সহবাসের পর রক্ত বের হলে কি হয়: কারণ ও করণীয়

সহবাসের পর রক্তপাত একটি সাধারণ সমস্যা হলেও তা বিভিন্ন কারণে ঘটে থাকতে পারে। কখনও এটি স্বাভাবিক হতে পারে, আবার কখনও এটি শারীরিক কোনো সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। সহবাসের পর রক্তপাত হলে অনেকেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন, তাই এর কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে সচেতন থাকা গুরুত্বপূর্ণ।

সহবাসের পর রক্তপাতের কারণ

১. যোনিপথের শুষ্কতা

যোনিপথে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক লুব্রিকেশন না থাকলে সহবাসের সময় ঘর্ষণের কারণে রক্তপাত হতে পারে। এটি বিশেষ করে মেনোপজের পর বা স্তন্যপান চলাকালীন হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ঘটে।

raju akon youtube channel subscribtion

২. সার্ভিকাল পলিপস

সার্ভিকাল পলিপ হলো জরায়ুর মুখে ছোট ছোট অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। এগুলো সাধারণত ক্ষতিকর নয়, তবে সহবাসের সময় এগুলো আঘাত পেলে রক্তপাত হতে পারে।

৩. যোনির সংক্রমণ (ইনফেকশন)

যোনিতে ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাল সংক্রমণের কারণে যোনির টিস্যু সংবেদনশীল হয়ে যায়। এর ফলে সহবাসের সময় ক্ষত বা রক্তপাত হতে পারে। সাধারণত এই ধরনের সংক্রমণ চুলকানি, জ্বালাপোড়া এবং অস্বাভাবিক স্রাবের সঙ্গে যুক্ত হয়।

৪. যৌনবাহিত রোগ (STD)

কিছু যৌনবাহিত রোগ যেমন ক্ল্যামিডিয়া বা গনোরিয়ার কারণে যোনির টিস্যুতে ইনফেকশন হতে পারে, যা সহবাসের পর রক্তপাত ঘটায়।

৫. সার্ভিকাল ক্যান্সার

যদিও এটি বিরল, কিন্তু সহবাসের পর রক্তপাত সার্ভিকাল ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। জরায়ুর মুখের টিস্যুতে অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধি বা ক্যান্সার হলে রক্তপাত হতে পারে।

৬. মাসিক চক্রের পরিবর্তন

সহবাসের সময় যদি মাসিক চক্রের শেষের দিকে বা শুরুর দিকে থাকে, তাহলে হালকা রক্তপাত হতে পারে। এটি প্রাকৃতিক এবং উদ্বেগের কারণ নয়।

৭. গর্ভাবস্থায় রক্তপাত

গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে সহবাসের পর সামান্য রক্তপাত হতে পারে। এটি সাধারণত ইমপ্লান্টেশন বা জরায়ুর নরম টিস্যুর কারণে ঘটে। তবে যদি রক্তপাত বেশি হয় বা অন্য কোনো অস্বস্তিকর লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সহবাসের পর রক্তপাতের প্রতিকার

১. যথেষ্ট লুব্রিকেশন ব্যবহার করা

যোনিপথে শুষ্কতা থাকলে লুব্রিকেন্ট ব্যবহার করা উচিত। এটি যোনির টিস্যুকে রক্ষা করতে সহায়ক হয় এবং ঘর্ষণ কমায়, ফলে রক্তপাতের ঝুঁকি কমে যায়।

২. সংক্রমণের চিকিৎসা করা

যদি যোনিতে কোনো সংক্রমণের কারণে রক্তপাত হয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সংক্রমণের পরীক্ষা করে উপযুক্ত ওষুধ সেবন করা উচিত।

৩. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা

যদি রক্তপাত বারবার ঘটে বা অন্যান্য অস্বাভাবিক লক্ষণ যেমন চুলকানি, জ্বালাপোড়া, দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব থাকে, তবে জরায়ুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত। এ ক্ষেত্রে প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট এবং সার্ভিকাল পরীক্ষার মাধ্যমে কারণ নির্ণয় করা যায়।

৪. যৌনবাহিত রোগ প্রতিরোধে সাবধানতা

সঠিকভাবে কনডম ব্যবহার এবং যৌন সঙ্গীর স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকা যৌনবাহিত রোগ থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করে, যা রক্তপাতের কারণ হতে পারে।

৫. বিশ্রাম নেওয়া এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া

গর্ভাবস্থায় রক্তপাত হলে বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। বিশেষ করে যদি রক্তপাত বেশি হয়, তবে তা দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শে পরীক্ষা করা উচিত।

চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার সময়

  • সহবাসের পর যদি রক্তপাত বারবার ঘটে।
  • যদি রক্তপাতের সঙ্গে তীব্র ব্যথা, চুলকানি বা জ্বালাপোড়া থাকে।
  • যদি জরায়ু বা যোনিতে কোনো অস্বাভাবিক টিউমার বা বৃদ্ধি অনুভূত হয়।
  • যদি গর্ভাবস্থার সময় অতিরিক্ত রক্তপাত হয়।

উপসংহার

সহবাসের পর রক্তপাত হতে পারে বিভিন্ন কারণে। অনেক ক্ষেত্রেই এটি সামান্য এবং স্বাভাবিক হতে পারে, তবে বারবার রক্তপাত হলে তা গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত। সঠিক সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা এই ধরনের সমস্যার সমাধান করতে সাহায্য করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top