google.com, pub-1016891184419719, DIRECT, f08c47fec0942fa0 সেরিব্রাল পালসি (Cerebral Palsy) কি? - Raju Akon

সেরিব্রাল পালসি (Cerebral Palsy) কি?

সেরিব্রাল পালসি (Cerebral Palsy) হলো একটি স্নায়বিক অবস্থার নাম, যা জন্মের আগে, জন্মের সময় অথবা জন্মের পরপরই মস্তিষ্কের বিকাশের সময়কালে ঘটে। এটি মস্তিষ্কের সেই অংশকে প্রভাবিত করে যা শরীরের গতিবিধি এবং পেশির সমন্বয় নিয়ন্ত্রণ করে। এর ফলে শরীরের পেশির শক্তি, নড়াচড়ার দক্ষতা, এবং ভারসাম্য রক্ষার ক্ষমতায় সমস্যা দেখা দেয়।

সেরিব্রাল পালসির প্রকারভেদ

সেরিব্রাল পালসি বিভিন্নভাবে প্রকাশ পায় এবং এই রোগটি প্রধানত চারটি ভাগে বিভক্ত:

  1. স্পাস্টিক সেরিব্রাল পালসি (Spastic Cerebral Palsy):
    • রোগীর পেশি শক্ত হয়ে যায় এবং নড়াচড়ায় অসুবিধা হয়।
    • হাত ও পায়ে অনিয়মিত গতিবিধি দেখা যায়।
    • বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে সাধারণ ধরনের।
  2. আথেটয়েড সেরিব্রাল পালসি (Athetoid Cerebral Palsy):
    • রোগীর নড়াচড়া অস্বাভাবিক হয়ে যায় এবং হাত-পা বাঁকা অবস্থায় থাকতে পারে।
    • শরীরের পেশির টান এবং শিথিলতার মধ্যে অস্বাভাবিক পরিবর্তন হয়।
    • মুখ, ঘাড় এবং গলাতেও প্রভাব পড়তে পারে।
  3. অ্যাটাক্সিক সেরিব্রাল পালসি (Ataxic Cerebral Palsy):
    • রোগীর শরীরের ভারসাম্য এবং সমন্বয় রাখতে সমস্যা হয়।
    • হাঁটাচলা এবং কাজ করতে গিয়ে অসঙ্গতি দেখা দেয়।
    • দ্রুত বা শীঘ্র সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হয়।
  4. মিশ্র সেরিব্রাল পালসি (Mixed Cerebral Palsy):
    • এই ধরনের সেরিব্রাল পালসিতে উপরোক্ত দুই বা ততোধিক উপসর্গ একসাথে থাকতে পারে।
    • এটি অন্যান্য ধরনগুলোর একটি মিশ্রণ।

raju akon youtube channel subscribtion

সেরিব্রাল পালসির লক্ষণ

সেরিব্রাল পালসির লক্ষণগুলো সাধারণত জন্মের পর থেকে শৈশবের প্রথম দিকেই দেখা যায়। কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:

  • শরীরের মাংসপেশি শক্ত হয়ে যাওয়া বা শিথিল হয়ে যাওয়া।
  • হাত, পা, বা শরীরের অন্যান্য অংশে নড়াচড়ার নিয়ন্ত্রণ হারানো।
  • হাঁটতে বা চলাফেরা করতে সমস্যা।
  • শরীরের ভারসাম্য রাখতে সমস্যা।
  • কথা বলার ক্ষমতা কমে যাওয়া।
  • খাওয়া বা গিলতে অসুবিধা।

সেরিব্রাল পালসির কারণ

সেরিব্রাল পালসির নির্দিষ্ট কারণ নির্ধারণ করা কঠিন, তবে বেশ কিছু কারণ এ রোগের সাথে সম্পর্কিত:

  • মস্তিষ্কের আঘাত: জন্মের সময় অথবা জন্মের আগে মস্তিষ্কে আঘাত বা অক্সিজেনের অভাবে মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে।
  • জন্মের সময় সমস্যা: প্রিম্যাচিউর বা অল্প ওজনের শিশুদের মধ্যে সেরিব্রাল পালসি হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
  • ইনফেকশন: মায়ের গর্ভাবস্থায় কিছু সংক্রমণ (যেমন রুবেলা, টক্সোপ্লাজমোসিস) মস্তিষ্কের বিকাশে প্রভাব ফেলতে পারে।
  • জেনেটিক সমস্যা: কিছু ক্ষেত্রে জেনেটিক ত্রুটিও সেরিব্রাল পালসির কারণ হতে পারে।

সেরিব্রাল পালসির চিকিৎসা

সেরিব্রাল পালসির কোনো স্থায়ী চিকিৎসা নেই, তবে উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন ধরনের থেরাপি এবং চিকিৎসা সাহায্য করতে পারে:

  1. শারীরিক থেরাপি (Physical Therapy): শারীরিক থেরাপি রোগীর পেশি শক্তিশালী করতে এবং নড়াচড়া উন্নত করতে সহায়ক।
  2. অকুপেশনাল থেরাপি (Occupational Therapy): এই থেরাপি রোগীকে দৈনন্দিন কাজগুলো করতে সাহায্য করে।
  3. মেডিকেশন: মাংসপেশির টান কমানোর জন্য ঔষধ প্রয়োগ করা হয়।
  4. শল্যচিকিৎসা: জটিল ক্ষেত্রে শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে পেশি বা হাড়ের সমস্যা সমাধান করা হয়।

উপসংহার

সেরিব্রাল পালসি একটি স্নায়বিক রোগ যা রোগীর দৈনন্দিন জীবনযাপনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। সঠিক চিকিৎসা ও থেরাপি গ্রহণের মাধ্যমে রোগীরা অনেকটাই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায়, ততই রোগীর জন্য উপকারী হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top