রমজান মাসে দীর্ঘ সময় রোজা রাখার কারণে শরীরের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। এই সময় সঠিক খাবার নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি আপনার শরীরকে সারা দিন সুস্থ, শক্তিশালী এবং হাইড্রেটেড রাখবে। সেহরি এবং ইফতারের সময় সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করলে আপনি সহজেই রোজার দিনগুলো সুস্থভাবে কাটাতে পারবেন। আসুন জেনে নিই রমজানে কী খাবেন এবং কী খাবেন না।
রমজানে কী খাবেন:
১. পানীয়: পর্যাপ্ত পানি এবং তরলজাতীয় খাবার
- রমজানে শরীর হাইড্রেটেড রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেহরি ও ইফতারে পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত।
- পানির পাশাপাশি ফলের রস, লাবাং, স্যুপ, ডাবের পানি এবং হারবাল চা পান করা যেতে পারে।
- সেহরি ও ইফতারে স্যুপ খাওয়া ভালো, এটি শরীরের জলীয় চাহিদা পূরণ করে।
২. প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার
- ডিম, মাছ, মুরগির মাংস, ছোলা, ডাল, দুধ, দই ইত্যাদি প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খান। প্রোটিন দীর্ঘক্ষণ শক্তি জোগায় এবং ক্ষুধা কমায়।
- ইফতারে ছোলা, ডাল এবং দই খাওয়া অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। এগুলো শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।
৩. কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার
- সেহরিতে উচ্চ ফাইবার ও কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার খেলে সারাদিন পেট ভরা থাকে। যেমন: লাল চালের ভাত, ওটস, চিড়া, গমের রুটি ইত্যাদি।
- ইফতারে খেজুর অত্যন্ত উপকারী, কারণ এটি দ্রুত শরীরে শক্তি যোগায় এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।
৪. তাজা ফল ও সবজি
- ইফতারে তাজা ফল ও সবজি খেলে শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেল সরবরাহ হয়। ফলমূল, শাকসবজি এবং সালাদ খেলে শরীর দ্রুত পুনরুদ্ধার হয়।
- তরমুজ, বেল, শসা ইত্যাদি খেলে শরীর হাইড্রেটেড থাকে।
রমজানে কী খাবেন না:
১. অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত ও ভাজা খাবার
- ইফতারে অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাবার যেমন সমুচা, পুরি, পাকোড়া, চপ, আলুর চপ ইত্যাদি পরিহার করুন। এটি হজমের সমস্যা তৈরি করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যগত ক্ষতি করতে পারে।
- অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার খেলে শরীরে ক্যালোরি এবং চর্বির পরিমাণ বেড়ে যায়, যা ওজন বৃদ্ধি এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যা তৈরি করতে পারে।
২. অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার
- ইফতারে অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার যেমন জিলাপি, মিষ্টি, কেক, পুডিং ইত্যাদি পরিহার করুন। এসব খাবার দ্রুত রক্তে শর্করা বাড়ায় এবং হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- পরিবর্তে, প্রাকৃতিক মিষ্টিজাতীয় ফল যেমন খেজুর, আপেল, কলা ইত্যাদি খাওয়া ভালো।
৩. প্রসেসড ও প্যাকেটজাত খাবার
- প্রসেসড ফুড যেমন চিপস, প্যাকেটজাত জুস, নুডলস ইত্যাদি খাওয়া এড়িয়ে চলুন। এসব খাবারে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান কম থাকে এবং এতে থাকা অতিরিক্ত লবণ ও চিনি শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
- প্রাকৃতিক এবং ঘরে তৈরি খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
৪. ক্যাফেইন জাতীয় পানীয়
- রমজানে কফি, চা এবং সফট ড্রিঙ্কসের পরিমাণ কমানো উচিত। ক্যাফেইন শরীর থেকে পানি বের করে দেয়, যা শরীরকে ডিহাইড্রেট করতে পারে।
উপসংহার
রমজানে সঠিকভাবে খাবার নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি সারাদিন রোজা রাখার জন্য শরীরকে প্রস্তুত করে। পানি, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার খেলে আপনি সুস্থ ও শক্তিশালী থাকবেন। পাশাপাশি অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত, মিষ্টি এবং প্রসেসড খাবার এড়িয়ে চলা উচিত, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে আপনি রমজানে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে পারবেন।
ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.