অ্যালার্জি বা এলার্জি হলো শরীরের ইমিউন সিস্টেমের একটি অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া, যা সাধারণত কোনো নির্দিষ্ট উপাদান বা অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে আসার ফলে ঘটে। এটি তেমন কোনো মারাত্মক রোগ নয়, তবে অস্বস্তিকর ও বিভিন্ন জটিল সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। অ্যালার্জি সাধারণত বিভিন্ন ধরণের উপাদানের কারণে হয়, যেমন খাদ্য, ফুলের রেণু, ধুলাবালি, পোষা প্রাণীর লোম, ওষুধ ইত্যাদি।
অ্যালার্জির লক্ষণ
অ্যালার্জির লক্ষণ একেকজনের জন্য একেক রকম হতে পারে। কারো জন্য এটি সামান্য চুলকানি বা হাঁচি হতে পারে, আবার কারো ক্ষেত্রে এটি খুব গুরুতর হতে পারে। কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
- হাঁচি ও সর্দি: এটি অ্যালার্জির সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ। নাকে চুলকানি এবং নাক দিয়ে পানি পড়তে থাকে।
- চোখে চুলকানি ও পানি পড়া: অ্যালার্জির কারণে চোখে লালচেভাব, চুলকানি এবং পানি পড়তে পারে।
- ত্বকের র্যাশ বা চুলকানি: কিছু ক্ষেত্রে অ্যালার্জি ত্বকে র্যাশ বা চুলকানি তৈরি করতে পারে।
- শ্বাসকষ্ট: ধুলাবালি বা পোষা প্রাণীর লোমের কারণে অনেক সময় শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
- কাশি: কিছু অ্যালার্জি শ্বাসনালীকে প্রভাবিত করে, ফলে কাশি হতে পারে।
অ্যালার্জির কারণ
অ্যালার্জি সাধারণত কোনো নির্দিষ্ট অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে আসার ফলে হয়। সাধারণ কিছু অ্যালার্জেনের মধ্যে রয়েছে:
- ধুলাবালি ও মাইটস: বাড়ির ধুলাবালিতে থাকা অণুজীব মাইটস অ্যালার্জির একটি প্রধান কারণ।
- ফুলের রেণু: ফুলের রেণু অনেকের জন্য অ্যালার্জির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, বিশেষ করে বসন্তকালে।
- খাদ্য: কিছু বিশেষ খাদ্য যেমন বাদাম, ডিম, দুধ, সয়াবিন, এবং সামুদ্রিক খাবার অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে।
- পোষা প্রাণীর লোম: কুকুর, বিড়ালের লোম বা ত্বকের ছোট ছোট কণা থেকে অ্যালার্জি হতে পারে।
- ওষুধ: কিছু মানুষ ওষুধ যেমন অ্যান্টিবায়োটিক, পেইনকিলার, এবং অ্যাসপিরিনের প্রতিক্রিয়ায় অ্যালার্জি অনুভব করে।
- কেমিক্যাল বা সুগন্ধি: কিছু প্রসাধনী, সাবান, সুগন্ধি ও গৃহস্থালি রাসায়নিক পদার্থ থেকেও অ্যালার্জি হতে পারে।
অ্যালার্জি প্রতিরোধ ও প্রতিকার
অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব, যদি কিছু নিয়ম মেনে চলা হয় এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। নিচে কিছু সাধারণ প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ দেওয়া হলো:
১. অ্যালার্জেন থেকে দূরে থাকুন
আপনার অ্যালার্জির উৎস যদি জানা থাকে, তাহলে তা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন। উদাহরণস্বরূপ, যদি ধুলাবালিতে অ্যালার্জি হয়, তাহলে বাড়ি নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন।
২. অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ ব্যবহার
অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ অ্যালার্জির লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এসব ওষুধ ব্যবহার না করাই ভালো।
৩. নাক পরিষ্কার রাখুন
নাক দিয়ে হাঁচি ও সর্দি বেশি হলে, নাক পরিষ্কার রাখার জন্য লবণ পানি দিয়ে নাক ধুয়ে ফেলুন।
৪. এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার
বাড়ির ভেতরের বাতাসকে পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন। এটি বাতাস থেকে ধুলা ও অ্যালার্জেন দূর করতে সাহায্য করে।
৫. ইমিউন থেরাপি
কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তার ইমিউন থেরাপির পরামর্শ দিতে পারেন। এটি শরীরকে অ্যালার্জেনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
৬. প্রয়োজনীয় খাদ্যাভ্যাস
শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী রাখতে ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। বিশেষ করে ভিটামিন C সমৃদ্ধ খাবার যেমন কমলা, লেবু ইত্যাদি খাবার অ্যালার্জি প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।
উপসংহার
অ্যালার্জি একটি সাধারণ সমস্যা হলেও, সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। অ্যালার্জেন থেকে দূরে থাকা, নিয়মিত চিকিৎসা নেওয়া এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এই সমস্যাকে অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে। তাছাড়া ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ও থেরাপি গ্রহণ করলে অ্যালার্জির সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.