের জন্য সবচেয়ে সাধারণ ক্যান্সারগুলোর মধ্যে একটি। সঠিক সময়ে সচেতনতা ও চিকিৎসা না নিলে এটি জীবনহানির কারণ হতে পারে। তবে প্রাথমিক অবস্থায় স্তন ক্যান্সার ধরা পড়লে এর চিকিৎসা করা অনেক সহজ হয় এবং সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। তাই লজ্জা না পেয়ে এই মারাত্মক রোগ সম্পর্কে জানা এবং সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ:
প্রাথমিক স্তরে স্তন ক্যান্সারের কোনো সুস্পষ্ট লক্ষণ নাও থাকতে পারে। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ নিম্নে উল্লেখ করা হলো, যা দেখা দিলে অবিলম্বে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত:
১. স্তনে বা বগলে চাকা বা গিঁট:
স্তনে বা বগলের আশেপাশে কোনো গিঁট বা চাকা অনুভব করলে এটি স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। চাকা বা গিঁট শক্ত বা নরম হতে পারে এবং এটি সাধারণত ব্যথাহীন হয়।
২. স্তনের আকার বা আকারে পরিবর্তন:
যদি স্তনের আকার বা আকারে হঠাৎ কোনো পরিবর্তন দেখা যায়, এটি একটি সতর্ক সংকেত হতে পারে। স্তনের ত্বকের রং বা গঠনেও পরিবর্তন দেখা দিতে পারে।
৩. বুকের নিপলে পরিবর্তন:
নিপল বা স্তনের বোঁটার আকৃতি পরিবর্তন হওয়া, অভ্যন্তরে ঢুকে যাওয়া বা নিপল থেকে অস্বাভাবিক কোনো তরল বের হওয়া স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
৪. ত্বকে দাগ বা র্যাশ:
স্তনের ত্বকে লালচে বা র্যাশ দেখা দিলে সেটাও ক্যান্সারের সম্ভাব্য ইঙ্গিত হতে পারে।
স্তন ক্যান্সারের কারণ:
সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই যা কেবলমাত্র স্তন ক্যান্সার সৃষ্টি করে, তবে কিছু কারণ স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে:
১. জিনগত কারণ:
যেসব নারীর পরিবারে স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস আছে, তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি। জিনের মিউটেশন স্তন ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
২. বয়স:
বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। বিশেষত ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি।
৩. হরমোন থেরাপি:
দীর্ঘমেয়াদী হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (HRT) স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
৪. অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা:
অতিরিক্ত মদ্যপান, ধূমপান, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, এবং শারীরিক পরিশ্রমের অভাব স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
৫. প্রজনন স্বাস্থ্য:
যেসব নারীর প্রথম সন্তান দেরিতে হয় বা সন্তান না থাকে তাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি। এছাড়াও, যারা অল্প বয়সে মাসিক শুরু করেন এবং দেরিতে মেনোপজ হয়, তাদেরও ঝুঁকি থাকে।
স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে করণীয়:
১. নিয়মিত স্ব-পরীক্ষা:
প্রতি মাসে অন্তত একবার নিজের স্তন স্বয়ং পরীক্ষা করা উচিত। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বা শুয়ে থেকে স্তন ও বগল চেক করতে হবে। কোনো গিঁট বা অস্বাভাবিক কিছু অনুভূত হলে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
২. ম্যামোগ্রাম করা:
বয়স ৪০ বছর পেরোলেই নিয়মিত ম্যামোগ্রাম করা উচিত। এতে প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার ধরা পড়ে এবং চিকিৎসা শুরু করা যায়।
৩. সুস্থ জীবনধারা বজায় রাখা:
সুস্থ ও সুষম খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে। ধূমপান ও মদ্যপান এড়িয়ে চলতে হবে।
৪. বংশগত ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন থাকা:
যদি আপনার পরিবারে স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকে, তবে আপনার ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা করানো উচিত।
৫. হরমোন থেরাপি সংক্রান্ত পরামর্শ:
হরমোন থেরাপির প্রয়োজন হলে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে কথা বলে ঝুঁকি বিবেচনা করতে হবে। বিকল্প চিকিৎসারও চিন্তা করা যেতে পারে।
স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা:
স্তন ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে চিকিৎসা সহজ হয় এবং সফলতার হারও বেশি থাকে। চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ভর করে ক্যান্সারের স্টেজ এবং রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর। সাধারণত অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন থেরাপি এবং হরমোন থেরাপি দ্বারা স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা করা হয়।
উপসংহার:
স্তন ক্যান্সার একটি জীবনঘাতী রোগ হলেও প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে তা নিরাময়যোগ্য। লজ্জা বা দ্বিধা না করে নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। সচেতনতা এবং সঠিক যত্নই স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।