মেদ বা ভুঁড়ি শরীরের একটি সাধারণ সমস্যা, যা অনেকের জন্যই অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অতিরিক্ত মেদ শরীরে নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ায়, যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ইত্যাদি। তবে মেদ কমানোর জন্য শুধুমাত্র ডায়েট বা ব্যায়ামই যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন সঠিক জীবনধারা ও কিছু নির্দিষ্ট অভ্যাস মেনে চলা।
মেদ ও ভুঁড়ি কমানোর উপায়
১. নিয়মিত ব্যায়াম করুন
মেদ কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো নিয়মিত ব্যায়াম। বিশেষ করে কার্ডিও ব্যায়াম (যেমন দৌড়ানো, সাইকেল চালানো, জগিং) ও পেটের ব্যায়াম (সিটআপ, ক্রাঞ্চেস) মেদ কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন অন্তত ৩০-৪৫ মিনিট ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।
২. পুষ্টিকর ও কম ক্যালোরিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করুন
খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনে মেদ কমানো যায়। প্রক্রিয়াজাত ও চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। তাজা শাকসবজি, ফলমূল, প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার এবং ফাইবারযুক্ত খাবার বেশি খান। এসব খাবার কম ক্যালোরিযুক্ত এবং পুষ্টিকর।
৩. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
পানি শরীরের বিপাক ক্রিয়া বাড়ায় এবং ফ্যাট গলাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে শরীরের টক্সিন দূর হয় এবং ওজন কমাতে সহায়ক হয়।
৪. শর্করা ও চিনি নিয়ন্ত্রণে রাখুন
অতিরিক্ত শর্করা ও চিনি মেদ বাড়ায়। চিনি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। এছাড়া, সাদা চাল ও ময়দা জাতীয় খাবার পরিমিত পরিমাণে খান।
৫. পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন
প্রতিদিন পর্যাপ্ত ও নিয়মিত ঘুম মেদ কমাতে সাহায্য করে। কম ঘুমের কারণে ক্ষুধার হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়, যা খাবারের চাহিদা বাড়িয়ে দেয়। দিনে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন।
৬. মানসিক চাপ কমান
মানসিক চাপের কারণে কর্টিসল হরমোনের উৎপাদন বেড়ে যায়, যা শরীরে ফ্যাট জমতে সাহায্য করে। তাই মানসিক চাপ কমাতে নিয়মিত ধ্যান বা যোগব্যায়াম করুন। এটি আপনার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য দুটোই ভালো রাখবে।
৭. ক্ষুদ্র খাবার গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তুলুন
প্রতি ২-৩ ঘণ্টা পর পর ক্ষুদ্র খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে বিপাক ক্রিয়া সক্রিয় থাকে এবং বেশি পরিমাণ খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়।
৮. অ্যালকোহল পান এড়িয়ে চলুন
অ্যালকোহল মেদ বাড়ায় এবং শরীরের ফ্যাট গলানোর ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই মেদ কমানোর জন্য অ্যালকোহল পরিহার করা উচিত।
৯. উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন
প্রোটিন দীর্ঘ সময় ধরে পেট ভর্তি রাখতে সাহায্য করে এবং ক্ষুধার চাহিদা কমায়। ডিম, মুরগির মাংস, মাছ এবং ডাল প্রোটিনের ভালো উৎস।
১০. খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে খান
খাবার ধীরে ধীরে এবং ভালোভাবে চিবিয়ে খাওয়া উচিত। দ্রুত খাবার খেলে বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করার সম্ভাবনা থাকে, যা ওজন বাড়ায়।
মেদ ও ভুঁড়ি কমানোর সময় করণীয় নয়
- অতিরিক্ত ফাস্টফুড ও প্রসেসড খাবার খাবেন না।
- ক্ষুধার্ত থাকাকালীন একসঙ্গে বেশি পরিমাণ খাবার খাবেন না।
- অকারণ বা অতিরিক্ত ডায়েট এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি স্বাস্থ্যহানির কারণ হতে পারে।
উপসংহার
মেদ ও ভুঁড়ি কমানোর জন্য ধৈর্য ধরে সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়াম মেনে চলা প্রয়োজন। এক দিনে মেদ কমবে না, তবে ধীরে ধীরে সঠিকভাবে চললে ফলাফল আসবে। সুস্থ জীবনযাপনের জন্য সঠিক পুষ্টি, ব্যায়াম এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি।
ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.