শৈশবে ওসিডির কারণ?

শৈশবে ওসিডি (Obsessive-Compulsive Disorder) এর কারণ:

ওসিডি বা অবসেসিভ-কমপালসিভ ডিজঅর্ডার এমন একটি মানসিক রোগ, যা শৈশব থেকে শুরু হতে পারে এবং এটি জীবনের পরবর্তী পর্যায়েও প্রভাব ফেলতে পারে। শিশুদের মধ্যে ওসিডির কারণ সম্পূর্ণরূপে বোঝা না গেলেও, কিছু সম্ভাব্য কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে যা শিশুদের মধ্যে ওসিডি উদ্ভবের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। আমি, রাজু আকন, একজন কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট হিসেবে নিচে এর কারণগুলো বিশদভাবে আলোচনা করছি।

১. জেনেটিক প্রভাব

ওসিডির একটি প্রধান কারণ হিসেবে জেনেটিক বা বংশগত প্রভাব চিহ্নিত করা হয়। যদি পরিবারের কোনো সদস্য, বিশেষ করে প্রথম ডিগ্রির আত্মীয় (মা, বাবা, ভাই বা বোন) ওসিডিতে আক্রান্ত হন, তবে শিশুর মধ্যে এই রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। অনেক সময় দেখা গেছে যে পরিবারের মধ্যে একই ধরনের মানসিক সমস্যার প্রবণতা থাকতে পারে।

raju akon youtube channel subscribtion

২. মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং নিউরোট্রান্সমিটার অস্বাভাবিকতা

মস্তিষ্কের কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলের কার্যকারিতার অস্বাভাবিকতা ওসিডির কারণ হতে পারে। বিশেষ করে, সেরিব্রাল করটেক্স এবং বাসাল গ্যাংলিয়া নামক মস্তিষ্কের অংশগুলোর কার্যকারিতা ওসিডি রোগীদের মধ্যে প্রভাবিত হতে দেখা যায়। এছাড়াও, সেরোটোনিন এবং ডোপামিন নামক নিউরোট্রান্সমিটারের ভারসাম্যহীনতা ওসিডি উদ্ভবের সঙ্গে সম্পর্কিত।

৩. পরিবেশগত প্রভাব

শৈশবে শিশুর বেড়ে ওঠার পরিবেশও ওসিডি বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। যদি শিশু কোনো মানসিক আঘাত বা চাপের শিকার হয়, যেমন শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন, অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণমূলক পিতামাতার সঙ্গে বসবাস, বা অত্যন্ত কঠোর নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে বড় হওয়া, তবে তা ওসিডির লক্ষণ তৈরি করতে পারে।

৪. মনস্তাত্ত্বিক কারণ

শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর তার ব্যক্তিত্ব এবং মনোভাবও প্রভাব ফেলতে পারে। কিছু শিশু অতিরিক্ত নিয়মানুবর্তী বা নিখুঁততা প্রিয় হতে পারে, যা তাদের মধ্যে ওসিডির লক্ষণ তৈরি করতে পারে। এই ধরনের ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যগুলো শিশুকে ওসিডির ঝুঁকিতে ফেলতে পারে, বিশেষ করে যদি তারা ক্রমাগত উদ্বেগ বা মানসিক চাপের মধ্যে থাকে।

৫. সংক্রমণ এবং অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া

কিছু ক্ষেত্রে, শৈশবে ওসিডির সঙ্গে প্যান্ডাস (PANDAS) নামক একটি অবস্থা সম্পর্কিত থাকতে পারে, যেখানে স্ট্রেপ্টোকোক্কাল সংক্রমণ মস্তিষ্কে অটোইমিউন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এর ফলে শিশুদের মধ্যে হঠাৎ ওসিডি লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যদিও এটি একটি বিরল ঘটনা, তবে এটি ওসিডি বিকাশের অন্যতম কারণ হতে পারে।

৬. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব

শিশুর বেড়ে ওঠার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশও ওসিডির ঝুঁকি বাড়াতে পারে। সমাজের চাপে শিশুরা অনেক সময় অতিরিক্ত উদ্বেগগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং এর ফলে তাদের মধ্যে ওসিডির লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

উপসংহার

শৈশবে ওসিডির বিকাশে বিভিন্ন কারণ ভূমিকা পালন করতে পারে, যার মধ্যে জেনেটিক, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা, পরিবেশগত প্রভাব, মনস্তাত্ত্বিক কারণ এবং সংক্রমণ ও অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া উল্লেখযোগ্য। শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হওয়া এবং সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওসিডির লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে একজন সাইকোলজিস্ট বা মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত, যাতে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন সম্ভব হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top