ঠোঁট ও জিহ্বায় ঘা একটি সাধারণ কিন্তু অস্বস্তিকর সমস্যা। এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে, তবে সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে ভিটামিনের অভাব অন্যতম। বিশেষত, কিছু নির্দিষ্ট ভিটামিনের ঘাটতি ঠোঁট ও জিহ্বায় ঘা তৈরি করতে পারে। এই ব্লগে জানানো হবে কোন ভিটামিনের অভাবে এই সমস্যা দেখা দেয় এবং কীভাবে তা প্রতিকার করা যায়।
কোন ভিটামিনের অভাবে ঠোঁটে ও জিহ্বায় ঘা হয়:
১. ভিটামিন বি২ (রাইবোফ্লাভিন) এর অভাব:
ভিটামিন বি২-এর অভাবে মুখের কোণে এবং ঠোঁটে ফাটল বা ঘা হতে পারে। রাইবোফ্লাভিন শরীরে কোষের বৃদ্ধি ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। এর ঘাটতি হলে ঠোঁটের চামড়া শুষ্ক হয়ে যায় এবং ঘা তৈরি হয়।
২. ভিটামিন বি৩ (নায়াসিন) এর অভাব:
ভিটামিন বি৩-এর অভাবে জিহ্বায় লালচে ভাব এবং ক্ষত দেখা দিতে পারে। এটি শরীরের হজম শক্তি বাড়াতে এবং স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এর ঘাটতি হলে মুখের অভ্যন্তরে আলসার এবং অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৩. ভিটামিন বি৬ (পাইরিডক্সিন) এর অভাব:
ভিটামিন বি৬ এর অভাবে ঠোঁট ও মুখে ঘা হতে পারে। এটি শরীরের প্রোটিন হজম ও ব্যবহারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর অভাবে শরীরে প্রদাহ দেখা দিতে পারে এবং মুখের ভেতরে আলসার হতে পারে।
৪. ভিটামিন বি৯ (ফোলেট) এর অভাব:
ভিটামিন বি৯ বা ফোলেটের অভাবে জিহ্বা লাল ও ফোলা হয়ে যেতে পারে এবং এর ওপর ঘা দেখা দিতে পারে। ফোলেটের অভাব মুখের শুষ্কতা এবং ক্ষতের জন্য দায়ী হতে পারে।
৫. ভিটামিন বি১২ এর অভাব:
ভিটামিন বি১২ এর অভাবে মুখের ঘা, বিশেষ করে জিহ্বার ওপর ঘা হতে পারে। এটি স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা বজায় রাখতে এবং রক্তের লাল কণিকা উৎপাদনে সহায়ক। এর ঘাটতি হলে জিহ্বা লালচে এবং ফোলা হয়ে যায়।
ঠোঁট ও জিহ্বায় ঘা প্রতিরোধের উপায়:
১. সুষম খাদ্যগ্রহণ:
খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিম, মাছ, দুধ, ডাল, এবং সবুজ শাকসবজি অন্তর্ভুক্ত করুন। এগুলো ভিটামিন বি২, বি৩, বি৬, এবং বি১২-এর ঘাটতি পূরণে সহায়ক।
২. ভিটামিন সম্পূরক গ্রহণ:
যদি খাদ্যের মাধ্যমে পর্যাপ্ত ভিটামিন না পাওয়া যায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন বি কমপ্লেক্স সম্পূরক গ্রহণ করা যেতে পারে।
৩. পর্যাপ্ত পানি পান করুন:
শরীর হাইড্রেটেড রাখার জন্য প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত। পানির অভাবে মুখ শুষ্ক হয়ে গেলে ঘা হতে পারে।
৪. ওষুধ ব্যবহার:
যদি ঠোঁট বা জিহ্বার ঘা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং ব্যথা করে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিসেপটিক মলম ব্যবহার করতে পারেন।
৫. পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন:
মুখ এবং দাঁতের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ব্রাশ করুন এবং অ্যান্টিসেপটিক মাউথওয়াশ ব্যবহার করুন, যা মুখের ব্যাকটেরিয়া কমাতে সাহায্য করে।
চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন কবে:
- যদি ঘা দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে থাকে।
- যদি ঘা থেকে রক্তপাত হয় বা ব্যথা বেশি হয়।
- যদি কোনো ওষুধে কাজ না করে এবং ঘা আরও খারাপ হয়।
ভিটামিন বি-এর অভাব ঠোঁট ও জিহ্বায় ঘা হওয়ার অন্যতম কারণ। সঠিক পুষ্টিকর খাবার এবং প্রয়োজনীয় ভিটামিন সম্পূরক গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। তবে সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে এবং ঘা তীব্র হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
📌 ঠিকানা:
পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।