কোভিডের কারণে স্মৃতিভ্রম: কারণ ও প্রতিরোধের উপায়

কোভিড-১৯ মহামারির পর থেকে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যার প্রভাব দেখা যাচ্ছে, যার মধ্যে একটি হচ্ছে স্মৃতিভ্রম বা মেমোরি লস। অনেকেই কোভিড থেকে সুস্থ হওয়ার পর স্মৃতিভ্রমের সমস্যায় ভুগছেন। এটি কোভিড-১৯ এর লং-টার্ম প্রভাব বা পোস্ট-কোভিড সিনড্রোমের অংশ হিসেবে দেখা যেতে পারে। এই অবস্থা রোগীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলে এবং মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

কোভিডের কারণে স্মৃতিভ্রমের কারণসমূহ:

কোভিড-১৯ রোগটি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের উপর প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রে। গবেষকরা মনে করছেন, কোভিড-১৯ এর কারণগুলোর মধ্যে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো স্মৃতিভ্রমের জন্য দায়ী হতে পারে:

১. ব্রেন ফগ:

কোভিডের কারণে সৃষ্ট একটি সাধারণ উপসর্গ হলো “ব্রেন ফগ”, যার ফলে রোগীর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার সমস্যা হয়। এটি স্বল্পমেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতিভ্রম ঘটাতে পারে এবং চিন্তাভাবনার ক্ষমতা হ্রাস পায়।

raju akon youtube channel subscribtion

২. মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহে বাধা:

কোভিড-১৯ এর কারণে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হতে পারে, যা মস্তিষ্কের কোষে অক্সিজেন সরবরাহ কমিয়ে দেয়। এই অবস্থাটি স্মৃতিভ্রমসহ অন্যান্য মানসিক সমস্যার কারণ হতে পারে।

৩. স্নায়ু প্রভাব:

কোভিড-১৯ ভাইরাসটি স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রান্ত করতে পারে, যার ফলে স্নায়বিক সমস্যা দেখা দেয়। স্মৃতিভ্রম এই স্নায়বিক প্রভাবগুলোর একটি সাধারণ উপসর্গ।

৪. দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ ও উদ্বেগ:

কোভিডের কারণে শারীরিক অসুস্থতা ছাড়াও অনেকের মধ্যে মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং হতাশা দেখা দেয়। দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়, যার ফলে স্মৃতিভ্রমের সমস্যা দেখা দেয়।

স্মৃতিভ্রম প্রতিরোধে করণীয়:

১. পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম:

মস্তিষ্ককে পুনরুদ্ধার করার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। ঘুমের ঘাটতি স্মৃতিভ্রমের সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে, তাই নিয়মিত ও পর্যাপ্ত ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুলুন।

২. মানসিক ব্যায়াম ও স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট:

মানসিকভাবে সতেজ থাকতে নিয়মিত মানসিক ব্যায়াম করা জরুরি। যেমন- পাজল সমাধান করা, নতুন কিছু শেখা, বই পড়া ইত্যাদি। এছাড়া, ধ্যান, যোগব্যায়াম ও শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টে সাহায্য করতে পারে।

৩. পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ:

স্মৃতিভ্রম প্রতিরোধে পুষ্টিকর খাবার অত্যন্ত কার্যকরী। মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন বি, ভিটামিন ই, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। শাকসবজি, বাদাম, মাছ এবং ফলের মতো খাবার মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে সহায়ক।

৪. ব্যায়াম ও শারীরিক কার্যকলাপ:

নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম মস্তিষ্কের রক্তপ্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা ব্যায়াম করা উচিত।

৫. মনোযোগ বৃদ্ধির অনুশীলন:

স্মৃতিভ্রমের সমস্যা কমাতে মনোযোগ বাড়ানোর কিছু অনুশীলন করতে পারেন। যেমন, মনোযোগ দিয়ে একটি নির্দিষ্ট কাজ করা, এক সময়ে একাধিক কাজ না করা ইত্যাদি।

৬. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:

কোভিড পরবর্তী স্মৃতিভ্রমের সমস্যা খুব বেশি হলে দ্রুত একজন নিউরোলজিস্ট বা মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। তারা প্রয়োজনীয় পরীক্ষার মাধ্যমে সমস্যার কারণ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা দিতে পারবেন।

স্মৃতিভ্রম থেকে সুস্থতা:

কোভিডের কারণে স্মৃতিভ্রমের সমস্যা ধীরে ধীরে সুস্থ হতে পারে, তবে এটি সময়সাপেক্ষ। প্রতিদিনের জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এনে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। যেমন:

  • মানসিক চাপ কমিয়ে রাখা
  • স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা
  • শারীরিক ও মানসিক ব্যায়াম করা
  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া

উপসংহার:

কোভিড-১৯ এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবের মধ্যে স্মৃতিভ্রম একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সঠিক যত্ন, চিকিৎসা এবং জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। সঠিক বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাবার, শারীরিক ও মানসিক ব্যায়ামের মাধ্যমে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করা যেতে পারে। কোভিড পরবর্তী সময়ে যেকোনো স্মৃতিভ্রমের সমস্যায় দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত, যাতে সমস্যার আরও জটিলতা না বাড়ে।

ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top