জ্বর সাধারণত শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার লক্ষণ, যা শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ঘটে। তবে অনেক সময় আমরা লক্ষ করি, জ্বর হলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলেও হাত-পা ঠান্ডা থাকে। এটি অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। আসুন, জ্বর হলে হাত-পা ঠান্ডা হওয়ার কারণ এবং এর পেছনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।
জ্বর হলে হাত-পা ঠান্ডা হওয়ার কারণ:
১. রক্ত সঞ্চালনের পরিবর্তন:
জ্বরের সময় শরীর নিজের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। শরীরের তাপমাত্রা বাড়ানোর জন্য প্রথমে রক্তনালী সংকুচিত হয়, বিশেষ করে হাত ও পায়ে। রক্তনালী সংকুচিত হলে ত্বকের নীচে রক্তের প্রবাহ কমে যায় এবং ত্বক ঠান্ডা হয়ে যায়। এটি শরীরের ভেতরে তাপ ধরে রাখার একটি পদ্ধতি। ফলে হাত এবং পায়ে রক্তের পরিমাণ কমে যায়, যার ফলে সেগুলো ঠান্ডা অনুভূত হয়।
২. শরীরের তাপমাত্রা সমন্বয় প্রক্রিয়া:
জ্বরের প্রাথমিক পর্যায়ে, শরীর যখন তাপমাত্রা বাড়ানোর চেষ্টা করে, তখন মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস অংশ শরীরকে সংকেত দেয় তাপমাত্রা বাড়াতে। এই সংকেতের ফলে শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে, কিন্তু ত্বক বা বাহ্যিক অংশে তাপমাত্রা এখনও কম থাকে। ফলে হাত-পা ঠান্ডা অনুভূত হয়, যদিও শরীরের মূল তাপমাত্রা বাড়ছে।
৩. শরীরের তাপ উৎপাদন প্রক্রিয়া:
জ্বর হলে শরীর বেশি তাপ উৎপন্ন করতে শুরু করে। এটি করতে গিয়ে শরীরের বাহ্যিক অংশ, যেমন হাত ও পা, প্রথমে ঠান্ডা হয়ে যায় কারণ শরীরের কেন্দ্রস্থলে বেশি তাপ জমা হতে থাকে। যখন তাপ উৎপাদন প্রক্রিয়া পুরোপুরি কার্যকর হয়, তখন শরীরের অন্যান্য অংশে তাপ অনুভূত হতে শুরু করে।
৪. বাইরের তাপমাত্রার সাথে শরীরের প্রতিক্রিয়া:
শীতকালে বা ঠান্ডা আবহাওয়ায় জ্বর হলে হাত-পা আরও বেশি ঠান্ডা অনুভূত হতে পারে, কারণ বাইরের তাপমাত্রার সাথে শরীরের প্রতিক্রিয়া যুক্ত হয়। শরীর নিজের তাপমাত্রা বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করলেও হাত-পায়ে রক্তের প্রবাহ কম থাকায় সেগুলো ঠান্ডা হয়ে থাকে।
জ্বরের সময় হাত-পা ঠান্ডা হওয়া স্বাভাবিক কি?
হ্যাঁ, জ্বরের সময় হাত-পা ঠান্ডা হওয়া একটি সাধারণ এবং স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এটি ঘটে থাকে। তবে যদি এই অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং শারীরিক অস্বস্তি বাড়তে থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
প্রতিকার এবং যত্ন:
জ্বরের সময় হাত-পা ঠান্ডা থাকলে কিছু সহজ পদ্ধতি অবলম্বন করে স্বস্তি পাওয়া যায়:
১. গরম পোশাক পরিধান:
হাত-পা ঠান্ডা থাকলে গরম পোশাক বা মোজা পরুন। এটি হাত-পায়ে তাপ ধরে রাখতে সহায়ক হবে এবং ঠান্ডা অনুভূতি কমাবে।
২. তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ:
যদি ঘরের তাপমাত্রা খুব বেশি কম হয়, তাহলে হিটার বা অন্যান্য গরম ব্যবস্থা ব্যবহার করুন। জ্বরের সময় হাত-পা ঠান্ডা হওয়া নিয়ন্ত্রণে ঘরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখা জরুরি।
৩. পর্যাপ্ত পানি পান করুন:
জ্বরের সময় শরীর ডিহাইড্রেটেড হতে পারে, যা ঠান্ডা অনুভূতি বাড়াতে পারে। পর্যাপ্ত পানি পান করলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয় এবং শরীরের অন্যান্য অংশও স্বাভাবিক তাপমাত্রা পেতে পারে।
৪. বিশ্রাম নিন:
জ্বরের সময় পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শরীর বিশ্রামে থাকলে নিজেকে দ্রুত সেরে ওঠার সুযোগ দেয়। বিশ্রামের সময় শরীর তাপমাত্রা সমন্বয় করতে সক্ষম হয় এবং ঠান্ডা হাত-পা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ফিরে আসে।
৫. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
যদি জ্বর দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং হাত-পা ঠান্ডা থাকার পাশাপাশি অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয় (যেমন: শ্বাসকষ্ট, অতি দুর্বলতা), তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। জ্বরের প্রকৃতি নির্ধারণ করে উপযুক্ত চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।
উপসংহার:
জ্বরের সময় হাত-পা ঠান্ডা হওয়া একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রতিক্রিয়া, যা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার অংশ। তবে এটি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা অস্বস্তি বাড়ে, তাহলে সঠিক যত্ন এবং চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত। পর্যাপ্ত বিশ্রাম, গরম পোশাক, এবং শরীর হাইড্রেট রাখা জ্বরের সময় আরাম পেতে সহায়ক হতে পারে।