কোলন ক্যান্সার বা মলাশয়ের ক্যান্সার হলো মলাশয়ের (বৃহদান্ত্র) অভ্যন্তরে অস্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধি যা ক্যান্সার কোষে পরিণত হয়। এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ধীরে ধীরে শুরু হয় এবং প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করা গেলে চিকিৎসা করা সহজ। তবে কোলন ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণগুলো খুব স্পষ্ট না হওয়ায় অনেকেই দেরিতে চিকিৎসা শুরু করেন। তাই কোলন ক্যান্সারের লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
কোলন ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ
কোলন ক্যান্সারের কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
১. মলের ধরন পরিবর্তন:
মলাশয়ে ক্যান্সার হলে মলের ধরন ও গঠন পরিবর্তন হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে তা হতে পারে কোলন ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ।
২. মলে রক্ত আসা:
মলের সাথে রক্ত আসা বা কালো রঙের মল হওয়া কোলন ক্যান্সারের আরেকটি বড় লক্ষণ। যদিও এটি পাইলস বা অন্য কোন কারণেও হতে পারে, তবে এটি অবহেলা না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
৩. অপ্রয়োজনীয় ওজন হ্রাস:
কোলন ক্যান্সারের কারণে শরীরের ওজন দ্রুত কমে যেতে পারে। বিশেষ করে যখন খাবারের প্রতি অরুচি বা ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়।
৪. শরীরে ক্লান্তি ও দুর্বলতা:
ক্যান্সারের কারণে শরীরের কোষগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে কোলন ক্যান্সারের রোগীরা সবসময় ক্লান্তি অনুভব করতে পারে।
৫. পেটে ব্যথা ও অস্বস্তি:
পেটে নিয়মিত ব্যথা, ফাঁপা, গ্যাস বা অস্বস্তি অনুভব করা কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। বিশেষত, যদি এটি দীর্ঘমেয়াদী হয় এবং কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই ঘটে।
৬. মলের পূর্ণতা অনুভব হওয়া:
মলত্যাগের পরেও পেটের পূর্ণতা বা মলের অনুভূতি থেকে যাওয়া কোলন ক্যান্সারের আরেকটি লক্ষণ হতে পারে।
কোলন ক্যান্সারের কারণ ও ঝুঁকি ফ্যাক্টর
কোলন ক্যান্সারের সঠিক কারণ এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি, তবে কিছু ঝুঁকিপূর্ণ ফ্যাক্টর রয়েছে যা কোলন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে:
- বয়স: ৫০ বছরের বেশি বয়সের ব্যক্তিদের মধ্যে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি।
- অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: বেশি পরিমাণে চর্বিযুক্ত, প্রক্রিয়াজাত এবং লাল মাংস খাওয়া ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- জিনগত প্রভাব: পারিবারিক ইতিহাসে ক্যান্সার থাকলে কোলন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
- ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন: ধূমপান ও অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।
- অধিক ওজন ও শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা: শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় থাকা এবং অতিরিক্ত ওজন কোলন ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়ায়।
কোলন ক্যান্সারের চিকিৎসা
কোলন ক্যান্সারের চিকিৎসা রোগীর ক্যান্সারের পর্যায় এবং শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে। কোলন ক্যান্সারের চিকিৎসা সাধারণত নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে করা হয়:
১. সার্জারি (অপারেশন):
প্রাথমিক পর্যায়ে কোলন ক্যান্সার হলে সার্জারি করে ক্যান্সারযুক্ত অংশ মলাশয় থেকে সরানো যেতে পারে। ক্যান্সার কোষ ছড়িয়ে না পড়লে শুধুমাত্র আক্রান্ত অংশ অপসারণ করাই যথেষ্ট হতে পারে।
২. কেমোথেরাপি:
কেমোথেরাপি হলো এমন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যা ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে সাহায্য করে। সার্জারির পর বা পূর্বে কেমোথেরাপি দেওয়া হতে পারে, যাতে ক্যান্সার কোষ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়।
৩. রেডিয়েশন থেরাপি:
রেডিয়েশন থেরাপি উচ্চমাত্রার রেডিয়েশন ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করে। এটি সাধারণত সার্জারির পর বা ক্যান্সারের আকার ছোট করার জন্য দেওয়া হয়।
৪. টার্গেটেড থেরাপি:
এটি একটি আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে নির্দিষ্ট ক্যান্সার কোষকে টার্গেট করে ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। এর ফলে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস হয় এবং সুস্থ কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।
কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়
কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করার জন্য কিছু সঠিক অভ্যাস মেনে চলা প্রয়োজন:
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা: ফল, শাকসবজি এবং ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার বেশি খেতে হবে। চর্বি এবং প্রক্রিয়াজাত মাংস খাওয়া সীমিত করতে হবে।
- নিয়মিত ব্যায়াম করা: শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানো এবং শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে।
- ধূমপান ও মদ্যপান এড়িয়ে চলা: ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকুন।
- নিয়মিত স্ক্রিনিং করা: ৫০ বছরের পর থেকে নিয়মিত কোলন ক্যান্সার স্ক্রিনিং করা উচিত। এতে প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার সনাক্ত করা যায়।
উপসংহার
কোলন ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব। তাই কোলন ক্যান্সারের লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি কোনো লক্ষণ দেখা দেয় তবে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.