অটিজম একটি নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার, যা সামাজিক যোগাযোগের সমস্যা, আচরণগত জটিলতা এবং স্বতন্ত্র আগ্রহের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আসে। অটিজমকে সাধারণত একক কোনো রোগ হিসেবে বিবেচনা না করে, এর বিভিন্ন রকমের ধরন বা স্পেকট্রাম রয়েছে। এগুলো একত্রে ‘অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার’ (ASD) নামে পরিচিত। অটিজমের কয়েকটি প্রধান প্রকার বা ধরন রয়েছে, যা বিভিন্ন লক্ষণ এবং তীব্রতা অনুযায়ী ভিন্ন হয়ে থাকে।
অটিজমের প্রধান ধরন
অটিজমকে সাধারণত চারটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়। প্রতিটি ধরন বিভিন্ন লক্ষণ ও তীব্রতার সঙ্গে যুক্ত, এবং তাদের জন্য বিশেষ চিকিৎসা বা সহায়তা প্রয়োজন।
১. অটিস্টিক ডিসঅর্ডার (Autistic Disorder)
এটি হলো অটিজম স্পেকট্রামের প্রাথমিক এবং সবচেয়ে সুপরিচিত ধরন। একে ‘ক্লাসিকাল অটিজম’ বলা হয়। এই ধরনের অটিজমে আক্রান্তদের মধ্যে সাধারণত নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য দেখা যায়:
- সামাজিক মিথস্ক্রিয়া এবং যোগাযোগে অসুবিধা।
- ভাষাগত এবং অ-মৌখিক যোগাযোগে দেরি।
- সীমিত এবং পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ।
২. আস্পার্জার সিনড্রোম (Asperger Syndrome)
আস্পার্জার সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত বুদ্ধিমত্তায় স্বাভাবিক বা তার উপরে থাকেন। তবে তাদের সামাজিক যোগাযোগের দক্ষতা কম থাকে। এদের মধ্যে রয়েছে:
- সামাজিক পরিস্থিতিতে অসুবিধা।
- বিশেষ কোনো বিষয়ে গভীর আগ্রহ বা দক্ষতা।
- অল্প স্বাভাবিক আচরণে সীমাবদ্ধতা এবং কম পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ।
৩. পারভাসিভ ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার – নট আদারওয়াইজ স্পেসিফাইড (PDD-NOS)
যাদের অটিজমের কিছু লক্ষণ রয়েছে, কিন্তু তারা ক্লাসিকাল অটিজম বা আস্পার্জারের জন্য পুরোপুরি উপযুক্ত নয়, তাদের PDD-NOS বলা হয়। এই ধরনের অটিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিরা:
- সামাজিক বা ভাষাগত যোগাযোগে সমস্যা অনুভব করেন।
- কিছু লক্ষণ অনেকটা মৃদু হতে পারে।
৪. রেট সিনড্রোম (Rett Syndrome)
রেট সিনড্রোম খুবই বিরল, এবং সাধারণত মেয়েদের মধ্যে পাওয়া যায়। এটি জেনেটিক মিউটেশনের কারণে হয় এবং এর লক্ষণগুলি ক্রমান্বয়ে দেখা দেয়:
- শারীরিক ও মানসিক বিকাশের স্থগিততা।
- হাতের অস্বাভাবিক চলাচল, যেমন বারবার হাত ঘষা বা মোচড়ানো।
- যোগাযোগ এবং সামাজিক দক্ষতার ক্ষতি।
উপসংহার
অটিজম একটি জটিল এবং বহুমুখী অবস্থার নাম, যা ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। অটিজমের প্রতিটি ধরন ভিন্ন হলেও, তাদের জন্য বিশেষ সহায়তা, থেরাপি এবং শিক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়। অটিজমের নির্দিষ্ট ধরন এবং লক্ষণ নির্ধারণ করে চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের জীবনকে উন্নত করা সম্ভব।