কানপাকা বা মধ্যকর্ণ প্রদাহ শিশুদের মধ্যে একটি সাধারণ রোগ। এটি সাধারণত ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। কানে পুঁজ জমে কান থেকে নিঃসরণ হতে পারে, যা কানপাকা নামে পরিচিত। এই সমস্যার ফলে শিশুর কান ব্যথা, জ্বর, এবং শ্রবণ ক্ষমতা কমে যেতে পারে। তাই এটি দ্রুত শনাক্ত করা এবং সমাধান করা জরুরি।
কানপাকা রোগের কারণসমূহ:
১. ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ: সাধারণত ব্যাকটেরিয়া মধ্যকর্ণে সংক্রমণ ঘটায়, যা কানপাকার মূল কারণ। ঠান্ডা বা সর্দি-কাশি থেকে এই সংক্রমণ হতে পারে।
২. ভাইরাল সংক্রমণ: কিছু ভাইরাসও কানপাকার সৃষ্টি করতে পারে। ফ্লু বা সাধারণ সর্দি-কাশির পর শিশুদের মধ্যে কানপাকার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৩. এলার্জি: শ্বাসনালীতে অ্যালার্জি বা সর্দি-কাশির কারণে কানপাকা হতে পারে।
৪. খুব বেশি সর্দি জমা হওয়া: শিশুদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল থাকায় তাদের মধ্যে সর্দি-কাশি বেশি হয়, যা কানপাকার প্রধান কারণ হতে পারে।
কানপাকা রোগের লক্ষণসমূহ:
- কানে ব্যথা হওয়া
- কানে পুঁজ বের হওয়া
- জ্বর
- কান চুলকানো বা কান স্পর্শ করলে ব্যথা পাওয়া
- শ্রবণ ক্ষমতা কমে যাওয়া
- ঘুমের সমস্যা
- কান খিচুনি বা তীব্র অস্বস্তি
কানপাকা রোগের প্রতিকার ও করণীয়:
১. চিকিৎসকের পরামর্শ: কানপাকা হলে প্রথমে শিশুদের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া জরুরি। চিকিৎসক কান পরীক্ষা করে সঠিক ওষুধ দিতে পারেন। এন্টিবায়োটিক ওষুধ দিয়ে ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ নিরাময় করা সম্ভব।
২. ব্যথা নিয়ন্ত্রণ: শিশুর কানে ব্যথা হলে প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেনের মতো ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন। তবে ওষুধ দেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৩. কান পরিষ্কার রাখা: শিশুর কানে পুঁজ জমলে তা পরিষ্কার করা উচিত। তবে নিজে কোনোভাবে কানের ভেতর ঢোকানোর চেষ্টা করবেন না, বরং ডাক্তারের সাহায্য নিন।
৪. উষ্ণ সেঁক দেওয়া: শিশুর কানে উষ্ণ কাপড়ের সেঁক দেওয়া যেতে পারে। এটি কানের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে এবং শিশু আরাম পেতে পারে।
৫. শ্বাস-প্রশ্বাস সহজ করা: যদি সর্দি-কাশির কারণে কানপাকা হয়, তবে শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাস সহজ করতে গরম পানির বাষ্প নেওয়া বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী নাসাল ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে।
৬. পানি থেকে দূরে রাখা: শিশুর কানে পানি প্রবেশ করলে কানপাকার সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে। তাই শিশুদের স্নানের সময় কানে পানি ঢোকা থেকে রক্ষা করা উচিত।
কানপাকা রোগ প্রতিরোধের উপায়:
- শিশুর ঠান্ডা বা সর্দি-কাশি নিয়ন্ত্রণ: সর্দি-কাশির চিকিৎসা দ্রুত করা উচিত, যাতে কানে সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে।
- সঠিক টিকা দেওয়া: কিছু নির্দিষ্ট টিকা যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা এবং নিউমোকোকাল টিকা কানের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
- সঠিক খাওয়ানোর পদ্ধতি: শিশুকে ফিডারের পরিবর্তে মায়ের দুধ খাওয়ানো উচিত। ফিডার ব্যবহারে শিশুর কানে দুধ বা তরল জমতে পারে, যা সংক্রমণ ঘটায়।
- অ্যালার্জি প্রতিরোধ: যদি শিশুর মধ্যে অ্যালার্জির সমস্যা থাকে, তবে এর প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
শিশুর কানপাকা রোগ সময়মতো শনাক্ত করা এবং দ্রুত চিকিৎসা করা অত্যন্ত জরুরি। প্রাথমিক অবস্থায় রোগের উপসর্গ বুঝতে পারলে এবং দ্রুত চিকিৎসা নিলে কানপাকা সমস্যা পুরোপুরি সারিয়ে তোলা সম্ভব। শিশুর কানের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে পরিচ্ছন্নতা ও সঠিক পদ্ধতিতে যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.