জরায়ু ক্যান্সার কেন হয়: কারণ, ঝুঁকি এবং প্রতিরোধ

জরায়ু ক্যান্সার নারীদের মধ্যে এক সাধারণ কিন্তু গুরুতর রোগ, যা মূলত জরায়ুর কোষগুলোর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি থেকে সৃষ্টি হয়। এটি সাধারণত জরায়ুর মুখ বা এন্ডোমেট্রিয়ামে (জরায়ুর অভ্যন্তরীণ পর্দা) হয়। জরায়ু ক্যান্সার কেন হয় এবং কীভাবে এটি প্রতিরোধ করা যায়, এ বিষয়ে সচেতন হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজকের ব্লগে আমরা এর কারণ, ঝুঁকির কারণ এবং প্রতিরোধের উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

জরায়ু ক্যান্সারের কারণ

১. মানব প্যাপিলোমাভাইরাস (HPV) সংক্রমণ

  • HPV ভাইরাস হলো জরায়ু ক্যান্সারের প্রধান কারণ। এটি যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়ায়।
  • বিশেষত HPV-16 এবং HPV-18 টাইপের ভাইরাস এই রোগের জন্য অধিক দায়ী।

২. হরমোনজনিত অস্বাভাবিকতা

  • জরায়ুর কোষের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন হরমোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
  • দীর্ঘ সময় ইস্ট্রোজেন মাত্রা বেশি থাকলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

৩. অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন

  • ধূমপান, মদ্যপান, এবং ফাস্ট ফুড নির্ভর খাদ্যাভ্যাস জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

৪. পরিবারে ক্যান্সারের ইতিহাস

  • পরিবারে জরায়ু বা অন্য ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি বেড়ে যায়।

    raju akon youtube channel subscribtion

৫. অতিরিক্ত ওজন

  • স্থূলতা ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বাড়ায়, যা জরায়ু ক্যান্সারের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে।

৬. অনিয়মিত মাসিক চক্র

  • মাসিক চক্র অনিয়মিত হলে জরায়ুর কোষের বৃদ্ধি অস্বাভাবিক হতে পারে।

৭. দীর্ঘমেয়াদি জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলের ব্যবহার

  • দীর্ঘদিন জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল গ্রহণ করলে ইস্ট্রোজেন মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।

৮. প্রসব না হওয়া

  • যারা কখনো গর্ভধারণ করেননি, তাদের মধ্যে জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি।

৯. ডায়াবেটিস

  • ডায়াবেটিসের কারণে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, যা জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার কারণ

১. অল্প বয়সে যৌন সম্পর্ক স্থাপন

  • অল্প বয়সে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে HPV সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।

২. একাধিক যৌন সঙ্গী

  • একাধিক যৌন সঙ্গীর সাথে সম্পর্ক থাকলে HPV সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

৩. প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করা

  • নিয়মিত প্যাপ স্মিয়ার পরীক্ষা না করালে জরায়ু ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে না।

জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়

১. HPV ভ্যাকসিন গ্রহণ

  • HPV সংক্রমণ রোধে গার্ডাসিল বা সার্ভারিক্স নামের ভ্যাকসিন অত্যন্ত কার্যকর।

২. সুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক

  • কন্ডোম ব্যবহার করুন এবং একাধিক যৌন সঙ্গী এড়িয়ে চলুন।

৩. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা

  • প্রতি তিন বছর অন্তর প্যাপ স্মিয়ার পরীক্ষা এবং HPV টেস্ট করান।

৪. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন

  • ধূমপান এবং মদ্যপান এড়িয়ে চলুন।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন।

৫. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা

  • শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং স্থূলতা এড়িয়ে চলুন।

৬. হরমোনজনিত ওষুধের ব্যবহার সতর্কতার সাথে করুন

  • জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বা হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

৭. ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করুন

  • শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার খান।

জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ

প্রাথমিক পর্যায়ে জরায়ু ক্যান্সার কোনো লক্ষণ নাও দেখাতে পারে। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:

  • অনিয়মিত রক্তপাত (মাসিকের বাইরেও)।
  • সাদা স্রাবের মাত্রা বৃদ্ধি।
  • তলপেটে ব্যথা।
  • যৌনমিলনের সময় ব্যথা বা রক্তপাত।
  • ওজন হঠাৎ কমে যাওয়া।

এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

উপসংহার

জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগ। সঠিক সচেতনতা, সুরক্ষিত জীবনযাপন এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই নিজের এবং পরিবারের স্বাস্থ্য রক্ষায় সচেতন হোন এবং যেকোনো সন্দেহজনক লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top