বর্ষাকালে বৃষ্টির কারণে চারপাশে পানি জমে থাকে, যা পানিবাহিত রোগ ছড়ানোর অন্যতম প্রধান কারণ। বৃষ্টির পানি সাধারণত নদী, পুকুর এবং জলাশয়ে জমা হয় এবং এর সাথে মিশে যায় নানা ধরনের জীবাণু ও ময়লা। এই কারণে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ, যেমন ডায়রিয়া, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস-এ এবং কোলেরা ইত্যাদি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
বর্ষাকালের সাধারণ পানিবাহিত রোগসমূহ
১. ডায়রিয়া
বর্ষাকালে দূষিত পানি বা খাবার থেকে ডায়রিয়া ছড়ায়। এ রোগে পেটব্যথা, বমি বমি ভাব, পেট ফাঁপা এবং তরল মল হওয়া প্রধান লক্ষণ।
২. টাইফয়েড
টাইফয়েড সাধারণত দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে ছড়ায়। জ্বর, মাথাব্যথা, পেটব্যথা, দুর্বলতা, এবং অরুচি টাইফয়েডের সাধারণ লক্ষণ।
৩. কোলেরা
কোলেরা দূষিত পানির কারণে ছড়ায় এবং মারাত্মক ডায়রিয়া ও পানিশূন্যতা সৃষ্টি করে। দ্রুত চিকিৎসা না করলে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে।
৪. হেপাটাইটিস-এ
হেপাটাইটিস-এ একটি ভাইরাল রোগ, যা সাধারণত দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে লিভারে সংক্রমণ ঘটায়। এটি জন্ডিস বা হলুদ চোখ ও ত্বক, পেটব্যথা এবং বমি সৃষ্টি করতে পারে।
৫. লেপ্টোসপাইরোসিস
বর্ষাকালে নোংরা পানি বা মাটির সাথে সংস্পর্শে এলে লেপ্টোসপাইরোসিস হতে পারে। এটি জ্বর, মাথাব্যথা, পেশীতে ব্যথা এবং ত্বকের ক্ষত তৈরি করে।
পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধের উপায়
১. পরিষ্কার ও সঠিকভাবে ফুটানো পানি পান করুন:
পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধে বিশুদ্ধ পানির গুরুত্ব অনেক। বৃষ্টির মৌসুমে পানির উৎস দূষিত হতে পারে, তাই শুধু নিরাপদ ও ফুটানো পানি পান করুন। পানি খাওয়ার আগে তা ভালভাবে ফুটিয়ে নিতে হবে।
২. খাবার পরিষ্কারভাবে তৈরি ও সংরক্ষণ করুন:
বর্ষাকালে খাবার খুব সহজে দূষিত হতে পারে। তাই সব ধরনের খাবার পরিষ্কারভাবে তৈরি ও সংরক্ষণ করুন। কাঁচা বা অপচনশীল খাবার না খাওয়াই উত্তম।
৩. ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন:
খাবার খাওয়ার আগে এবং টয়লেট ব্যবহারের পর অবশ্যই সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুতে হবে। এটি পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর একটি উপায়।
৪. পানি জমে থাকা স্থান এড়িয়ে চলুন:
বর্ষাকালে রাস্তায় পানি জমা থাকে এবং সেই পানিতে হাঁটাচলার মাধ্যমে জীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে। নোংরা বা জমে থাকা পানিতে চলাচল করা থেকে বিরত থাকুন।
৫. পানি বিশুদ্ধকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করুন:
যারা নদী বা অন্যান্য উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করেন, তারা পানিকে বিশুদ্ধ করার জন্য হ্যালোজেন ট্যাবলেট, ফিল্টার বা ক্লোরিন ব্যবহার করতে পারেন।
৬. মশারোধী ব্যবস্থা গ্রহণ করুন:
বর্ষাকালে জমে থাকা পানিতে মশার বংশবিস্তার হয়, যা ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, এবং চিকুনগুনিয়ার মতো রোগ ছড়াতে পারে। ঘরের আশেপাশে মশারোধী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, মশারি ব্যবহার করতে হবে এবং কোথাও পানি জমতে দেওয়া যাবে না।
পানিবাহিত রোগের লক্ষণ দেখলে করণীয়
যদি পানিবাহিত রোগের কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, যেমন ডায়রিয়া, জ্বর, পেটব্যথা বা বমি বমি ভাব, তবে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। পানিশূন্যতার ঝুঁকি থাকলে, ওআরএস (ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন) খেতে হবে এবং তরল জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে।
উপসংহার
বর্ষাকালে পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি অনেক বেশি, তবে কিছু সঠিক অভ্যাস মেনে চললে এই রোগগুলো থেকে সহজেই সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব। বিশুদ্ধ পানি পান করা, পরিষ্কারভাবে খাবার তৈরি করা, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা এবং সচেতন থাকা রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করলে পানিবাহিত রোগ থেকে সেরে ওঠা সম্ভব।
ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.