গর্ভাবস্থায় কতবার আলট্রাসাউন্ড করা উচিত

গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আলট্রাসাউন্ড একটি অত্যাবশ্যক টেস্ট যা গর্ভাবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ পরীক্ষা করতে সাহায্য করে। অনেক মায়ের মনে প্রশ্ন থাকে, গর্ভাবস্থায় কতবার আলট্রাসাউন্ড করা উচিত? এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করে গর্ভাবস্থার জটিলতা, শিশুর স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং চিকিৎসকের পরামর্শের ওপর।

আলট্রাসাউন্ডের ভূমিকা

আলট্রাসাউন্ড এক প্রকার ইমেজিং প্রযুক্তি যা উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে শিশুর ছবি তৈরি করে। এটি মা এবং শিশুর কোনো ক্ষতি করে না। গর্ভাবস্থার বিভিন্ন সময়ে আলট্রাসাউন্ড বিভিন্ন ধরনের তথ্য দেয়, যেমন:

  • শিশুর হার্টবিট পরীক্ষা করা
  • শিশুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গঠনের সঠিকতা নির্ণয় করা
  • শিশুর বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করা
  • যমজ বা একাধিক শিশুর গর্ভাবস্থা শনাক্ত করা
  • গর্ভফুল এবং অ্যামনিওটিক ফ্লুইডের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা

raju akon youtube channel subscribtion

প্রথম ত্রৈমাসিকে আলট্রাসাউন্ড

গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকে, সাধারণত ৬ থেকে ৯ সপ্তাহের মধ্যে প্রথম আলট্রাসাউন্ড করা হয়। এই পরীক্ষাটি প্রাথমিকভাবে গর্ভাবস্থার নিশ্চিতকরণ এবং শিশুর হৃদস্পন্দন পরীক্ষা করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এসময় আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে শিশুর অবস্থান, গর্ভকাল এবং গর্ভের ভিতরে শিশুর স্বাস্থ্য যাচাই করা হয়।

দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে আলট্রাসাউন্ড

দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে, সাধারণত ১৮ থেকে ২২ সপ্তাহের মধ্যে একটি ডিটেইলড আলট্রাসাউন্ড করা হয়, যাকে “এনোমালি স্ক্যান” বলা হয়। এই পরীক্ষার মাধ্যমে শিশুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, মস্তিষ্ক, হার্ট এবং কিডনি সহ অন্যান্য অঙ্গগুলোর গঠন পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া, শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণও করা যেতে পারে এই পর্যায়ে।

তৃতীয় ত্রৈমাসিকে আলট্রাসাউন্ড

তৃতীয় ত্রৈমাসিকে সাধারণত ৩২ থেকে ৩৬ সপ্তাহের মধ্যে আলট্রাসাউন্ড করা হয়। এই সময়ে শিশুর অবস্থান, গর্ভফুলের অবস্থান, অ্যামনিওটিক ফ্লুইডের পরিমাণ এবং শিশুর ওজন পরীক্ষা করা হয়। যদি কোন সমস্যা দেখা দেয়, যেমন প্লাসেন্টার অবস্থান নীচে নেমে যাওয়া বা শিশুর ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম বা বেশি হলে, চিকিৎসক অতিরিক্ত আলট্রাসাউন্ড পরামর্শ দিতে পারেন।

জটিল গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত আলট্রাসাউন্ডের প্রয়োজন

যদি গর্ভাবস্থায় কোন ঝুঁকি বা জটিলতা থাকে, যেমন গর্ভাশয়ের সমস্যার জন্য বা যমজ সন্তানের গর্ভাবস্থা, তবে চিকিৎসক আরও ঘন ঘন আলট্রাসাউন্ড করতে পরামর্শ দিতে পারেন। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা অন্য কোন স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকলে, শিশুর স্বাস্থ্যের উপর নজর রাখার জন্য অতিরিক্ত আলট্রাসাউন্ড করা প্রয়োজন হতে পারে।

সারসংক্ষেপ

গর্ভাবস্থায় আলট্রাসাউন্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট যা মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের তথ্য দেয়। সাধারণত তিনটি প্রধান পর্যায়ে আলট্রাসাউন্ড করা হয়: প্রথম ত্রৈমাসিকে, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে, এবং তৃতীয় ত্রৈমাসিকে। তবে চিকিৎসক যদি মনে করেন, গর্ভাবস্থার ঝুঁকি বা জটিলতা আছে, তাহলে আরও বেশি আলট্রাসাউন্ড করা হতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top