নাইট টেররস, যাকে স্লিপ টেররস বলা হয়, একটি গুরুতর ঘুমের সমস্যা যেখানে ব্যক্তি ঘুমের মধ্যে আকস্মিক ভয় বা আতঙ্কের অভিজ্ঞতা লাভ করে। এই অভিজ্ঞতা অত্যন্ত ভীতিকর হতে পারে এবং এটি সাধারণত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও হতে পারে। নাইট টেররসের সময়, ব্যক্তি সম্পূর্ণরূপে জাগ্রত হয় না এবং পরবর্তীতে এটি স্মরণ করতে পারে না।
নাইট টেররসের কারণ
নাইট টেররসের সঠিক কারণ জানা যায় না, তবে কিছু সাধারণ কারণ রয়েছে যা এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে:
- পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব: ঘুমের ঘাটতি বা অনিয়মিত ঘুমের সময়সূচি নাইট টেররসের ঝুঁকি বাড়ায়।
- মানসিক চাপ: অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা এই সমস্যার কারণ হতে পারে।
- ফিভার: শরীরে উচ্চ তাপমাত্রা বা জ্বর থাকলে নাইট টেররস হতে পারে।
- জেনেটিক প্রভাব: পরিবারের মধ্যে নাইট টেররসের ইতিহাস থাকলে এই সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
- মাদকদ্রব্যের ব্যবহার: কিছু ওষুধ বা মাদকদ্রব্য নাইট টেররসের কারণ হতে পারে।
নাইট টেররসের লক্ষণ
নাইট টেররসের প্রধান লক্ষণগুলো হলো:
- হঠাৎ আতঙ্কিত হয়ে ওঠা: গভীর ঘুমের মধ্যে হঠাৎ করে আতঙ্কিত হয়ে ওঠা এবং চিৎকার করা।
- অস্থির আচরণ: বিছানায় বসে পড়া, হাত-পা নাড়াচাড়া করা, এবং বুদ্ধিহীন আচরণ।
- ঘামের আধিক্য: নাইট টেররসের সময় প্রচুর ঘাম হওয়া।
- হৃদস্পন্দনের বৃদ্ধি: নাইট টেররসের সময় হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়ে যায়।
- স্মৃতির অভাব: নাইট টেররসের পর ঘুম থেকে ওঠার পরে এই ঘটনার কোনো স্মৃতি না থাকা।
সিবিটি থেরাপির টেকনিক ১: গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস (Deep Breathing)
নাইট টেররস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস অনুশীলন করা যেতে পারে।
- ডায়াফ্র্যাগম্যাটিক ব্রিদিং: ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নিন এবং শ্বাস ছাড়ুন, যা শারীরিক ও মানসিক উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করবে।
- রিলাক্সেশন এক্সারসাইজ: ঘুমানোর আগে রিলাক্সেশন ব্যায়াম করার মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
সিবিটি থেরাপির টেকনিক ২: কগনিটিভ রিস্ট্রাকচারিং (Cognitive Restructuring)
নাইট টেররসের ফলে আসা নেতিবাচক চিন্তাগুলো দূর করার জন্য কগনিটিভ রিস্ট্রাকচারিং একটি কার্যকর পদ্ধতি।
- নেতিবাচক চিন্তা চিহ্নিত করা: নাইট টেররস নিয়ে চিন্তা করলে যে নেতিবাচক চিন্তাগুলো আসে সেগুলো চিহ্নিত করুন এবং বিশ্লেষণ করুন।
- ইতিবাচক চিন্তা চর্চা: “আমি নিরাপদ এবং শান্তিপূর্ণ ঘুম পাবো” এরকম ইতিবাচক চিন্তা গড়ে তুলুন।
সিবিটি থেরাপির টেকনিক ৩: স্লিপ হাইজিন (Sleep Hygiene)
স্লিপ হাইজিন উন্নত করা নাইট টেররস কমাতে সহায়ক হতে পারে।
- নিয়মিত ঘুমের রুটিন: প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান এবং একই সময়ে উঠুন, যা শারীরিক ও মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
- শান্ত পরিবেশ তৈরি করা: ঘুমানোর ঘরটি শান্ত, অন্ধকার এবং আরামদায়ক রাখুন।
- এলকোহল ও ক্যাফেইন এড়িয়ে চলা: রাতে এলকোহল বা ক্যাফেইন গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন, যা ঘুমের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
সিবিটি থেরাপির টেকনিক ৪: রিলাক্সেশন থেরাপি (Relaxation Therapy)
রিলাক্সেশন থেরাপি নাইট টেররসের লক্ষণগুলি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- প্রগ্রেসিভ মসল রিলাক্সেশন: শুয়ে থাকুন এবং শরীরের প্রতিটি পেশী ধীরে ধীরে শিথিল করুন। এটি আপনার শরীরকে শান্ত রাখতে এবং নাইট টেররসের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করবে।
- মেডিটেশন: ঘুমানোর আগে ধ্যান করতে পারেন, যা আপনার মানসিক চাপ হ্রাস করবে এবং ঘুমের গুণগত মান উন্নত করবে।
সিবিটি থেরাপির টেকনিক ৫: এক্সপোজার থেরাপি (Exposure Therapy)
নাইট টেররস থেকে আসা ভয় বা আতঙ্ক কমাতে এক্সপোজার থেরাপি কার্যকর হতে পারে।
- ধাপে ধাপে ভয়ের মুখোমুখি হওয়া: যে বিষয়গুলি নাইট টেররসের সময় ভয়ের উদ্রেক করে, সেই বিষয়গুলোকে ধীরে ধীরে মনের মধ্যে উপস্থাপন করুন এবং নিজেকে তা থেকে মুক্ত করতে সচেতন হোন।
- সহনশীলতার উন্নতি করা: ভয় বা আতঙ্ককে ধীরে ধীরে সহ্য করতে শিখুন, যা নাইট টেররস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হবে।
উপসংহার
নাইট টেররস একটি গুরুতর ঘুমের সমস্যা, তবে সঠিক সিবিটি থেরাপির টেকনিক প্রয়োগের মাধ্যমে এর লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। উপরের টেকনিকগুলো আপনাকে নাইট টেররসের সমস্যার থেকে মুক্তি পেতে এবং সুস্থ ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে। তবে যদি সমস্যাটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।