দুশ্চিন্তা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি সাধারণ অংশ, তবে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ শরীর ও মনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। দীর্ঘদিন ধরে দুশ্চিন্তা করলে অনিদ্রা, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, এবং মানসিক চাপের মতো নানা শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরি। এখানে কিছু উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো যা আপনাকে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা দূর করতে সহায়ক হবে।
১. দৈনিক রুটিনে মেডিটেশন ও শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন:
মেডিটেশন ও শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রিত ব্যায়াম (ব্রিদিং এক্সারসাইজ) দুশ্চিন্তা কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। প্রতিদিন নিয়মিতভাবে ১০-১৫ মিনিট গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করলে মনের প্রশান্তি বাড়ে এবং মনকে শিথিল করে।
২. পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন:
ঘুমের অভাব আমাদের মস্তিষ্কে স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বাড়ায়, যা দুশ্চিন্তা বৃদ্ধি করে। তাই প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা প্রয়োজন। ঘুমানোর আগে মোবাইল বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস এড়িয়ে চলুন এবং একটি শান্ত পরিবেশ তৈরি করুন।
৩. শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করুন:
নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম মনকে চাঙ্গা করে এবং দুশ্চিন্তা কমায়। নিয়মিত হালকা ব্যায়াম যেমন হাঁটাহাঁটি, সাঁতার, যোগব্যায়াম করলে স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণ কমে এবং মানসিক প্রশান্তি আসে।
৪. মাইন্ডফুলনেস প্র্যাকটিস করুন:
মাইন্ডফুলনেস হলো বর্তমান মুহূর্তে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার একটি কার্যকর কৌশল। এতে মনকে বর্তমানের পরিস্থিতিতে স্থির রাখা যায় এবং অপ্রয়োজনীয় চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এটি দুশ্চিন্তা কমাতে এবং মানসিক স্থিতি বজায় রাখতে সহায়ক।
৫. সমস্যাগুলি ভাগ করে নিন:
যেকোনো সমস্যা বা চিন্তা নিজের মধ্যে রেখে দুশ্চিন্তা করা মানসিক চাপ বাড়ায়। বন্ধুবান্ধব, পরিবার বা কাউন্সেলরের সাথে আপনার সমস্যাগুলি ভাগ করে নিন। অন্যের সাথে কথা বললে মনের চাপ কমে এবং নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে সমাধান পাওয়া যায়।
৬. হেলদি ডায়েট মেনে চলুন:
সুষম খাদ্য গ্রহণ মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে সহায়ক। প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাকসবজি, ফল, বাদাম, মাছ, এবং হোল গ্রেইন খাবার মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায় এবং দুশ্চিন্তা কমায়। অতিরিক্ত ক্যাফেইন বা চিনি গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন, কারণ এগুলো দুশ্চিন্তা বাড়াতে পারে।
৭. অতীত ও ভবিষ্যতের চিন্তা এড়িয়ে চলুন:
অতীতের ভুল বা ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করলে দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়। তাই বর্তমান পরিস্থিতির উপর ফোকাস রাখুন এবং পরিস্থিতি যেমন আছে তা মেনে নিতে শিখুন।
৮. মিউজিক থেরাপি:
শান্ত বা সুমধুর সঙ্গীত মনকে শান্ত করতে সহায়ক। আপনি আপনার পছন্দমতো সঙ্গীত শুনে মানসিক চাপ কমাতে পারেন। গবেষণায় দেখা গেছে, নির্দিষ্ট কিছু ধরণের সঙ্গীত দুশ্চিন্তা দূর করতে সহায়ক।
৯. প্রকৃতির সাথে সময় কাটান:
প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটানো দুশ্চিন্তা কমানোর একটি প্রাকৃতিক উপায়। গাছগাছালি, সবুজ মাঠ, বা সমুদ্রের ধারে সময় কাটালে মানসিক প্রশান্তি আসে। নিয়মিত প্রকৃতির সাথে যুক্ত থাকার অভ্যাস করলে মনের চাপ কমে।
১০. পেশাদার পরামর্শ নিন:
যদি আপনার দুশ্চিন্তা খুব বেশি বেড়ে যায় এবং নিজের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না হয়, তাহলে একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। সাইকোথেরাপি বা কাউন্সেলিং আপনাকে সমস্যাগুলি বিশ্লেষণ করতে এবং কার্যকর সমাধান খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারে।
উপসংহার:
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা আপনার জীবনযাত্রাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। তবে জীবনযাপনে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যেমন মেডিটেশন, নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহণ করলে দুশ্চিন্তা দূর করা সম্ভব। মনের যত্ন নেওয়া এবং নিয়মিত মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি মনোযোগ দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.