শরীরে চুলকানি কেন হয়

শরীরে চুলকানি হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি অত্যন্ত বিরক্তিকর ও কষ্টদায়ক হতে পারে। চুলকানি বিভিন্ন কারণে হতে পারে এবং সঠিক চিকিৎসা না হলে তা আরও খারাপের দিকে যেতে পারে। চুলকানি সাধারণত ত্বকের কোনও সমস্যা, এলার্জি, বা অন্য কোনও স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে ঘটে থাকে। নিচে চুলকানির সম্ভাব্য কারণ এবং এর প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করা হলো।

চুলকানির কারণ:

১. শুষ্ক ত্বক:

শুষ্ক ত্বক চুলকানির অন্যতম কারণ। ত্বকের আর্দ্রতা কমে গেলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় এবং এর ফলে ত্বকে চুলকানি হয়। এটি সাধারণত শীতকালে বেশি দেখা যায়, যখন আবহাওয়া শুষ্ক হয়।

raju akon youtube channel subscribtion

২. এলার্জি:

কিছু খাবার, ওষুধ, পোশাক, বা প্রসাধনীতে এলার্জি থাকলে ত্বকে চুলকানি হতে পারে। এলার্জির প্রতিক্রিয়ার ফলে শরীরে র‍্যাশ বা লালচে দাগও দেখা দিতে পারে।

৩. একজিমা:

একজিমা একটি ত্বকের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা, যা ত্বকের শুষ্কতা, লালচে দাগ এবং প্রচণ্ড চুলকানি সৃষ্টি করে। এটি বিশেষ করে শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দেখা যায় এবং এর জন্য বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।

৪. ছত্রাক সংক্রমণ (ফাঙ্গাল ইনফেকশন):

ছত্রাক সংক্রমণের কারণে ত্বকে চুলকানি হতে পারে। এটি সাধারণত পায়ের আঙুল, পায়ের তলা, বা শরীরের ভাঁজে বেশি দেখা যায়। দাদ বা রিংওয়ার্ম এই ধরনের ছত্রাক সংক্রমণের অন্যতম উদাহরণ।

৫. কীটপতঙ্গের কামড়:

মশা, পিপড়া, বা অন্যান্য কীটপতঙ্গের কামড় শরীরে চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে। এটি সাধারণত কামড়ের স্থানে র‍্যাশের সৃষ্টি করে এবং চুলকানি বাড়িয়ে দেয়।

৬. মনোসন বা মানসিক চাপ:

মনোসন বা মানসিক চাপও শরীরে চুলকানির একটি কারণ হতে পারে। স্ট্রেস বা উদ্বেগের কারণে শরীরে হরমোনাল পরিবর্তন ঘটে এবং ত্বকে চুলকানির প্রবণতা বাড়ায়।

৭. কিডনি বা লিভারের রোগ:

কিডনি বা লিভারের সমস্যা থাকলে ত্বকে চুলকানি দেখা দিতে পারে। এ ধরনের চুলকানি সাধারণত শরীরের সব অংশে একসঙ্গে দেখা যায় এবং এর জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ প্রয়োজন।

৮. হরমোনের পরিবর্তন:

হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ত্বকের আর্দ্রতা কমে যেতে পারে এবং ফলে ত্বকে চুলকানি হয়। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় বা মেনোপজের সময় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে এ সমস্যা বেশি দেখা যায়।

চুলকানির প্রতিকার:

১. ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখা:

প্রতিদিন ত্বক আর্দ্র রাখার জন্য ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। বিশেষ করে গোসলের পর ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলে ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে চুলকানি কমে যায়।

২. সাবান ও প্রসাধনী নির্বাচন:

অতিরিক্ত রাসায়নিকযুক্ত সাবান, শ্যাম্পু বা প্রসাধনী ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত। মৃদু ও প্রাকৃতিক উপাদানসমৃদ্ধ প্রসাধনী ব্যবহার করলে চুলকানি কমে।

৩. শীতল পরিবেশে থাকা:

শরীরের তাপমাত্রা কম রাখতে শীতল পরিবেশে থাকা উচিত। তাপমাত্রা বেশি হলে চুলকানি বাড়তে পারে। এছাড়া শীতল পানিতে গোসল করলে চুলকানি কমে।

৪. এন্টি-হিস্টামিন ওষুধ:

এলার্জি বা অন্যান্য কারণে চুলকানি হলে ডাক্তারের পরামর্শে এন্টি-হিস্টামিন ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। এটি এলার্জির প্রতিক্রিয়া কমিয়ে ত্বকের চুলকানি কমায়।

৫. ছত্রাক সংক্রমণের জন্য ওষুধ:

ছত্রাক সংক্রমণ হলে বিশেষ অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম বা ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এ ধরনের ওষুধ ব্যবহার না করাই ভালো।

৬. পরিস্কার ও শুষ্ক পোশাক:

পরিস্কার ও শুষ্ক পোশাক পরা উচিত। ঘাম, ময়লা, এবং ধুলাবালি জমে থাকলে ত্বকে চুলকানি হতে পারে। তাই প্রতিদিন পোশাক পরিস্কার করে পরা উচিত।

৭. চুলকানো থেকে বিরত থাকা:

ত্বকে চুলকানি হলে চুলকানো থেকে বিরত থাকা উচিত। চুলকানোর ফলে ত্বকের সংক্রমণ বা আঘাতের সৃষ্টি হতে পারে, যা চুলকানিকে আরও বাড়িয়ে দেয়।

৮. ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া:

যদি চুলকানি দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং ঘরে বসে তা নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে ত্বকের বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়াও প্রয়োজন হতে পারে।

উপসংহার:

শরীরে চুলকানি একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এর কারণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। সঠিকভাবে চুলকানির কারণ নির্ণয় করে দ্রুত প্রতিকার গ্রহণ করলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

📌 ঠিকানা:

পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।

📞 ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬।

✎ রাজু আকন, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top