গর্ভাবস্থায় পানি কমে গেলে করণীয়: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

গর্ভাবস্থায় শরীরের পর্যাপ্ত পানি থাকা মা ও সন্তানের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি গর্ভের ভেতরে থাকা অ্যামনিওটিক ফ্লুইড বা পানি কমে যায়, তবে তা মা এবং সন্তানের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এই অবস্থাকে চিকিৎসা পরিভাষায় অলিগোহাইড্র্যামনিওস বলা হয়। আজকের ব্লগে আমরা গর্ভাবস্থায় পানি কমে যাওয়ার কারণ, লক্ষণ, এবং এর প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

গর্ভাবস্থায় পানি কমে যাওয়ার কারণ

১. গর্ভকালীন সময়ের অগ্রগতি

গর্ভাবস্থার শেষ দিকে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড কিছুটা কমে যেতে পারে, যা স্বাভাবিক। তবে অতিরিক্ত কমে গেলে তা সমস্যার কারণ হতে পারে।

২. পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন)

মা যদি পর্যাপ্ত পানি পান না করেন, তবে শরীরে পানির ঘাটতি হতে পারে, যা অ্যামনিওটিক ফ্লুইড কমিয়ে দেয়।

৩. প্লাসেন্টার কার্যকারিতা হ্রাস

প্লাসেন্টা সঠিকভাবে কাজ না করলে শিশুর কাছে পর্যাপ্ত পুষ্টি এবং অক্সিজেন পৌঁছায় না, যা পানির পরিমাণ কমাতে পারে।

৪. প্রসবজনিত সমস্যা

যদি গর্ভের পানি ফেটে যায় বা লিক হতে থাকে, তবে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড কমে যেতে পারে।

৫. শিশুর কিডনির সমস্যা

গর্ভের শিশুর কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করলে প্রস্রাবের মাধ্যমে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড উৎপাদন কমে যায়।

গর্ভাবস্থায় পানি কমে যাওয়ার লক্ষণ

  • পেটের আকার স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট মনে হওয়া।
  • শিশুর নড়াচড়া কম অনুভব করা।
  • যোনি থেকে পানির মতো তরল বের হওয়া।
  • আল্ট্রাসাউন্ডে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড ইনডেক্স (AFI) কম পাওয়া।

    raju akon youtube channel subscribtion

গর্ভাবস্থায় পানি কমে গেলে করণীয়

১. পর্যাপ্ত পানি পান করুন

গর্ভাবস্থায় দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।

  • নারকেলের পানি, ফলের রস, এবং স্যুপ পান করলে পানিশূন্যতা কমে।
২. বিশ্রাম নিন

বেশি পরিশ্রম না করে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।

  • বাম দিকে শুয়ে থাকলে প্লাসেন্টায় রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়।
৩. ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ নিন
  • ডাক্তার অ্যামনিওটিক ফ্লুইড বাড়ানোর জন্য কিছু ওষুধ বা ইনজেকশন দিতে পারেন।
  • স্যালাইন দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
৪. পর্যবেক্ষণে থাকুন
  • নিয়মিত আল্ট্রাসাউন্ড এবং ডাক্তারের চেকআপ করান।
  • অ্যামনিওটিক ফ্লুইড ইনডেক্স (AFI) পর্যবেক্ষণ করুন।
৫. স্বাস্থ্যকর খাবার খান
  • পানির পরিমাণ বাড়াতে এমন খাবার খান, যেগুলোতে জলীয় অংশ বেশি, যেমন তরমুজ, শসা, কমলা।
  • প্রোটিন এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন।
৬. প্রসবের সময় সঠিক সিদ্ধান্ত

যদি গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ে পানি বেশি কমে যায়, তবে ডাক্তার প্রসব করানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় পানি কমে যাওয়া প্রতিরোধে করণীয়

১. পর্যাপ্ত পানি পান করুন

প্রতিদিন সঠিক পরিমাণে পানি পান করুন।

২. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা

ডাক্তারের নিয়মিত চেকআপে থাকুন এবং আল্ট্রাসাউন্ড করান।

৩. যোনি থেকে পানি বের হলে সতর্ক হোন

যদি যোনি থেকে কোনো তরল বের হতে থাকে, তবে দ্রুত ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

৪. মানসিক চাপ কমান

মানসিক চাপ কমাতে যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন করুন।

৫. সুষম খাবার খান

গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাবার খেলে শরীরের পানির ভারসাম্য ঠিক থাকে।

চিকিৎসকের পরামর্শ কখন নেবেন?

  • যদি শিশুর নড়াচড়া কম অনুভব হয়।
  • যদি পেটের আকার স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট মনে হয়।
  • যদি যোনি থেকে পানি বা রক্তপাত হয়।
  • যদি আল্ট্রাসাউন্ডে পানি কম ধরা পড়ে।

উপসংহার

গর্ভাবস্থায় পানি কমে যাওয়া মা এবং সন্তানের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই এই অবস্থায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় সঠিক যত্ন নিন এবং নিয়মিত চেকআপ করান।

আপনার অভিজ্ঞতা বা প্রশ্ন জানাতে মন্তব্য করুন এবং পোস্টটি শেয়ার করে অন্যদের সচেতন করুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *