আচরণগত সমস্যা এবং সেন্সরি আচরণ গুলো কেন ঘটে?

আচরণগত সমস্যা (Behavioral Issues) এবং সেন্সরি আচরণ (Sensory Behavior) অটিজমসহ অন্যান্য নিউরোডেভেলপমেন্টাল সমস্যায় ভোগা শিশুদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সাধারণ একটি বিষয়। এই সমস্যাগুলো কেন ঘটে এবং কীভাবে এগুলো পরিচালনা করা যায়, তা বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আচরণগত সমস্যা কি?

আচরণগত সমস্যা এমন একটি অবস্থা যেখানে শিশু বা ব্যক্তির মধ্যে স্বাভাবিক আচরণের থেকে ভিন্ন কিছু লক্ষণ দেখা যায়। যেমন, অস্বাভাবিকভাবে চিৎকার করা, আগ্রাসী আচরণ, এক জায়গায় স্থির থাকতে না পারা, কিংবা কোনো কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করা। এই আচরণগুলো সাধারণত শিশুর দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে এবং তাদের সামাজিক ও শিক্ষাগত বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে।

সেন্সরি আচরণ কি?

সেন্সরি আচরণ বলতে বোঝায় শিশুর ইন্দ্রিয় সংক্রান্ত সমস্যার কারণে অস্বাভাবিক আচরণ প্রদর্শন করা। অটিজম আক্রান্ত শিশুরা প্রায়ই সেন্সরি প্রসেসিং ডিসঅর্ডার (SPD) এর শিকার হয়, যেখানে তারা আলোর মাত্রা, শব্দ, গন্ধ, স্পর্শ বা তাপমাত্রার প্রতি অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে ওঠে বা উল্টোভাবে এদের প্রতি উদাসীন থাকে।

raju akon youtube channel subscribtion

আচরণগত এবং সেন্সরি সমস্যার কারণগুলো:

  1. ইন্দ্রিয় সংবেদনশীলতা (Sensory Sensitivity): সেন্সরি সমস্যাগুলো সাধারণত অতিরিক্ত সংবেদনশীলতার কারণে ঘটে। কিছু শিশুরা অতিরিক্ত আলো, শব্দ বা স্পর্শের প্রতি অত্যন্ত প্রতিক্রিয়া দেখায়। আবার কিছু শিশু এমন তথ্য উপেক্ষা করে, যা স্বাভাবিকভাবে তাদের সংবেদনশীল হওয়া উচিত।
  2. যোগাযোগে সমস্যা (Communication Difficulties): অটিজম আক্রান্ত শিশুরা প্রায়ই ভাষাগত বা যোগাযোগে সমস্যা অনুভব করে। তারা তাদের চাহিদা বা সমস্যা প্রকাশ করতে না পারলে আচরণগত সমস্যার মাধ্যমে নিজেদের হতাশা বা অস্বস্তি প্রকাশ করে।
  3. রুটিনের প্রতি অস্বাভাবিক নির্ভরশীলতা: অটিজম শিশুদের মধ্যে নির্দিষ্ট রুটিন বা অভ্যাসের প্রতি অত্যাধিক নির্ভরশীলতা দেখা যায়। রুটিনে কোনো পরিবর্তন ঘটলে তাদের মধ্যে অস্থিরতা বা বিরক্তি সৃষ্টি হতে পারে, যা আচরণগত সমস্যায় রূপ নিতে পারে।
  4. সেন্সরি ওভারলোড (Sensory Overload): কিছু শিশু অতিরিক্ত ইন্দ্রিয়গত তথ্য গ্রহণে অক্ষম হয়, যেমন একসঙ্গে অনেক বেশি আলো, শব্দ বা স্পর্শের সংমিশ্রণ। এতে করে তাদের মস্তিষ্ক কার্যকরভাবে সেই তথ্যগুলো প্রক্রিয়াজাত করতে পারে না, ফলে তারা অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে।
  5. মানসিক চাপ বা উদ্বেগ (Stress or Anxiety): সামাজিক যোগাযোগে সমস্যা, শিক্ষার চাপ বা অন্যদের থেকে আলাদা মনে হওয়ার কারণে অটিজম আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়। এই চাপ অনেক সময় আচরণগত সমস্যার কারণ হতে পারে।

আচরণগত এবং সেন্সরি সমস্যার ব্যবস্থাপনা:

  1. সেন্সরি ইন্টিগ্রেশন থেরাপি (Sensory Integration Therapy): এই থেরাপি শিশুকে বিভিন্ন সেন্সরি ইনপুট সহ্য করতে শেখায় এবং তাদের ইন্দ্রিয় সংক্রান্ত প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  2. বিহেভিয়ারাল থেরাপি (Behavioral Therapy): ABA (Applied Behavior Analysis) এর মতো থেরাপি শিশুর আচরণগত সমস্যার সমাধান করতে কার্যকর। এতে কাঙ্খিত আচরণ গড়ে তোলার জন্য প্রণোদনা এবং নেতিবাচক আচরণ দূর করতে শাস্তি বা সীমাবদ্ধতার ব্যবস্থা করা হয়।
  3. রুটিন তৈরি: শিশুর জন্য একটি স্থিতিশীল এবং পূর্ব-পরিকল্পিত রুটিন তৈরি করে তাদের আচরণগত সমস্যা কমানো সম্ভব। নির্দিষ্ট রুটিনে কাজ করলে তাদের অস্থিরতা কমে এবং তারা স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে।
  4. ক্যালমিং টেকনিক (Calming Techniques): শিশুর মানসিক চাপ কমানোর জন্য বিভিন্ন শিথিলায়ন বা ক্যালমিং টেকনিক ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া, নরম সঙ্গীত শোনা বা প্রিয় খেলনা নিয়ে খেলা।
  5. পরিবেশের সামঞ্জস্যতা (Environmental Modification): শিশুর জন্য একটি শান্ত ও নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা জরুরি, যেখানে অতিরিক্ত আলো, শব্দ বা গন্ধের প্রভাব কমানো যায়।

উপসংহার:

আচরণগত এবং সেন্সরি সমস্যাগুলো অটিজম আক্রান্ত শিশুদের জন্য স্বাভাবিক বিষয় হলেও, সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। সেন্সরি ইন্টিগ্রেশন থেরাপি, বিহেভিয়ারাল থেরাপি এবং একটি সহায়ক পরিবেশ শিশুদের উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে। প্রতিটি শিশুর জন্য ব্যক্তিগতকৃত সমাধান খুঁজে বের করাই এই সমস্যার মূল চাবিকাঠি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top