ডেঙ্গু রোগীকে কখন হাসপাতালে নেবেন: লক্ষণ ও করণীয়

ডেঙ্গু একটি মারাত্মক ভাইরাসজনিত রোগ যা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। ডেঙ্গুর প্রাথমিক লক্ষণগুলো সাধারণত মৃদু হতে পারে, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা গুরুতর হয়ে যেতে পারে। তাই ডেঙ্গুর লক্ষণগুলোর প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা এবং রোগীর অবস্থা খারাপ হলে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

ডেঙ্গুর প্রাথমিক লক্ষণসমূহ:

ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার ৪ থেকে ১০ দিনের মধ্যে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে:

  • তীব্র জ্বর (১০৪°F বা তার বেশি)
  • তীব্র মাথাব্যথা
  • চোখের পেছনে ব্যথা
  • মাংসপেশী ও জয়েন্টে ব্যথা
  • বমি বমি ভাব ও বমি
  • শরীরে লালচে দাগ বা র‍্যাশ
  • ক্লান্তি ও দুর্বলতা

প্রাথমিক পর্যায়ে এসব লক্ষণগুলো স্বাভাবিক মনে হতে পারে, তবে রোগীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হলে হাসপাতালে নেওয়ার সময় সঠিকভাবে নির্ধারণ করা গুরুত্বপূর্ণ।

raju akon youtube channel subscribtion

কখন ডেঙ্গু রোগীকে হাসপাতালে নেবেন:

১. দ্রুত প্লাটিলেট কমে গেলে:

ডেঙ্গু জ্বরের সবচেয়ে গুরুতর দিক হলো রক্তের প্লাটিলেট দ্রুত হ্রাস পাওয়া। স্বাভাবিক মানুষের রক্তে ১.৫ থেকে ৪ লক্ষ প্লাটিলেট থাকা উচিত। যদি প্লাটিলেটের সংখ্যা দ্রুত কমে যায় এবং ১ লক্ষের নিচে নেমে যায়, তবে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

২. শরীরে তীব্র ব্যথা ও রক্তক্ষরণ হলে:

ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার (DHF) হলে রোগীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তক্ষরণ হতে পারে। যেমন, মাড়ি, নাক, চামড়ার নিচে রক্তক্ষরণ, রক্ত বমি, মলদ্বার দিয়ে রক্তপাত ইত্যাদি। এসব লক্ষণ দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা প্রয়োজন এবং রোগীকে হাসপাতালে নেওয়া জরুরি।

৩. শরীরে পানি জমে গেলে:

ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের কারণে শরীরে পানি জমতে পারে, যা খুবই বিপজ্জনক। পেট ফুলে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট হওয়া, বুকে বা পেটে পানি জমার লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে হাসপাতালের চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

4. অতিরিক্ত দুর্বলতা ও পানিশূন্যতা হলে:

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর শরীর দুর্বল হয়ে পড়া সাধারণ বিষয়, তবে অতিরিক্ত দুর্বলতা, বারবার বমি হওয়া, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া বা তীব্র পিপাসা অনুভূত হলে এটি পানিশূন্যতার লক্ষণ হতে পারে। এসব পরিস্থিতিতে রোগীকে হাসপাতালে নেওয়া উচিত যাতে সঠিক চিকিৎসা এবং শরীরে তরলের ভারসাম্য বজায় রাখা যায়।

৫. তীব্র পেটব্যথা ও বমি হলে:

যদি ডেঙ্গু রোগীর তীব্র পেটব্যথা হয় এবং বারবার বমি হতে থাকে, তবে এটি গুরুতর অবস্থার লক্ষণ হতে পারে। ডেঙ্গু শক সিনড্রোম বা অন্যান্য জটিলতার জন্য এই লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে, তাই দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

৬. তীব্র শ্বাসকষ্ট হলে:

রোগীর যদি শ্বাস নিতে অসুবিধা হয় বা তীব্র শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, তবে তাৎক্ষণিকভাবে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। শ্বাসকষ্ট গুরুতর প্লাজমা লিকেজের লক্ষণ হতে পারে, যা ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের কারণে হতে পারে।

৭. মানসিক অস্বাভাবিকতা:

কিছু ডেঙ্গু রোগীর ক্ষেত্রে মানসিক অস্থিরতা বা অস্বাভাবিক আচরণ দেখা দিতে পারে। রোগী বিভ্রান্ত হতে পারে বা অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। এসব গুরুতর লক্ষণ দেখে সাথে সাথে হাসপাতালে নেওয়া প্রয়োজন।

ডেঙ্গু রোগীর সঠিক যত্ন:

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং তরল খাবার দিতে হবে। রোগীকে ডাবের পানি, ওআরএস, স্যুপ, ফলের রস ইত্যাদি খাওয়ানো জরুরি। তবে পেপারমেন্ট বা এসপিরিন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না, কারণ এসব ওষুধ রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।

ডেঙ্গুর জটিলতা এড়াতে করণীয়:

ডেঙ্গুর শুরুতেই যদি সঠিক যত্ন এবং পর্যবেক্ষণ করা হয়, তবে রোগীর অবস্থা জটিল আকার ধারণ করার সম্ভাবনা কম থাকে। প্রাথমিক পর্যায়ে জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল দেওয়া যেতে পারে এবং পর্যাপ্ত তরল গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তবে রোগীর অবস্থা খারাপ হলে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হবে সবচেয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা।

উপসংহার:

ডেঙ্গু রোগীকে হাসপাতালে কখন নিতে হবে তা বুঝতে পারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্লাটিলেট কমে যাওয়া, রক্তক্ষরণ, শ্বাসকষ্ট, তীব্র পেটব্যথা ইত্যাদি গুরুতর লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। ডেঙ্গুর জটিলতা এড়াতে এবং রোগীর সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সময়মতো হাসপাতালের সেবা গ্রহণ করা অত্যন্ত প্রয়োজন।

ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top