google.com, pub-1016891184419719, DIRECT, f08c47fec0942fa0 অটিজম কীভাবে বুঝবো: প্রাথমিক লক্ষণ ও সঠিক নির্ণয় - Raju Akon

অটিজম কীভাবে বুঝবো: প্রাথমিক লক্ষণ ও সঠিক নির্ণয়

অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (ASD) একটি জটিল বিকাশগত ব্যাধি, যা সামাজিক যোগাযোগ, আচরণ এবং শেখার প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে। অটিজম সাধারণত শিশুর শৈশবে শুরু হয় এবং বয়সের সাথে সাথে প্রকাশ পায়। কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে এই অবস্থা শনাক্ত করা কঠিন হতে পারে। এই ব্লগে আমরা আলোচনা করবো অটিজম কীভাবে বুঝতে পারবেন এবং এর প্রাথমিক লক্ষণগুলো।

অটিজমের লক্ষণ কী কী?

অটিজমের লক্ষণগুলো সাধারণত ২-৩ বছর বয়সের মধ্যে স্পষ্ট হয়, যদিও কিছু ক্ষেত্রে ১২-১৮ মাসের মধ্যেও লক্ষণ দেখা যেতে পারে। লক্ষণগুলো তিনটি প্রধান ক্ষেত্রে বিভক্ত:

১. সামাজিক যোগাযোগ ও পারস্পরিক ক্রিয়া

  • চোখে চোখ রেখে কথা না বলা।
  • নাম ধরে ডাকলে সাড়া না দেওয়া।
  • আবেগ বা অনুভূতি প্রকাশে সমস্যা।
  • কথা বলা শিখতে দেরি হওয়া বা একদম না বলা।
  • অন্যদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে অক্ষমতা।
  • একপাক্ষিক কথোপকথন বা নিজেই কথা চালিয়ে যাওয়া।
  • হাসতে, কাঁদতে বা অন্যদের অনুভূতির সাথে একাত্ম হতে অসুবিধা।

raju akon youtube channel subscribtion

২. আচরণগত বৈশিষ্ট্য

  • নির্দিষ্ট রুটিন বা কার্যক্রমে আঁকড়ে থাকা।
  • একই কাজ বারবার করা, যেমন হাত নাড়ানো, মাথা ঠোকানো।
  • একই খেলনা বা বস্তু নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা খেলা।
  • পরিবর্তন হলে রাগ বা উত্তেজনা দেখা দেওয়া।
  • অস্বাভাবিকভাবে কিছু বিষয় বা বিষয়ে গভীর আগ্রহ দেখানো।

৩. সংবেদনশীলতার সমস্যা

  • আলোর প্রতি অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা।
  • শব্দে ভয় পাওয়া বা বিরক্ত হওয়া।
  • নির্দিষ্ট গন্ধ বা স্বাদের প্রতি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া।
  • শরীর স্পর্শ করলে অস্বস্তি বোধ করা।

অটিজমের প্রাথমিক লক্ষণ

প্রথম দিকে কিছু সাধারণ লক্ষণ থাকে যা দেখে অটিজম বোঝা যায়। সেগুলো হলো:

  • ৬ মাসের মধ্যে হাসি বা আনন্দ প্রকাশের অনুপস্থিতি।
  • ৯ মাসে সাড়া না দেওয়া।
  • ১ বছরের মধ্যে একক শব্দ উচ্চারণ না করা।
  • ১৮ মাসের মধ্যে ভাষার বিকাশে উল্লেখযোগ্য বিলম্ব।
  • কোনও সামাজিক পরিস্থিতিতে আগ্রহ দেখানো না।

কিভাবে অটিজম নির্ণয় করবেন?

অটিজম নির্ণয়ের ক্ষেত্রে কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হয়। প্রাথমিকভাবে, যদি উপরের লক্ষণগুলোর কোনোটির উপস্থিতি দেখা যায়, তবে দ্রুত একজন শিশু বিকাশ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নির্ণয়ের জন্য কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে, যেমন:

১. Developmental Screening

এটি একটি প্রাথমিক পর্যায়ের পরীক্ষা, যা শিশুর শেখার এবং শারীরিক বিকাশের মূল্যায়ন করে। চিকিৎসক শিশুর সামাজিক যোগাযোগ, ভাষাগত দক্ষতা, এবং আচরণ মূল্যায়ন করে।

২. Comprehensive Diagnostic Evaluation

এই পরীক্ষা একটি বিশেষজ্ঞ বা শিশু সাইকোলজিস্ট দ্বারা পরিচালিত হয়, যেখানে শিশুর জিনগত পরীক্ষা, নিউরোলজিক্যাল পরীক্ষা এবং অন্যান্য পরীক্ষা করা হয়। এতে অটিজমের উপস্থিতি এবং অন্যান্য বিকাশগত ব্যাধি নির্ণয় করা হয়।

৩. ADOS (Autism Diagnostic Observation Schedule)

এটি অটিজম নির্ণয়ের একটি পদ্ধতি, যেখানে শিশুর আচরণ এবং সামাজিক যোগাযোগের ক্ষমতা মূল্যায়ন করা হয়। বিশেষজ্ঞরা শিশুর বিভিন্ন অবস্থায় প্রতিক্রিয়া দেখে অটিজমের উপস্থিতি মূল্যায়ন করে।

চিকিৎসা ও সেবা

অটিজম নির্ণয়ের পর, সঠিক থেরাপি এবং শিক্ষামূলক সহায়তা দিয়ে শিশুর বিকাশকে সহায়তা করা সম্ভব। অটিজমের জন্য ব্যবহৃত কিছু প্রধান থেরাপি হলো:

  • ABA (Applied Behavior Analysis) থেরাপি।
  • স্পিচ থেরাপি।
  • অকুপেশনাল থেরাপি।
  • সামাজিক দক্ষতা উন্নয়ন থেরাপি।

উপসংহার

অটিজমের লক্ষণগুলো বোঝা এবং দ্রুত সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া শিশুদের বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন হলে, অভিভাবকরা দ্রুত চিকিৎসা ও শিক্ষামূলক সহায়তা শুরু করতে পারেন, যা অটিজম আক্রান্ত শিশুর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ উন্নতি এনে দিতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top