গর্ভাবস্থায় মহিলারা অনেক ধরনের শারীরিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যান, তার মধ্যে অন্যতম হলো পেট চুলকানো। এটি সাধারণত দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ত্রৈমাসিকের সময় ঘটে থাকে, যখন পেট ধীরে ধীরে বড় হতে শুরু করে। পেট চুলকানোর বিভিন্ন কারণ রয়েছে, যার বেশিরভাগই সাধারণ এবং অপ্রত্যাশিত নয়। তবে, কখনও কখনও এটি কোনও গুরুতর সমস্যার লক্ষণও হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় পেট চুলকানোর কারণ
১. ত্বক প্রসারণ:
গর্ভাবস্থার সময়, বাচ্চার বৃদ্ধি হওয়ার সাথে সাথে মায়ের পেটের ত্বক প্রসারিত হয়। এই ত্বক প্রসারণের ফলে পেটের চামড়া শুষ্ক এবং টানটান হয়ে যায়, যা চুলকানোর প্রধান কারণ হতে পারে।
২. হরমোনের পরিবর্তন:
গর্ভাবস্থার সময় শরীরে হরমোনের পরিবর্তন ঘটে, বিশেষ করে প্রোজেস্টেরন এবং এস্ট্রোজেনের মাত্রা বেড়ে যায়। এই হরমোনের পরিবর্তনের ফলে ত্বক শুষ্ক ও সংবেদনশীল হয়ে যেতে পারে, যা চুলকানোর কারণ হতে পারে।
৩. প্রেগন্যান্সি-রিলেটেড ডার্মাটোসিস:
গর্ভাবস্থার সময় কিছু মহিলাদের ক্ষেত্রে ত্বকের নির্দিষ্ট সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন প্রেগন্যান্সি র্যাশ (pruritic urticarial papules and plaques of pregnancy, PUPPP)। এটি চুলকানোর একধরনের লক্ষণ যা সাধারণত তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ঘটে থাকে।
৪. শুষ্ক ত্বক:
গর্ভাবস্থার সময় শুষ্ক ত্বক একটি সাধারণ সমস্যা। যখন ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, তখন পেট চুলকানোর প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে শীতকালে বা কম আর্দ্রতার সময় এটি বেশি অনুভূত হয়।
৫. ইনট্রাহেপাটিক কোলেস্টেসিস:
এটি একটি গুরুতর শারীরিক সমস্যা, যা গর্ভাবস্থার সময় লিভারের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার কারণে ঘটে। এতে গর্ভবতী মহিলার শরীরে পিত্ত জমতে শুরু করে, যা শরীরের বিভিন্ন অংশে চুলকানোর কারণ হয়ে দাঁড়ায়, বিশেষত পেটে।
গর্ভাবস্থায় পেট চুলকানোর প্রতিকার
১. ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার:
প্রতিদিন পেটের ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগালে ত্বক শুষ্কতা কমাতে এবং চুলকানো নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক হয়। এমন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত যা অ্যালোভেরা বা কোকো বাটার সমৃদ্ধ।
২. কোল্ড কম্প্রেস:
পেটের চুলকানো থেকে মুক্তি পেতে ঠান্ডা কাপড় বা ঠান্ডা পানিতে ভেজানো গজ দিয়ে পেটের ত্বকে চেপে ধরুন। এটি ত্বকের আরামবোধ এনে দেয় এবং চুলকানো কমায়।
৩. হালকা শাওয়ার জেল ব্যবহার:
সুগন্ধি-মুক্ত এবং মৃদু শাওয়ার জেল বা সাবান ব্যবহার করা উচিত, কারণ এগুলো ত্বককে শুষ্কতা থেকে রক্ষা করে এবং ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা বজায় রাখে।
৪. প্রচুর পানি পান:
গর্ভাবস্থার সময় পানি পান শরীরকে আর্দ্র রাখতে এবং ত্বকের শুষ্কতা কমাতে সহায়তা করে। এতে ত্বকের চুলকানোও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৫. ডাক্তারের পরামর্শ:
যদি পেটের চুলকানো অস্বাভাবিক হয় এবং ঘন ঘন হয়, তবে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে। বিশেষ করে যদি ইনট্রাহেপাটিক কোলেস্টেসিসের মতো লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
উপসংহার:
গর্ভাবস্থায় পেট চুলকানো সাধারণত ত্বকের প্রসারণ এবং হরমোন পরিবর্তনের কারণে ঘটে। তবে, অতিরিক্ত চুলকানো এবং অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত ত্বকের যত্ন এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস অনুসরণ করলে এই সমস্যাটি অনেকাংশে এড়ানো সম্ভব।
📌 ঠিকানা:
পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।