কানের পর্দা ফুটো হওয়া (Tympanic Membrane Perforation) সাধারণত একটি শারীরিক সমস্যা যা দুর্ঘটনা, ইনফেকশন বা অন্যান্য কারণে হতে পারে। কানের পর্দা বা টিম্প্যানিক মেমব্রেন কানের একটি পাতলা স্তর যা মধ্যকর্ণ ও বাহ্যিক কর্ণের মধ্যে অবস্থান করে। এটি কানের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং আমাদের শ্রবণশক্তি বজায় রাখতে সহায়তা করে। কানের পর্দা ফুটো হলে কান থেকে রক্তপাত, বধিরতা, এবং অন্যান্য সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
এখানে কানের পর্দা ফুটো হলে করণীয় এবং চিকিৎসার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হলো:
কানের পর্দা ফুটো হওয়ার কারণ
কানের পর্দা ফুটো হওয়ার একাধিক কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হলো:
- ইনফেকশন (Infection): কানে ইনফেকশন হলে, বিশেষ করে মধ্যকর্ণে, কানের পর্দায় চাপ সৃষ্টি করে যা ফুটো হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়।
- শারীরিক আঘাত (Physical Injury): কান পরিষ্কার করার সময় কটনবাড বা অন্যান্য তীক্ষ্ণ বস্তু কানের পর্দায় আঘাত করলে তা ফুটো হয়ে যেতে পারে।
- চাপের পরিবর্তন (Barotrauma): উচ্চ পর্বত, গভীর সমুদ্র ডাইভিং বা বিমানে ওঠানামার সময় চাপের আকস্মিক পরিবর্তন কানের পর্দা ফুটো করতে পারে।
- বিস্ফোরণ বা উচ্চ শব্দ (Loud Noise or Explosion): আকস্মিকভাবে উচ্চ শব্দ বা বিস্ফোরণের ফলে কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে।
- চোট (Trauma): মাথায় আঘাত পেলে কানের পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
কানের পর্দা ফুটো হওয়ার লক্ষণ
কানের পর্দা ফুটো হলে যে লক্ষণগুলো দেখা দেয় তা নিম্নরূপ:
- কানে তীব্র ব্যথা: পর্দা ফুটো হলে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। এই ব্যথা কিছু সময় পরে কমে আসতে পারে।
- শ্রবণশক্তি কমে যাওয়া: কানের পর্দা ফুটো হলে স্বাভাবিকভাবে শুনতে সমস্যা হতে পারে বা সাময়িকভাবে শুনতে না পাওয়া।
- কান থেকে তরল বের হওয়া: কানের পর্দা ফুটো হলে কানের ভিতর থেকে রক্ত বা পুঁজের মতো তরল বের হতে পারে।
- কানে আওয়াজ শোনা (Tinnitus): কানে ফোঁস ফোঁস আওয়াজ বা রিংয়ের মতো শব্দ শোনা যেতে পারে।
- ঘুর্ণি লাগা (Vertigo): ভারসাম্যহীনতা, মাথা ঘোরা এবং বমির প্রবণতা হতে পারে।
কানের পর্দা ফুটো হলে করণীয়
১. ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া:
কানের পর্দা ফুটো হলে যত দ্রুত সম্ভব একজন ইএনটি (ইয়ার, নোজ অ্যান্ড থ্রোট) বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ডাক্তার কানের পরীক্ষা করে সঠিক চিকিৎসার পরামর্শ দিবেন।
২. কানে পানি ঢোকা থেকে বিরত থাকা:
কানের পর্দা ফুটো হলে কানকে শুকনো রাখার চেষ্টা করতে হবে। কান পরিষ্কার করার সময় বা গোসলের সময় কানে পানি ঢোকা থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ পানি ঢুকলে ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ে।
৩. প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন:
ডাক্তার যদি ইনফেকশন শনাক্ত করেন, তাহলে এন্টিবায়োটিক দেওয়া হতে পারে। এছাড়াও ব্যথা কমানোর জন্য ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করা যেতে পারে।
৪. সার্জারির প্রয়োজন হলে:
যদি কানের পর্দার ফুটো বড় হয় বা স্বাভাবিকভাবে ঠিক না হয়, তাহলে ডাক্তার টিম্প্যানোপ্লাস্টি নামক একটি সার্জারি প্রক্রিয়ার পরামর্শ দিতে পারেন, যা কানের পর্দা পুনরায় মেরামত করতে সহায়ক।
৫. শ্রবণ পরীক্ষা:
কানের পর্দা ফুটো হওয়ার কারণে শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হলে, শ্রবণ পরীক্ষা করে চিকিৎসক সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারবেন।
কানের পর্দা ফুটো থেকে বাঁচার উপায়
- কানে কিছু ঢোকানো থেকে বিরত থাকা: কটনবাড, তীক্ষ্ণ বস্তু, বা কোনো অজানা পদার্থ কানে প্রবেশ করানো উচিত নয়।
- জোরে শব্দ বা বিস্ফোরণ থেকে দূরে থাকা: অত্যন্ত জোরে শব্দে বা বিস্ফোরণের আশেপাশে থাকা থেকে বিরত থাকা উচিত।
- শক্তি প্রয়োগ না করা: সর্দি বা ইনফেকশনের সময় নাক-মুখে অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
- উচ্চতা পরিবর্তনের সময় সচেতন থাকা: উচ্চতায় যাতায়াতের সময় চাপের পরিবর্তন এড়াতে সময়মতো সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, যেমন চুইংগাম চিবানো বা ঢোক গেলা।
কানের পর্দা ফুটো হওয়া একটি অস্বস্তিকর ও বেদনাদায়ক পরিস্থিতি, তবে প্রাথমিক পদক্ষেপ ও চিকিৎসার মাধ্যমে এটি নিরাময় করা সম্ভব। সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করলে শ্রবণশক্তি পুনরুদ্ধার হয় এবং দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা এড়ানো যায়। তাই কোনো ধরনের কানের সমস্যা হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
📌 ঠিকানা:
পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।