মহিলাদের যৌন সমস্যা, বিশেষ করে সহবাসে অনিহা বা যৌন আগ্রহের অভাব, একটি সাধারণ এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি সম্পর্কের মাঝে দূরত্ব তৈরি করতে পারে এবং মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যৌন সমস্যার মূল কারণ শারীরিক, মানসিক, হরমোনজনিত এবং সম্পর্কগত বিভিন্ন ফ্যাক্টরের উপর নির্ভরশীল।
মহিলাদের যৌন সমস্যার কারণ
১. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ
বেশিরভাগ সময় মানসিক চাপ ও উদ্বেগ যৌন আগ্রহের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কাজের চাপ, ব্যক্তিগত জীবনের সমস্যার কারণে মহিলারা যৌন ইচ্ছা হারিয়ে ফেলতে পারেন।
২. হরমোনের পরিবর্তন
মেনোপজ, গর্ভাবস্থা, জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বা হরমোনজনিত অসুবিধা মহিলাদের যৌন ইচ্ছা কমিয়ে দেয়। ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমে গেলে যৌন আগ্রহ কমে যায় এবং যৌন সম্পর্কের সময় অস্বস্তি হতে পারে।
৩. শারীরিক ক্লান্তি
দৈনন্দিন জীবনের শারীরিক ক্লান্তি, ঘুমের অভাব, বা অপুষ্টি মহিলাদের যৌন ইচ্ছায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ ধরনের ক্লান্তি যৌন জীবনে অনীহা তৈরি করতে পারে।
৪. সম্পর্কগত সমস্যা
সম্পর্কে অসন্তুষ্টি, স্বামী বা সঙ্গীর সাথে মতবিরোধ, বা আবেগগত দূরত্ব যৌন আগ্রহে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাব, দ্বন্দ্ব, বা অতিরিক্ত প্রত্যাশা যৌন জীবনের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
৫. স্বাস্থ্যগত সমস্যা
ডায়াবেটিস, হাইপারথাইরয়েডিজম, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগের মতো বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা যৌন আগ্রহ কমাতে পারে। পাশাপাশি কিছু ওষুধ যেমন অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট, হাইপারটেনশনের ওষুধও যৌন ইচ্ছা হ্রাস করতে পারে।
৬. যৌন নির্যাতন বা ট্রমা
অতীতের কোনো যৌন নির্যাতন বা ট্রমার অভিজ্ঞতা থেকে যৌন ইচ্ছা কমে যেতে পারে। এতে মহিলারা যৌন মিলনে অনীহা অনুভব করেন এবং এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
সহবাসে অনিহার সমাধান
১. মানসিক চাপ কমানো
মেডিটেশন, যোগব্যায়াম বা মনকে শান্ত রাখার বিভিন্ন পদ্ধতি মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক। মানসিক প্রশান্তি যৌন আগ্রহ ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
২. হরমোনের চিকিৎসা
যদি হরমোনের ভারসাম্যহীনতা যৌন আগ্রহের হ্রাসের কারণ হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শে হরমোন থেরাপি বা ওষুধ গ্রহণ করতে পারেন। এটি হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক করে যৌন ইচ্ছা বাড়াতে সহায়ক হয়।
৩. সঙ্গীর সাথে খোলামেলা আলোচনা
যৌন সমস্যার সমাধানের অন্যতম উপায় হল সঙ্গীর সাথে খোলামেলা আলোচনা করা। সম্পর্কের মধ্যে সৎ ও খোলামেলা আলোচনা যৌন সম্পর্কের মান উন্নত করে এবং মানসিকভাবে কাছাকাছি আসতে সাহায্য করে।
৪. শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখা
প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস ও শারীরিক ব্যায়াম যৌন জীবনের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ব্যায়াম ক্লান্তি দূর করে এবং যৌন ইচ্ছা বাড়াতে সাহায্য করে।
৫. থেরাপি ও কাউন্সেলিং
যদি যৌন সমস্যা খুব জটিল হয়ে ওঠে, তাহলে সেক্স থেরাপিস্ট বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। থেরাপির মাধ্যমে মানসিক চাপ, ট্রমা বা সম্পর্কগত সমস্যা সমাধান সম্ভব হয়।
৬. সম্পর্কে সময় দেওয়া
সঙ্গীর সাথে আরও বেশি সময় কাটানোর মাধ্যমে মানসিক এবং শারীরিকভাবে সম্পর্ক উন্নত করা যায়। একে অপরের সাথে সময় কাটানো, একে অপরের কথা শোনা, এবং পরস্পরকে বোঝার চেষ্টা যৌন আগ্রহ ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
মহিলাদের যৌন সমস্যা একটি সাধারণ বিষয়, কিন্তু তা উপেক্ষা না করে গুরুত্ব সহকারে মোকাবিলা করা উচিত। মানসিক, শারীরিক এবং সম্পর্কগত দিক থেকে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে যৌন আগ্রহ ফিরিয়ে আনা সম্ভব। সঠিক চিকিৎসা, সঙ্গীর সাথে খোলামেলা আলোচনা, এবং মানসিক শান্তি বজায় রাখার মাধ্যমে মহিলারা এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।