শিশুর প্রথম ৬ মাস শুধুমাত্র মায়ের দুধই তার প্রধান খাদ্য। কিন্তু ৬ মাস পর থেকে বাচ্চার শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য পরিপূরক খাদ্য প্রয়োজন হয়ে পড়ে। ৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে বাচ্চার পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য ধীরে ধীরে বিভিন্ন ধরনের খাবার যোগ করা হয়। এই সময়ে সঠিক খাবার নির্বাচন বাচ্চার স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৬ মাস থেকে ৮ মাস বয়সী বাচ্চার খাবার তালিকা
১. মায়ের দুধ বা ফর্মুলা দুধ
৬ মাস থেকে ৮ মাস বয়সী বাচ্চার প্রধান খাদ্য মায়ের দুধ বা ফর্মুলা দুধ হওয়া উচিত। তবে, এর সাথে পরিপূরক খাদ্য যোগ করা প্রয়োজন।
২. চালের গুঁড়ি বা সেরেলাক
এই সময়ে চালের গুঁড়ি বা সেরেলাক বাচ্চার প্রথম কঠিন খাবার হিসেবে দেওয়া যেতে পারে। এটি হালকা, সহজে হজমযোগ্য এবং শিশুর জন্য নিরাপদ।
৩. ফলের পিউরি
বাচ্চাকে আপেল, কলা, পেঁপে, এবং নাশপাতির মতো ফলের পিউরি খাওয়াতে পারেন। ফলের পিউরিতে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ থাকে যা বাচ্চার স্বাস্থ্য ও ত্বকের জন্য ভালো।
৪. সবজি পিউরি
গাজর, মিষ্টি আলু, কুমড়া, এবং মটরশুঁটির মতো সবজির পিউরি বাচ্চার জন্য পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য। সবজি পিউরিতে উচ্চমানের ফাইবার ও ভিটামিন রয়েছে, যা শিশুর হজম শক্তি ও ইমিউন সিস্টেম উন্নত করে।
৫. ডাল ও চালের মিশ্রণ
মসুর ডাল ও ভাত মিশিয়ে খিচুড়ি করে বাচ্চাকে খাওয়ানো যেতে পারে। এটি সহজপাচ্য এবং প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেটের ভালো উৎস।
৬. ছোট মাছের পিউরি
কাঁচকি মাছ বা ছোট মাছের পিউরি শিশুকে খাওয়াতে পারেন, যা প্রোটিন ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ।
৮ মাস থেকে ১ বছর বয়সী বাচ্চার খাবার তালিকা
১. মায়ের দুধ বা ফর্মুলা দুধ
এ সময়ও মায়ের দুধ বা ফর্মুলা দুধ গুরুত্বপূর্ণ থাকে। বাচ্চার বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য এটি অপরিহার্য।
২. মাশ করা খাবার
এই সময়ে চাল, ডাল, আলু, এবং অন্যান্য সবজির মিশ্রণে খিচুড়ি বা মাশ করা খাবার দিতে পারেন। এতে বাচ্চা নতুন খাবারের স্বাদ পায় এবং পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়।
৩. ছোট ছোট টুকরো ফল
৮ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে বাচ্চাকে ছোট ছোট টুকরো করে আপেল, কলা, পেঁপে, নাশপাতি, এবং আঙুরের মতো ফল খাওয়াতে পারেন। তবে, ফলগুলি নরম ও ছোট টুকরো করে দিতে হবে যাতে বাচ্চা সহজে চিবাতে পারে।
৪. দই
দই বাচ্চার হজমের জন্য ভালো। বাচ্চাকে প্লেইন দই বা মিষ্টি দই খাওয়াতে পারেন। এটি ক্যালসিয়াম ও প্রোবায়োটিকসের ভালো উৎস।
৫. ডিমের কুসুম
বাচ্চাকে ডিমের কুসুম খাওয়ানো শুরু করতে পারেন। এটি প্রোটিন, আয়রন এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ, যা শিশুর বৃদ্ধিতে সহায়ক।
৬. মাংস ও মাছ
এই সময় থেকে মুরগির মাংস ও মাছ বাচ্চার ডায়েটে যোগ করতে পারেন। এগুলো প্রোটিন ও আয়রনের চমৎকার উৎস, যা শিশুর শারীরিক বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয়।
৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে বাচ্চার জন্য সঠিক খাবার নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে ধীরে ধীরে নতুন নতুন খাবার যোগ করুন এবং বাচ্চার প্রতিক্রিয়া দেখুন। যদি কোনো খাবারের প্রতি অ্যালার্জি বা প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তবে সেটি খাওয়ানো বন্ধ করে দিন এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। সঠিক পুষ্টি বাচ্চার শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়ক।