সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ গুলো কি কি?

সিজোফ্রেনিয়া একটি জটিল মানসিক রোগ, যা মানুষের চিন্তা, অনুভূতি, এবং আচরণকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। এই রোগের লক্ষণগুলো সাধারণত তিনটি প্রধান ক্যাটেগরিতে বিভক্ত করা হয়: পজিটিভ, নেগেটিভ, এবং কগনিটিভ লক্ষণ।

১. পজিটিভ লক্ষণ (Positive Symptoms)

এই লক্ষণগুলো স্বাভাবিক মানুষের মধ্যে দেখা যায় না এবং এগুলোকে ‘পজিটিভ’ বলা হয় কারণ এগুলো একটি স্বাভাবিক ব্যক্তির অভিজ্ঞতার বাইরে যোগ হয়।

  • হ্যালুসিনেশন (Hallucinations):
    • হ্যালুসিনেশন হল এমন অভিজ্ঞতা যেখানে ব্যক্তি এমন কিছু দেখে, শোনে, অনুভব করে বা গন্ধ পায় যা বাস্তবে নেই। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হলো শ্রাব্য হ্যালুসিনেশন, যেখানে ব্যক্তি অদৃশ্য কণ্ঠ শুনতে পায়।
  • ডিলুশন (Delusions):
    • ডিলুশন হল মিথ্যা বিশ্বাস, যা বাস্তবতার সঙ্গে সম্পূর্ণ বিপরীত। উদাহরণস্বরূপ, কেউ ভাবতে পারে যে তারা বড় কোনো ষড়যন্ত্রের শিকার বা বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে।
  • আচরণের অস্বাভাবিকতা (Disorganized Behavior):
    • অদ্ভুত বা অপ্রত্যাশিত আচরণ, যেমন অন্যদের কাছে অস্বাভাবিক বা অর্থহীন কাজ করা। এটি কখনো কখনো ব্যক্তির দৈনন্দিন কাজ সম্পাদনে অক্ষমতা সৃষ্টি করতে পারে।
  • চিন্তার অস্বাভাবিকতা (Disorganized Thinking):
    • চিন্তায় অস্বচ্ছলতা, যা ব্যক্তির কথা বলার ধরণেও প্রকাশ পেতে পারে। তাদের কথায় সংযোগের অভাব থাকতে পারে, এবং কথাবার্তা অসংলগ্ন হতে পারে।

raju akon youtube channel subscribtion

২. নেগেটিভ লক্ষণ (Negative Symptoms)

নেগেটিভ লক্ষণগুলো সেই বৈশিষ্ট্যগুলো যা একজন সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে কম বা অনুপস্থিত থাকে, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে দেখা যায়।

  • এনেহেডোনিয়া (Anhedonia):
    • এমন অবস্থায় ব্যক্তি কোনো কিছুতে আনন্দ বা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে পারে না। যে কাজগুলো আগে উপভোগ্য ছিল, সেগুলোতে আর আগ্রহ থাকে না।
  • অ্যাভোলিশন (Avolition):
    • দৈনন্দিন কাজ করার ইচ্ছা বা প্রেরণার অভাব। ব্যক্তির মধ্যে আত্ম-উদ্যোগী কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে যায় এবং তারা আগের মতো দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করতে অক্ষম হয়ে পড়ে।
  • আলোগিয়া (Alogia):
    • কথা বলার সামর্থ্য বা ইচ্ছার অভাব, যার ফলে ব্যক্তির কথাবার্তা সংক্ষিপ্ত বা অনুচ্চারিত হতে পারে। তারা অনেক সময় সামাজিক পরিস্থিতিতে কম কথা বলে।
  • এফ্ল্যাট ইফেক্ট (Flat Affect):
    • আবেগপ্রকাশে অক্ষমতা বা অপ্রকাশযোগ্যতা। ব্যক্তির মুখাবয়ব বা শরীরের ভাষায় আবেগের অভাব থাকে, যা দেখে বোঝা যায় না যে তারা কী অনুভব করছে।

৩. কগনিটিভ লক্ষণ (Cognitive Symptoms)

এই লক্ষণগুলো মানসিক প্রক্রিয়ার সাথে সম্পর্কিত এবং এটি ব্যক্তির চিন্তা ও স্মৃতিতে প্রভাব ফেলে।

  • মেমোরি সমস্যা (Memory Problems):
    • স্বল্পমেয়াদি স্মৃতি বা কর্মসম্পাদনক্ষম স্মৃতির সমস্যা। ব্যক্তি ছোট ছোট তথ্য মনে রাখতে বা সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যায় পড়তে পারেন।
  • মনোযোগের অভাব (Lack of Attention):
    • দীর্ঘ সময় ধরে মনোযোগ ধরে রাখতে অক্ষমতা। ব্যক্তিরা সহজেই মনোযোগ হারায় এবং কাজ শেষ করতে সমস্যা হয়।
  • এক্সিকিউটিভ ফাংশন সমস্যা (Executive Functioning Problems):
    • পরিকল্পনা, সংগঠন, এবং সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে সমস্যা। ব্যক্তিরা সাধারণ কাজ সম্পাদনে অসুবিধা অনুভব করতে পারে।

উপসংহার

সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণগুলো ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হতে পারে, এবং একই ব্যক্তির মধ্যে সময়ের সাথে সাথে এই লক্ষণগুলোর পরিবর্তন ঘটতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণগুলো শনাক্ত করা এবং সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে রোগী সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ জীবনযাপন করতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top